নুর উদ্দিন, ছাতক (সুনামগঞ্জ): ফাল্গুনে এসেছে ধলের মেলা/ যাবি যদি আয় দলে দলে, উঠেছে বেলা - দিরাইয়ের তাড়ল ইউনিয়নের ধল গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খরস্রোতা কালনী নদীর তীরের ধল মেলা নিয়ে শাহ আব্দুল করিম গান লিখে ছিলেন। শাহ আব্দুল করিমের গানের সাথে তাল মিলিয়ে এলাকার মানুষ দলে দলে মিলিত হয় ধলের মেলায়। প্রতি বছর উক্ত মেলায় যাত্রাগান, বাউল গান, সার্কাসসহ বিভিন্ন বিনোদনের আয়োজন করা হয়। প্রতি বছরের মতো এবারও মেলা অনুষ্ঠিত হবে আজ।
‘বারো মাসে তের পার্বণ’ প্রচলিত এই প্রবাদটি মনে করিয়ে দেয় বাংলার উৎসবের প্রাচুর্যতার কথা। এ দেশে এমন কোনো ঋতু বা মাস নেই, যখন কোথাও না কোথাও কোনো না কোনো উৎসবকে কেন্দ্র করে মেলা বসে না। অনেক কিছু বদলে গেলেও বদলায়নি আমাদের চিরচেনা গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী মেলা এবং উৎসবগুলো। তারই ধারাবাহিকতায় বুধবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী ধলের মেলা। একুশে পদকপ্রাপ্ত বাউল শাহ আব্দুল করিমের স্মৃতি ধন্য কালনী নদীর কূল ঘেঁষে ধল গ্রামে অনুষ্ঠিত হবে ঐতিহ্যবাহী ধলের মেলা। গতকাল থেকে মেলা মাঠে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যবসায়ীরা এসে দোকান খোলে বসেছেন। মেলায় প্রায় লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হবে বলে স্থানীয়রা মনে করছেন।
জানা যায়, প্রায় আড়াইশ বছর আগে ধল গ্রামের মাঠে একটি পরমেশ্বরী শিলা দেখা যায়। এরপর থেকে এ শিলাতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ফাল্গুন মাসের প্রথম বুধবার ভেড়া, মহিষ বলি দিয়ে পূজা করতে থাকেন এবং ওইদিন মাঠে বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্রের পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা।
এদিকে ধলের মেলাকে কেন্দ্র করে দিরাই উপজেলার তাড়ল ইউনিয়নের ধল মেলা মাঠ সেজেছে নতুন সাজে। এ দিনটি এ এলাকার একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। দিরাই উপজেলার তাড়ল, কুলঞ্জ ও জগদল ইউনিয়নে এবং পার্শ্ববর্তী শাল্লা, নবীগঞ্জ ও জগন্নাথপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মানুষ এ মেলার সাথে সম্পৃক্ত। তাই মেলাকে কেন্দ্র করে ওই এলাকার প্রত্যেক ঘরে অতিথি আসতে শুরু করেছেন।
এ মেলার আকর্ষণীয় জিনিস হচ্ছে বেল এবং কুইয়ার (ইক্ষু)। তবে দই, মুড়ি এবং রসগোল্লা খেতে ভুল করেন না কেউ। এ মেলা নিয়ে শাহ আব্দুল করিম ‘ধলের মেলা’ নামে একটি বই লিখেছেন। শাহ আব্দুল করিম তাঁর এক গানে বলেছেন, ফাল্গুণে এসেছে ধলের মেলা/ যাবি যদি আয় দলে দলে, উঠেছে বেলা।
শাহ আব্দুল করিমের গানের সাথে তাল মিলিয়ে এলাকার মানুষ দলে দলে মিলিত হয় ধলের মেলায়। প্রতি বছর উক্ত মেলায় যাত্রাগান, বাউল গান, সার্কাসসহ বিভিন্ন বিনোদনের আয়োজন করা হয়। শাহ আব্দুল করিমের শিষ্যরা আয়োজন করেন ‘করিম গীতি’র আসর। সারা রাত তাদের আসরে গাওয়া হয় শাহ আব্দুল করিমের গান।