শিরোনাম
◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও

প্রকাশিত : ২৮ জানুয়ারী, ২০১৮, ০৮:৩২ সকাল
আপডেট : ২৮ জানুয়ারী, ২০১৮, ০৮:৩২ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

নেতৃত্বে তারেক না জোবায়দা ?

শাকিল : বর্তমান চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পর দলের শীর্ষ নেতৃত্বে কে আসবেন দলের বর্তমান সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান নাকি তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান? খালেদা জিয়ার পর তারেক রহমানই দলের হাল ধরবেন দীর্ঘদিন ধরে এ রকম আলোচনা চলমান থাকলেও সম্প্রতি দলের ভেতরে ও বাইরে নতুন করে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। ‘দুর্নীতি’র মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি-না, তা নিয়ে কিছুটা শঙ্কিত বিএনপি নেতারা। বিএনপির ‘বিকল্প নেতৃত্ব’ নিয়ে এরই মধ্যে দলের অভ্যন্তরে আলোচনা শুরু হয়েছে। এ নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন খোদ দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও। ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজা হয়ে যদি বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে যেতে হয়, তখন কার নেতৃত্বে চলবে দল— সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে নেতা-কর্মীদের মধ্যে।

২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর সংশোধিত গঠনতন্ত্র অনুযায়ী খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানই ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু তিনিও দুর্নীতির এক মামলায় সাত বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তার দেশে ফেরার সম্ভাবনাও নেই। সে ক্ষেত্রে এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তার সহধর্মিণী ডা. জোবায়দা রহমান দলের হাল ধরতে পারেন। দলের নেতা-কর্মীদের বড় অংশও শীর্ষ দুই নেতার অনুপস্থিতিতে ডা. জোবায়দা রহমানকেই চান। তবে এই প্রতিকূল পরিবেশে তিনি দেশে ফিরবেন কি না তাও স্পষ্ট নয়। জানা যায়, বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের পর চূড়ান্ত হওয়া গঠনতন্ত্র এখনো প্রকাশ করেনি দলটি। সেখানে চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতিতে কার নেতৃত্বে কীভাবে চলবে দল তা এখনো জানেন না নেতা-কর্মীরা।

এ ব্যাপারে মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীরাও সঠিক দিকনির্দেশনা চান। তবে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে দলের নাটাই থাকবে তার আস্থাভাজনদের হাতেই। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কেউ যেন দল ভাঙার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত না হয় তা ঠেকাতেই এই চিন্তাভাবনা বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি লন্ডনে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দলের শীর্ষ পদে পরিবর্তনের বিষয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমানকে জানিয়েছেন।  ডা. জুবাইদাকে বিএনপির শীর্ষ পদে বসানোর বিষয়ে হিসাব-নিকাশ করলেও তা বাস্তবায়ন করতে সময় লাগবে। খালেদা জিয়া গ্রেফতার হলে এবং তারেক রহমানের দেশে ফেরা অনিশ্চিত হলে আপদকালে জোবাইদা রহমানকে চেয়ারপারসনের পদে বসানো হতে পারে।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার রায় ঘোষণার জন্য আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি দিন ঠিক করেছে বিশেষ আদালত। রায়ে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তিন বছর থেকে যাবজ্জীবন ‘সাজা’ হতে পারে বলে আইনজ্ঞরা জানিয়েছেন। আবার এ মামলায় বেকসুর খালাস পাওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। তবে খালেদা জিয়া নিজে একাধিকবার আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেছেন, ‘রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে তাকে সরাতে “নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করার নীলনকশা’ বাস্তবায়ন করছে ক্ষমতাসীনরা।’ আদালতে ন্যায়বিচার পাবেন কি না তা নিয়েও তিনি সংশয় প্রকাশ করেছেন।

বিএনপির গঠনতন্ত্রে চেয়ারপারসনের সাময়িক অনুপস্থিতিতে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের কথা বলা হয়েছে। সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের কর্তব্য, ক্ষমতা ও দায়িত্বসংক্রান্ত (গ)(২)(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘চেয়ারম্যানের সাময়িক অনুপস্থিতিতে তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।’ (৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘যে কোনো কারণে চেয়ারম্যান পদ শূন্য হলে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।’

সূত্রমতে, সম্প্রতি খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠজনেরা বলেছেন, জেলকে আমলেই নিচ্ছেন না বিএনপি-প্রধান। এ নিয়ে মোটেই বিচলিত নন তিনি। উল্টো নেতা-কর্মীদের সাহস জোগাচ্ছেন। তবে তার অনুপস্থিতিতে বিকল্প নেতৃত্ব প্রস্তুত বলেও ঘনিষ্ঠজনদের আশ্বস্ত করেন তিনি। দলের ভিতর কেউ বিশ্বাসঘাতকতা করলে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন বিএনপি-প্রধান। তবে বিকল্প নেতৃত্ব কী হবে তা স্পষ্ট করেননি তিনি। নিজে জেলে গেলে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কী করণীয় তা নিয়ে গতকাল রাতে দলের স্থায়ী কমিটির সঙ্গে দীর্ঘ সময় বৈঠক করেছেন বেগম জিয়া। সেখানে দলকে ঐক্যবদ্ধ প্লাটফরমে রাখতে নীতিনির্ধারণী এই ফোরামের নেতাদের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। কেউ বিশ্বাসঘাতকতা করলে কিংবা দল ভাঙার ষড়যন্ত্র করলে আর কোনো ছাড় নয় বলেও সতর্কবার্তা দিয়েছেন বিএনপি-প্রধান। এদিকে লন্ডন সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে লন্ডন থেকেই দলের দিকনির্দেশনা দেবেন তারেক রহমান। সেভাবে প্রস্তুতিও নিচ্ছেন খালেদাপুত্র।

দলের স্থায়ী কমিটি, ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম-মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদক পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে তিনি নিয়মিতই যোগাযোগ রাখবেন। বিএনপির অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও নিয়মিত কথা বলবেন তারেক রহমান। তবে ঢাকায় সিনিয়র নেতাদের সমন্বয়ে দলের স্বাভাবিক সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এরই মধ্যে দলের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সব নেতার মোবাইল ফোন নম্বরও তারেক রহমানের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে বিএনপির একটি বড় অংশ চায়, খালেদা জিয়া জেলে গেলে লন্ডন থেকে তারেক রহমানের দল পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়বে। সে ক্ষেত্রে তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানকে দেশে পাঠিয়ে সাময়িকভাবে তার নেতৃত্বে দল পরিচালনা করা যেতে পারে। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের অনুপস্থিতিতে ক্লিন ইমেজ থাকা ডা. জোবায়দা রহমানও দলের হাল শক্তভাবে ধরতে পারবেন বলে মনে করেন মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীরা। ভিতরে ভিতরে অনেক সিনিয়র নেতার এ মনোভাব থাকলেও প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলতে নারাজ।

বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপিকে আগাম চাপে রাখার কৌশলে সরকার। সে ক্ষেত্রে বেগম জিয়াকে জেলে পাঠিয়ে দলে বিভক্তি সৃষ্টির লক্ষ্যে এ মামলার বিচারকাজ দ্রুত শেষ করা হয়েছে। রায়ে দুর্নীতির অভিযোগে খালেদা জিয়ার সাজা হতে পারে— এমন আভাসও দিয়েছেন সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী পর্যায়ের নেতা।

এ অবস্থায় রায়-পরবর্তী পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, সে বিষয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মতামত নেন বেগম জিয়া। বিএনপির এক সিনিয়র নেতা জানান, খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিএনপিতে ভাঙন ধরাতে এখনো একটি বিশেষ মহল কাজ করছে। এ ক্ষেত্রে ২০০৯ সালের সংশোধিত গঠনতন্ত্রের ৭-এর ‘ঘ’ ধারা সামনে আনা হতে পারে। ওই ধারায় কোনো দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তির বিএনপির কোনো পর্যায়ের কমিটির সদস্যপদ বা সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য বলে বিবেচিত হওয়ার কথা আছে। কিন্তু এবার শক্ত হাতে লাগাম টেনে ধরেছেন বেগম জিয়া। বিএনপির কেউ ফাঁদে পা দিলে তাকে গর্ত থেকে টেনে তোলা হবে না বলেও বিএনপি-প্রধান তাদের জানিয়েছেন। বাংলাদেশ প্রতিদিন, সমকাল

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়