ডেস্ক রিপোর্ট : নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা দেয়া নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে চাপ থাকলেও দলীয়প্রধান খালেদা জিয়ার বিচারধীন মামলার গতি-প্রকৃতি দেখে জাতির সামনে সেটা উপস্থাপন করতে চায় বিএনপি। এ নিয়ে দলটিতে রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ চলছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচনকালীন সরকারের প্রস্ত্মাব দিতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে বিএনপি। দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও মনে করেন, এই প্রস্ত্মাব দেয়ার পর ক্ষমতাসীনদের মনোভাব দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া উচিত। এ নিয়ে এতদিন ক্ষমতাসীনরা তেমন আগ্রহ না দেখালেও সম্প্রতি সরকার দলের পক্ষ থেকেই এই প্রস্ত্মাব দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। সঙ্গত কারণে হঠাৎ কেন ক্ষমতাসীনরা এই প্রস্ত্মাবনা চাচ্ছে, তাদের কৌশল কি, সেটা বোঝার চেষ্টা করছে বিএনপি। তাই সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশেস্নষণ করেই রূপরেখা দিতে চাচ্ছে বিএনপি।
দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার বিএনপির দাবি হলেও এর রূপরেখা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে সমঝোতার আশায়। ওই সহায়ক সরকারের রূপরেখার খসড়া চূড়ান্ত্ম করা হলেও বিএনপি এখনই সেটা জনসমক্ষে উপস্থাপন করছে না।
বিএনপি নেতারা মনে করেন, সরকারের মনোভাব শেষ পর্যন্ত্ম কঠোর বা অনমনীয় থাকলে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের প্রস্ত্মাব দিয়েও কোনো লাভ হবে না। তাদের মতে, ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বিধান বড় দুই দলের সমঝোতার মধ্য দিয়ে সংসদে পাস হয়েছিল। ওই বিষয়টি বিবেচনায় রেখে অনানুষ্ঠানিক আলোচনার মধ্য দিয়ে পর্দার আড়ালে কোনো সমঝোতা হয় কিনা, এর জন্য বিএনপি শেষ পর্যন্ত্ম চেষ্টা চালাবে। ওই চেষ্টা ভেস্ত্মে গেলে বিএনপি এমন এক সময় নির্বাচনকালীন সরকারের প্রস্ত্মাব জনগণের সামনে উপস্থাপন করবে, যাতে সে ইসু্যতে আন্দোলন টেনে নেয়া যায় নির্বাচন পর্যন্ত্ম।
সূত্রমতে, বিএনপি মনে করে, বর্তমান সরকার মেয়াদ পূর্ণ করবে, নির্দিষ্ট সময়ের আগে যেহেতু ক্ষমতা ছাড়বে না, সেহেতু আগে থেকেই রূপরেখা দিলে নতুন কৌশল নিতে পারে ক্ষমতাসীনরা। তাই কিছুটা বিলম্ব করেই এই প্রস্ত্মাব দিতে চায় বিএনপি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, ১৯৯৬ সালে বিএনপি রাজি হয়েছিল বলেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল সংসদে পাস হয়েছিল। ফলে এবারও সমঝোতা করেই প্রস্ত্মাব দেয়া ভালো। বিএনপি প্রস্ত্মাব দিল; কিন্তু সরকার মানল না, এমন প্রস্ত্মাব দিয়ে লাভ নেই। তাই কিছুটা সময় নিতে চায় বিএনপি।
এই নেতা আরও বলেন, সরকার এখন যত অনমনীয় মনোভাবই দেখাক না কেন, শেষ পর্যন্ত্ম নূ্যনতম ছাড় দিয়ে হলেও সমঝোতার একটি মনোভাব সরকারের মধ্যে দেখা দেবে। তবে সম্ভাব্য ওই পরিস্থিতির পরও সরকার কঠোর অবস্থানে থাকলে তখনই কেবল 'অল আউট' আন্দোলনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত্ম নেয়া হবে।
সূত্রমতে, নির্বাচনকালীন রূপরেখার খসড়ায় কয়েকটি কাঠামো রাখা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে, শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে 'ছুটিতে' পাঠিয়ে অথবা নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দিয়ে সরকার গঠন। এই তিনটি কাঠামোর মধ্যে প্রথম দুটি সংবিধানের আলোকেই করা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতা বলেন, আলোচনার ভিত্তিতে শর্তসাপেক্ষে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকলেও বিএনপি আপত্তি করবে না। এ ক্ষেত্রে বর্তমান সংসদ ভেঙে দিতে হবে এবং নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রীদের সবাই নিরপেক্ষ ব্যক্তি হতে হবে। প্রধানমন্ত্রী তার রম্নটিন কাজের বাইরে কোনো কাজ করতে পারবেন না।
একই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখার সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলার বিষয়টিও জড়িত। যেভাবে বিএনপিপ্রধানের মামলার বিচারকার্য দ্রম্নতগতিতে এগোচ্ছে, এটি সরকারের ইশারা ছাড়া সম্ভব নয়। নির্বাচনে অযোগ্য করতেই জিয়া চ্যারিটেবল ও অরফানেজ ট্রাস্টের ভিত্তিহীন মামলায় খালেদা জিয়াকে সাজা দেয়া হতে পারে। খালেদা জিয়া কারাগারে গেলে সে ক্ষেত্রে দৃশ্যপট পাল্টে যাবে। বিএনপি তখন রাজপথে সোচ্চার হবে। আন্দোলনে গেলে আলোচনা এবং রূপরেখা বাদ দিয়ে সরকার পতনের একদফার দিকে যেতে হবে তাদের।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরম্ন মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপি নির্বাচনকালীন সরকারের কাঠামো তৈরির কাজ প্রায় শেষ করে এনেছে। প্রস্ত্মাবনা জাতির কাছে উপস্থাপন করা হবে। এর মাধ্যমে একটি জাতীয় আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করার চেষ্টাও হচ্ছে। সেই আলোচনার মাধ্যমে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি নির্বাচনী ব্যবস্থা করতে হবে।
হতিনি বলেন, এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন, যা 'প্রতিটি মানুষের প্রত্যাশা। প্রস্ত্মাবনায়, নির্বাচনকালীন সময় একটি নিরপেক্ষ সরকার থাকবে, একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন থাকবে, একটি নিরপেক্ষ সরকারের নির্বাহী বিভাগ কাজ করবে; যার মাধ্যমে জনগণ নির্ধিদ্বায় নির্বিঘ্নে ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবে, তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে এবং এর প্রতিফলন ফলাফলে ঘটবে। যায়যায়দিন