রাশিদ রিয়াজ : এপারের বাগ ওপার চলে গেছে কিংবা ওপারের বাঘ এপারে এসেছে এ ধরনের অভিযোগ সুন্দরবনের বাঘ নিয়ে দীর্ঘদিনের। তাই ভারত ও বাংলাদেশে ছড়িয়ে থাকা পুরো সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা সঠিক জানতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বনকর্মীদের কিংবা বনকর্তাদের বাঘের সংখ্যা নিয়ে প্রায় প্রতিবারই যে বিতর্ক ও সমালোচনা তার একটা ইতি হতে পারে। বাঘের সঙ্গে সঙ্গে এই সুমারিতে সুন্দরবনের অন্যান্য জীবজন্তুর সংখ্যার হিসেবও প্রাথমিকভাবে করে ফেলবে বন বিভাগ।
বাংলাদেশ ও ভারত জুড়ে ছড়িয়ে থাকা ১০ হাজার বর্গমিটারের সুন্দরবন বাঘের সংখ্যার বিচারে সারা বিশ্বে এর অবসথান পঞ্চম স্থানে। এ অবস্থান ধরে রাখতেও যৌথ বাঘ সুমারিতে নিখুঁত ফল পাওয়ার আশা করছেন দুআি দেশের বনকর্তারা।
এ প্রসঙ্গে এই সময়কে রাজ্যের মূখ্য বনপাল রবিকান্ত সিনহা বলেন, ‘এবারই প্রথম দুই দেশ একইসঙ্গে নিজেদের এলাকায় বাঘ গণনা করবে। ফলে সীমান্ত পেরিয়ে বাঘের অন্য দেশের জঙ্গলে ঢুকে পরায় বাঘের হিসেব সঠিক না পাওয়ার আশঙ্কা থাকবে না। ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করলেও মাঝে বর্ষার জন্য কয়েক মাস কোনও কাজ করা যাবে না। তাই ফের অক্টোবরে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু করে ডিসেম্বরে নমুনা সংগ্রহের কাজ শেষ করা হবে। বাংলাদেশ এবং ভারতের বনকর্মীদের নিয়ে বাঘ গণনার কর্মশালা গত সপ্তাহেই শুরু হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবায়। কেননা বাঘ গণনার ক্ষেত্রে পুরোনো কিছু পদ্ধতি বদলে ফেলা হচ্ছে।
গোসাবার কর্মশালায় বাংলাদেশের সুন্দরবনের দায়িত্বে থাকা বনবিভাগের ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসাররাও হাজির ছিলেন। এতদিন বাংলাদেশে বাঘ গণনার ক্ষেত্রে তার পায়ের ছাপ ছিল সংখ্যা গোনার অন্যতম হাতিয়ার। কিন্তু এবার থেকে সেই পায়ের ছাপের বদলে ইনফ্রারেড রশ্মিচালিত স্বয়ংক্রিয় ক্যামেরা -সহ অন্যান্য পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। বাঘের সংখ্যার হদিশ করতে এবার নৌকায় করে কর্মীরা জঙ্গল ঘেরা বিভিন্ন নদী এবং খাঁড়িতে ঢুকবেন। সেখানে বাঘের খাদ্য, যেমন হরিণ, বন্য শুয়োর, বানর কোন জঙ্গলে কত আছে সেদিকেও নজর রাখবেন্। তাছাড়া বাঘের মল-মূত্র, গাছের গায়ে বাঘের নখের আঁচড়ের নমুনাও সংগ্রহ কর হবে। বন বিভাগের এক কর্তা বলেন , ‘বাঘ সবচেয়ে থাকতে ভালবাসে হেতাল, গেঁয়ো , গরান গাছের জঙ্গলে। তাই কোন জঙ্গলে কত এমন গাছ রয়েছে সমীক্ষায় তাও নজর রাখতে বলা হয়েছে।
ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের সুন্দরবনে আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে বাঘ গণনা শুরু হয়েছে অনেক পরে। তবে সেখানে ২০১৫ সালের গণনা অনুযায়ী ১০৬টি বাঘের সংখ্যা হিসেব দেওয়া হয়েছে। যদিও ২০০৪ সালে সেখানে বাঘের সংখ্যা ছিল ৪৪০টি। ভারতের থেকে ক্যামেরা ট্র্যাপ সহ আধুনিক পদ্ধতিতে বাঘ গণনার নানা খুঁটিনাটি ইতিমধ্যে রপ্ত করে সেখানে গত বছর থেকে ফের আধুনিক পদ্ধতিতে গণনার কাজ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের বাঘ সুমারি প্রকল্পের অধিকর্তা আমির হাসান চৌধুরি জানিয়েছেন , ইতিমধ্যে সাতক্ষীরায় গণনার কাজ শুরু হয়েছে। আধুনিক ক্যামেরা এবং পদ্ধতি ব্যবহার করে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে সাতক্ষীরা রেঞ্চের বাঘের সঠিক সংখ্যা পাওয়া যাবে। এরপরে খুলনা , সরণখোলা ও চাঁদপাই ডিভিশনে গণনার কাজ শুরু হবে।
আয়তনে গোটা সুন্দরবন ব-দ্বীপের ৬০ শতাংশ রয়েছে বাংলাদেশে। ফলে সেখানে এই গণনা শেষ হওয়ার কথা ২০১৯ সালে। ভারতে ২০১৪ সালের গণনা অনুযায়ী ১০৩টি বাঘ আছে বলে জানা গিয়েছিল। তার মধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনা বনাঞ্চলে ২২টি , এবং সুন্দরবন টাইগার রিজার্ভ এলাকায় রয়েছে ৮১টি। ওয়াইল্ডলাইফ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ার বিজ্ঞানী কামার কুরেশি জানিয়েছেন , দু’দেশের জঙ্গল মিলিয়ে শ ’দুয়েক বাঘ রয়েছে। যে হিসেব বিশ্বে সুন্দরবনকে পঞ্চম স্থান দিয়েছে। ভারতের এই আধুনিক বাঘ গণনার পদ্ধতি বাংলাদেশের সঙ্গেই নেপাল এবং ভুটানও কাজে লাগাচ্ছে। সেখানকার বনকর্তাদের এ ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন ভারত।
আপনার মতামত লিখুন :