ফারমিনা তাসলিম: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পর্যটনশিল্পকে এগিয়ে নিতে আমাদের সম্পদের কোনো অভাব নেই। পর্যটনশিল্পকে অর্থনৈতিক খাত হিসেবে উন্নত ও সমৃদ্ধ করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। যেগুলোর কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কনফারেন্স (ওআইসি) ভুক্ত দেশগুলোর পর্যটন বিষয়ক মন্ত্রীদের ১০ম সম্মেলনে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু বিধ্বস্ত একটি দেশকে উন্নত রাষ্ট্রে গড়ে তোলেছিলেন। একটি প্রদেশকে তিনি রাষ্ট্রে উন্নত করেছিলেন। মানবতার পারস্পরিক সহযোগিতার প্রতি তার ছিল অগাধ বিশ্বাস। পারস্পরিক সহযোগিতার শক্তিতে বিশ্বাস এবং যৌথ ধারণার প্রতি অনুপ্রাণিত হয়ে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে ওআইসিতে যোগদান করেন এবং বাংলাদেশ ওআইসিভুক্ত হয়। তখন থেকে বাংলাদেশ সদস্য রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে এগিয়ে যাচ্ছে। ইসলামের মহৎ মূল্যবোধগুলো নেতৃত্ব, ন্যায়বিচার এবং সকলকে অন্তর্ভূক্তির মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর সংহতিকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমি জানি বিশ্বব্যাপী পর্যটন দ্রুত বিকাশমান খাত বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছে। ওআইসিভুক্ত দেশের পর্যটন শিল্পে আগামীতে বৃহত্তর পরিসরে সহযোগিতা ও সমন্বয় বাড়াতে এই সম্মেলন বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। অর্থনৈতিক ও ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পরস্পরের কাছাকাছি আসা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার এই সম্মেলন নতুন সুযোগ ও নতুন দিগন্ত উম্মোচন করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
মিয়ানমারে নিজ দেশে জোরপূর্বক বিতাড়িত রোহিঙ্গাদেরকে মানবিক কারণে আমরা অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দিয়েছি। ওআইসিসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ যারা রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে দৃঢ়ভাবে বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়েছে এবং এই সমস্ত দুঃস্থ মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাদেরকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
ইসলামিক পণ্য সার্বিক সেবায় সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা এবং একটি বিশাল ভোক্তা থাকার কারণে বিশ্বাসভিক্তিক পণ্য সম্প্রসারণে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। এমনকি এসব পন্য সব জায়গায় জনপ্রিয়তা লাভ করছে। ইসলামিক পণ্য সেবার বড় অংশ হিসেবে রয়েছে ভ্রমণ ও পর্যটন। হালাল খাদ্য ইসলামিক অর্থনীতি হালাল ওষুধ, হালাল পর্যটন ইত্যাদি ইসলামিক অর্থনীতির বর্ধিত খাতের মধ্যে অন্যতম। এই খাতগুলোকে উন্নয়নে ওআইসিভুক্ত দেশগুলোকে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সহযোগিতা ও অংশীদারিত্ব আরো জোরদার করা প্রয়োজন।
স্বাধীনতার পর পরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পর্যটনশিল্পের গুরুত্ব অনুধাবন করে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন গঠন করেন। পর্যটনশিল্পকে এগিয়ে নিতে আমাদের সম্পদের অভাব নেই। আমাদের রয়েছে সুদীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ, সবচেয়ে দীর্ঘ নিরবিচ্ছিন্ন সমুদ্র সকৈত কক্সবাজার, বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল, রয়েল ব্যাঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল সুন্দরবন বাংলাদেশে অবস্থিত। সাগরকন্যা কুয়াকাটা, অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি এইসব স্থান পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় হতে পারে। বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ, শত শত নদী জালের মতো ছড়িয়ে আছে। যে আমাদের দেশকে করেছে ছবির মতো সুন্দর। দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলে শত শত চা বাগান। আমাদের এখানে অবকাশ যাপনের চোখ জুড়ানো মনোরম পরিবেশ। এছাড়াও আমাদের হাজার বছরের প্রাচীন ইতিহাস ও প্রত্ন, সমৃদ্ধ স্থানসমূহ, বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্য সমূহ আন্তর্জাতিক পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আর্কষণীয়।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশর জনগণ অত্যন্ত বন্ধুভাবাপন্ন, তাদের আতিথীয়তা আপনাদের জন্য সর্বজনীন স্মৃতিবিজড়িত হতে পারে। বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পকে অর্থনৈতিক খাত হিসেবে উন্নত করতে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী। পর্যটনের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে আমরা জাতীয় পর্যটননীতি ২০১০ প্রনয়ণ করেছি। জাতীয় পর্যটননীতি ২০১০-এ জাতীয় শিল্পকে দ্রুত বর্ধনশীল খাত হিসেবে আমরা চিহ্নিত করেছি। স্থানীয় পর্যটকদের জন্য পদ্মা নদীর ওপর ৬ দশমিক এক পাঁচ দীর্ঘ সেতু নির্মাণের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। পর্যটন রাজধানী কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ করছি। এটা নিমির্ত হলে পর্যটকগণ সরাসরি কক্সবাজারে আসতে পারবে। পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্য বিভিন্ন পদক্ষেপও নিয়েছি। এইবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ‘পর্যটন উন্নয়নের মাধ্যমে আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি’। আমি মনে করি এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিপাদ্য হয়েছে। যা প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশকে পরবর্তী দুই বছরের জন্য টুরিজম মিনিস্টার, আইসিটিএমে, চেয়ারপারসন নির্বাচিত করায় আমি আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। বাংলাদেশ দায়িত্ব পালন কালে ওআইসি সদস্যদেশগুলোর মধ্যে পর্যটন খাত বিকশিত করতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা গ্রহণ করবে।
সূত্র : একুশে টেলিভিশন