মাছুম বিল্লাহ: বাংলাদেশের প্রতিবেশি ভারতের মেঘালয় এবং মিয়ানমার সীমান্তবর্তী নাগাল্যান্ড রাজ্যে শেষ হল বিধানসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ।
মঙ্গলবার সকাল ৭টা থেকে শুরু হয়ে ভোট গ্রহণ চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। তবে নাগাল্যান্ডের কয়েকটি জেলার কিছু ভোটকেন্দ্র দুর্গম এলাকায় হওয়ায় এবং নিরাপত্তার কারণে ভোট গ্রহণ চলে বিকেল ৩টা পর্যন্ত।
এদিকে নাগা উপজাতি অধ্যুষিত নাগাল্যান্ডের সকালে ভোট গ্রহণ শুরু হতে না হতেই একটি ভোট কেন্দ্রে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন একজন।
মেঘালয় ও নাগাল্যান্ডে মোট ৬০টি করে বিধানসভা কেন্দ্র থাকলেও এদিন দুই রাজ্যেই ভোট গ্রহণ হয়েছে ৫৯টি কেন্দ্রে। মেঘালয়ের উইলিয়ামনগর কেন্দ্রে সম্প্রতি আইডি বিস্ফোরণে ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির (এনসিপি) প্রার্থী জনাথন এন সঙ্গম নিহত হন। এ কারণে মেঘালয়ের ওই কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত রাখা হয়েছে।
অন্যদিকে, নাগাল্যান্ডের নর্দার্ন অঙ্গমি-২ কেন্দ্রে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্রেটিক প্রগেসিভ পার্টির (এনডিপিপি) প্রধান নেইফিউ রিউ। তাই ওই কেন্দ্রেও ভোট গ্রহণ হচ্ছে না।
এর আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ত্রিপুরা বিধানসভা কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ হয়েছে। মেঘালয়, নাগাল্যান্ড ও ত্রিপুরা নির্বাচনের ফল ঘোষিত হবে আগামী ৩ মার্চ।
এদিকে ভারতের খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ এই দুই রাজ্যের নির্বাচনে বড় বাধার মুখে পড়েছে ভারতের ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। রাজ্য দুটি হলো মিয়ানমার সীমান্তবর্তী নাগাল্যান্ড এবং বাংলাদেশের উত্তর সীমান্ত সংলগ্ন মেঘালয়। দুটোই ছোট্ট পাহাড়ি রাজ্য। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যা যথাক্রমে ১.৯ মিলিয়ন ও ২.৯ মিলিয়ন। নাগাল্যান্ডের জনসংখ্যার ৯০ শতাংশ এবং মেঘালয়ের ৭৫ শতাংশ খ্রিস্টান। জাতীয়ভাবে ভারতের ১.২৫ বিলিয়ন জনসংখ্যার মধ্যে মাত্র ২.৩ শতাংশ হলো খ্রিস্টান। সংখ্যার হিসাবে ২৭.৮ মিলিয়ন।
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যই বাংলাদেশের ওপারে। মূল ভূখ- থেকে ২৭ কিলোমিটার চওড়া একটি করিডোর দিয়েই কেবল এগুলোতে যাওয়া যায়, যেটা চিকেন করিডোর নামে পরিচিত। তিনটি রাজ্যে স্থানীয় দলগুলোর সাথে জোট বেধে ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি। এগুলো হলো হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ আসাম ও মনিপুর, অন্যটি হলো অরুণাচল প্রদেশ। অরুণাচালে বৌদ্ধ ও অ্যানিমিস্টরাই (সর্বপ্রাণবাদী) বেশি, যদিও সেখানে খ্রিস্টানদের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।
২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে এই রাজ্যগুলোতে নিজেদের অবস্থান সংহত করতে চায় বিজেপি। লোকসভায় রাজ্যগুলো থেকে মোট ২৪টি আসন রয়েছে। এর মধ্যে বিজেপির আটটি আর কংগ্রেসের নয়টি। উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় আসন রয়েছে ১৪টি। কংগ্রেসের নয়টি আর বিজেপির মাত্র একটি। বাকি আসনগুলো আঞ্চলিক দলগুলোর।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী পার্লামেন্টারি নির্বাচনে বিজেপির ভোট কমবে। তাই উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের আসনগুলো তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
নির্বাচনী যুদ্ধটা এখানে বিজেপির জন্য কঠিন, কারণ নাগাল্যান্ড ও মেঘালয়ের প্রধান ১৯টি মঙ্গোলিয় উপজাতি বিজেপিকে ভয় ও প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখে। এই উপজাতিগুলো ১৯ শতকে আমেরিকান ব্যাপ্টিস্ট ওয়েলশ প্রেসবাইটেরিয়ান, ইটালিয় ও জার্মান ক্যাথলিক মিশনারীদের দ্বারা খ্রিস্টান হয়, যারা এখানে এসেছিল শিক্ষা সম্প্রচারের জন্য।
আপনার মতামত লিখুন :