মু. ইলিয়াস আলমগীর : ইসলামিক ল' সাধারত শরীয়াহ নামেই পরিচিত। সিভিল, ক্রিমিনাল, ইকোনোমিক সব ধরনের আইনে সজ্জিত একটি স্বতন্ত্র লিগ্যাল সিস্টেম। মুসলিম দেশগুলোর লিগ্যাল সিস্টেম তিন প্রকারে চিত্রিত হতে পারে। এক,ক্লাসিকাল শরীয়াহ সিস্টেম। যেখানে শরীয়াহ প্রধান ও কর্তৃত্ববান যেমন সৌদিআরব, মালদ্বীপ, সুদান। দুই,সেকুলার লিগ্যাল সিস্টেম যেখানে শরীয়াহ নিস্প্রভ, যেমন তুরস্ক। তিন, মিক্সড লিগ্যাল সিস্টেম। এই সিস্টেমে শরীয়াহ অল্প-বিস্তর কর্তৃত্ববান। অধিকাংশ মুসলিম দেশে কিংবা যে দেশে মুসলমান বাস করে সে দেশে এ সিস্টেম বিদ্যমান। কোথাও শরীয়ার সাথে কমন ল' মিক্সড। যেমন বাংলাদেশ, পাকিস্তান, সিংগাপুর। কোথাও শরীয়ার সাথে সিভিল, কােস্টোমারি মিক্সড যেমন কুয়েত, জর্ডান, ওমান, ইন্দোনেশিয়া, জিবুতি, ইরিত্রিয়া। কোথাও আবার শরীয়াহ, কমন,কাস্টোমারি মিক্সড। ব্রুনাই, নাইজেরিয়া, মালয়েশিয়া, গাম্বিয়া এর উদাহরণ। বাহরাইন, কাতার, ইয়েমেনে কমন, শরীয়াহ, কাস্টোমারি, সিভিল মিক্সড। কোন কোন দেশে মুসলিম আইন ঐচ্ছিক যেমন ইউকে।
প্রয়োগ,প্রচার এবং স্থায়িত্বের বিচারে তুলনামূলক আইন অধ্যয়নে তিনটি লিগ্যাল সিস্টেম সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। ইসলামিক ল',কমন ল',রোমান ল'। উপসংহারে এমত ব্যক্ত করতে পর্যাপ্ত আলোচনা সমীচীন ছিল। সংক্ষিপ্ত পরিসরে তা পরিহার করলাম।তবে উপরের যৎসামান্য পরিসংখ্যান এমতকে শক্তিমান করে। বিজ্ঞানের এই যুগে তুলনামূলক আইন অধ্যয়ন আইনাঙ্গনে এক দীপ্ত সংযোজন।এ অধ্যয়নের হাত ধরেই একজন শিক্ষার্থী আইনের বিশ্বজগতে পরিভ্রমন করার যোগ্যতা অর্জন করতে পারে।কমন ও রোমান ল' অধ্যয়নের ভাষা ইংরেজি হলেও ইসলামিক ল' অধ্যয়নের জন্য আরবী ভাষাজ্ঞান আবশ্যক।
খুব সম্ভবত ভাষাগত আবশ্যকতার কারণেই পশ্চিমে তুলনামূলক আইন অধ্যয়নে ইসলামিক ল' উপেক্ষিত। ফলে এ অঙ্গন আজো পুষ্টবান হয়ে উঠেনি।ইসলামিক লিগ্যাল সিস্টেমের প্রারম্ভিক তত্বীয় স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হলো যে, লিগ্যাল টেক্সটের শব্দ ও অর্থের বিশ্লেষণ করে বিধান আহরণের নির্দিষ্ট নীতিমালার অনুসরন। যা উসূলুল ফিক্হ নামে পরিচিত।এটাকে ইসলামিক জুরিসপ্রুডেন্স নাম দিলে এর পুরো আবেদনের এক তৃতীয়াংশও ফুটে ওঠে না।মূলত এটা স্বতন্ত্র অধ্যায় যা অন্য লিগ্যাল সিস্টেমে একেবারেই নেই। এজন্যই ইসলামিক লিগ্যাল সিস্টাম অধ্যয়নের জন্য আরবী ভাষাজ্ঞান আবশ্যক। আর আইনের বিশ্বজগত বিচরণের জন্য ইংরেজী আরবী দুভাষার জ্ঞানই জরুরী।
এলএলবি,এলএলএম হলো আইনের জগতে বিচরণ করার স্বীকৃতি মাত্র। আইন বিভাগগুলো একজন শিক্ষার্থীকে আইনের বিশ্বজগতে বিচরণের যোগ্য করে গড়ে তোলবে।পরিতাপের বিষয়,এ দেশে এমন বিশ্বআইন আত্মস্থ করার যোগ্য শিক্ষার্থী গড়ে ওঠার সুযোগ নেই।এখানে এককেন্দ্রিক পঠন-পাঠনেই তৃপ্ত সবাই।ফলে বৈশ্বিক আইনের ছাত্র হওয়ার সুযোগ হয় না। এ ব্যবস্হা কাউকে আইনজীবি হতে বাধা না দিলেও বৈশ্বিক আইনজ্ঞও তৈরী করতে পারে না। আশার কথা হলো আল-ফিকহ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিভাগ পঠন-পাঠনে ইংরেজি ও আরবী মিডিয়াম হওয়ায় তুলনামূলক আইন অধ্যয়নের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো বলে বিজ্ঞজনের মত দিয়েছেন। তারা বলেছেন, এর মাধ্যমে তিনটি লিগ্যাল সিস্টেম অধ্যয়নের এক অনুপম সুযোগ তৈরী হলো।
ইবির ভিসি ড. রাশিদ আশকারী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক মানের করতে বদ্ধপরিকর। সদ্য সমাপ্ত সমাবর্তনে শ্লোগান ও ছিল এমন।এ জাতীয় বৈশ্বিক অধ্যয়নের বিভাগগুলোই শ্লোগানের বাস্তবায়ন করতে পারে।প্রয়োজন বিজ্ঞজন এবং প্রশাসনের উদার পরিচর্যা। আমরা আশাবাদি।
লেখক: কবি ও কলামিস্ট
সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ