রাহাত : নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে নাট, বল্টু ও স্ক্রু বিদেশে রপ্তানির প্রস্তুতি নিচ্ছে ওয়ালটন। এগুলো বিভিন্ন শিল্প- কারখানায় আসবাবপত্র থেকে শুরু করে ইলেকট্রনিকস, ইলেকট্রিক্যাল, অটোমোবাইলসহ অসংখ্য পণ্য উৎপাদনের অন্যতম কাঁচামাল। আকারে ছোট হলেও এসব প্রকৌশল পণ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সংশ্লিষ্ট পণ্যের দীর্ঘস্থায়িত্বের জন্য এগুলো যথেষ্ট মানসম্পন্ন হতে হয়। ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের এসব পণ্য ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল সলিউশনস’ হিসেবেও পরিচিত। বাংলাদেশে এ খাতের রয়েছে বিশাল বাজার, যার বেশির ভাগ আমদানিনির্ভর। ওয়ালটন এখন দেশেই তৈরি করছে আমদানিবিকল্প বিশ্বমানসম্পন্ন নাট, বল্টু ও স্ক্রু। ২০১৭ সালে গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটনের হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজে স্থাপন করা হয়েছে নাট, বল্টু ও স্ক্রুর উৎপাদন কারখানা, যার বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ১৮০০ টন। নিজস্ব চাহিদা ৩৬০ থেকে ৪০০ টন। সে হিসাবে প্রায় ১৩০০ টন নাট, বল্টু, স্ক্রু দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরবরাহের পরিকল্পনা রয়েছে। এরই মধ্যে দেশি কিছু ফার্নিচার, বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল ও কিচেন অ্যাপ্লায়েন্সেস প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এ ধরনের পণ্য দেশে উৎপাদিত হওয়ায় আর আমদানি করতে হবে না ভেবে তারা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এর মান নিয়েও। বিদেশি কিছু প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও রপ্তানি বিষয়ে আলোচনা চলছে। ওয়ালটনের স্ক্রু আরএনডি (গবেষণা ও উন্নয়ন) বিভাগের প্রধান পৃথ্বীশ কুমার সাহা বলেন, বিশ্বের লেটেস্ট প্রযুক্তির মেশিনারিজ ও দক্ষ প্রকৌশলী-টেকনিশিয়ানের সমন্বয়ে গড়ে তোলা হয়েছে নাট, বল্টু ও স্ক্রুর উৎপাদন ইউনিট। এখানে বিভিন্ন সাইজের ফাসেনার (Fastener, যা দিয়ে বিভিন্ন অংশকে একত্রে আবদ্ধ করা হয়) তৈরি করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ২ থেকে ১০ মিলিমিটার ব্যাসের এবং ৫ থেকে ৭৫ মিলিমিটার দৈর্ঘ্যের সেলফ ট্যাপিং ও সেলফ ড্রিলিং স্ক্রু, ৮.৮ ও ১০.৯ গ্রেডের হেক্সাগোনাল ও অ্যালেন বল্টু; মেশিন স্ক্রু ও হেক্সাগোনাল নাট। উৎপাদনে ব্যবহার করা হচ্ছে তাইওয়ানের ডাই ও মেশিনারিজ। মান নিয়ন্ত্রণ বিভাগে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মান প্রযুক্তির ইকুইপমেন্ট দিয়ে আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বিশ্বের সর্বাধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের উৎপাদন প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে।
এর মধ্যে রয়েছে ওয়্যার ড্রইং, স্ফেরোডাইজিং অ্যানেলিং, পিকলিং, ফসফেটিং অ্যান্ড মেটাল সোপ ট্রিটমেন্ট, কোল্ড ফরমিং, হিট ট্রিটমেন্ট অ্যান্ড ইলেকট্রপ্লেটিং। স্ক্রু ও বল্টু তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে উচ্চ গুণগত মানের বোরনমিশ্রিত ইস্পাত। অন্যদিকে কার্বন ইস্পাত দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে নাট-বল্টু। জানা গেছে, শতভাগ হিট ট্রিটমেন্টে তৈরি এসব প্রকৌশল পণ্যের মান যাচাইয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে স্টেরিও মাইক্রোস্কোপ, ম্যাটালার্জিক্যাল মাইক্রোস্কোপ ও মাইক্রো হার্ডনেস যন্ত্র। সূক্ষ্মভাবে এসব ধাতব পণ্যের মান যাচাইয়ে মাইক্রোস্কোপে প্রায় ১ হাজার গুণ বড় করে স্ট্রাকচারাল টেস্ট করা হয়। অন্যদিকে মাইক্রো হার্ডনেস যন্ত্র দিয়ে হার্ডনেস মাপা হয়। কমপক্ষে ৯৬ ঘণ্টা সল্ট স্প্রে টেস্টে উত্তীর্ণ ওয়ালটনের নাট, বল্টু ও স্ক্রুর মরিচারোধক ক্ষমতা তুলনামূলক অনেক বেশি। ওয়ালটন কম্প্রেশার আরএনডি বিভাগের প্রধান মীর মুজাহিদীন ইসলাম বলেন, কম্প্রেশারে ছয় ধরনের স্ক্রু লাগে। এসব স্ক্রুর থ্রেড ও স্কেলিং সঠিক না হলে কম্প্রেশারে লিকেজ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই কম্প্রেশারে ব্যবহূত স্ক্রু উচ্চ গুণগত মানের হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওয়ালটন কম্প্রেশারে ব্যবহূত স্ক্রু আগে ইতালি থেকে আনা হতো। ইউরোপীয় স্ট্যান্ডার্ডের সমমানের স্ক্রু-ই এখন ওয়ালটন তৈরি করছে। দেশীয় শিল্পোদ্যোক্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ওয়ালটনের তৈরি নাট, বল্টু ও স্ক্রুর প্রতি নিশ্চিন্তে শতভাগ আস্থা রাখা যায়। ওয়ালটনের সিনিয়র অপারেটিভ ডিরেক্টর উদয় হাকিম বলেন, দেশ-বিদেশে নাট, বল্টু ও স্ক্রুর মতো ইন্ডাস্ট্রিয়াল সলিউশনসের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিশ্বের বেশির ভাগ নামিদামি প্রতিষ্ঠানও এসব আউটসোর্সিং করে থাকে। ওয়ালটন নিজেরা এসব পণ্য তৈরি করায় ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পে বাংলাদেশ আরও এক ধাপ এগোল, যা দেশের শিল্পায়নকে ত্বরান্বিত করবে।বাংলাদেশপ্রতিদিন থেকে নেয়া।