নিজস্ব প্রতিবেদক : ডন নামে পরিচিত জঙ্গি নেতা মেজবার প্ররোচনায় অষ্টম শ্রেণির ছাত্র নাফিস আত্মঘাতী হয়েছিলো বলে অনেকটা নিশ্চিত হয়েছে গোয়েন্দারা। গত বছরের অক্টোবরে নাফিসকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় নিয়ে যায় মেজবা। এর আগে নিজের যাত্রাবাড়ীর বাসায় রেখে তাকে আত্মঘাতী হওয়ার প্রশিক্ষণ দেয়। একবার তাকে বিশেষ মিশনে চট্টগ্রামেও পাঠানো হয়। কিন্তু নিহত হবার ১৫ দিন আগে আরেকটি অভিযান চালাতে তাকে ঢাকায় ফেরত আনা হয়।
এদিকে ঢাকার বাইরেও আস্তানা গেড়েছিল নাখালপাড়ায় নিহত জঙ্গিরা। এসব আস্তানার নেপথ্যে তাদের একজন সহযোগী রয়েছে। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
নগরীর গণিবেকারি এলাকার কাজেম আলী স্কুল এন্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র নাফিস উল ইসলাম। গত ৬ অক্টোবর হাঠাৎ করে বাসা থেকে উধাও হয়ে যায় সে। এই ব্যাপারে তার বাবা নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে চকবাজার থানায় একটি জিডি করেন। ওই জিডির অনুসন্ধান করতে গিয়ে নগর গোয়েন্দা পুলিশ এবং কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট পেয়ে যায় জঙ্গি আস্তানার সন্ধান। সদরঘাটের ওই জঙ্গি আস্তানা থেকে আশফাকুর রহমান ও রাকিব নামে দুই জঙ্গিকে আটক করা গেলেও পাওয়া যায়নি নাফিসকে।
গত ১২ জানুয়ারি রাজধানীর নাখালপাড়ায় র্যাবের অভিযানে মারা যায় তিন জঙ্গি। এর একজন নব্য জেএমবি নেতা ডন হিসেবে পরিচিত কুমিল্লার মেজবাহ বলে নিশ্চিত হয়। জানা যায় নিহতদের মধ্যে একজন চট্টগ্রামের স্কুলছাত্র নাফিস।
সিএমপি’র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গোয়েন্দা) হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘প্রথম শুরুটা হয়েছে ফেসবুকে। একটু ম্যাচিউর হলে তারা ফেসবুক ত্যাগ করে বিশেষ ধরণে একটি অ্যাপস ব্যবহার করে। এই অ্যাপসের মাধ্যমেই তারা যোগাযোগ রক্ষা করে এবং শেষ পর্যন্ত তাকে উৎসাহিত করতে সক্ষম হয়।’
এদিকে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র নাফিস জঙ্গি সংগঠনে যোগ দিয়ে আত্মঘাতী হওয়ায় কিছুটা শঙ্কার মধ্যে রয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। তারাও চেষ্টা করছে নাফিসের আত্মঘাতী হবার কারণ খুঁজে বের করে অন্যদের ব্যাপারে সতর্ক হতে।
কাজেম আলী স্কুল এন্ড কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি সৈয়দ ওমর ফারুক বলেন, ‘আমি অনুরোধ করবো যারা মা-বাবা আছেন তারা তাদের সন্তানদের প্রতি যতœবান হবেন। সন্তানেরা ঠিকমতো স্কুলে আসছে কিনা এবং সময়মতো বাসায় ফিরছে কিনা, কাদের সঙ্গে মেলামেশা করে সেটা অবশ্যই তাদের দেখতে হবে।’
নিহত নাফিসের পরিচয় শতভাগ নিশ্চিত হতে তার বাবাকে ঢাকায় ডেকে এনেছে র্যাব। তবে তার প্রতিবেশীরা কোনভাবেই মানতে পারছেন না নাফিসের এই করুণ পরিণতি। তারা বলেন, সে তার বাবাকে দোকানের কাজে সাহায্য করতো। আসতো এবং চলে যেতো কিন্তু কারও সঙ্গে খুব একটা কথা বলতো না। সে যে হঠাৎ করে এমন হয়ে যাবে তারা ভাবতেও পারেননি বলে জানান।
অপরদিকে নাখালপাড়ায় তৃতীয় জঙ্গি জীবন হতে পারে বলে ধারণা করছে চট্টগ্রাম পুলিশ। কারণ, সদরঘাটের জঙ্গি আস্তানায় তারা নাফিসের পাশাপাশি জীবন নামে অপর এক জঙ্গিরও তথ্য পেয়েছিলো। সে নাফিসের সঙ্গেই চট্টগ্রামের আস্তানা ত্যাগ করেছিলো।
অপরদিকে ঢাকার বাইরেও আস্তানা গেড়েছিল নাখালপাড়ায় নিহত তিন জঙ্গি। এসব আস্তানার নেপথ্যে তাদের একজন সহযোগী রয়েছে। তাকে গ্রেফতার করতে পারলে আরও তথ্য পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছে র্যাবের সংশ্লিষ্ট সূত্র। ঢাকার বাইরে সেই সব আস্তানার বিষয়েও তথ্য সংগ্রহ করছে তারা।
র্যাবের তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘নাখালপাড়ায় আস্তানা গড়ার আগে তারা ঢাকার দুটি জায়গায় আস্তানা গড়েছিল। আমরা প্রাথমিকভাবে এমন তথ্য পেয়েছি। সে বিষয়ে আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছি।’
এই কর্মকর্তা বলেন, ‘জেএমবির এই গ্রুপটির নেতৃত্ব দিচ্ছে একজন। তার সহযোগিতায় এই আস্তানাগুলো গড়ে উঠে। জঙ্গিরা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এসব আস্তানায় উঠেছিল। এই সহযোগীকে গ্রেফতার করতে পারলে, আরও কিছু তথ্য পাওয়া যাবে।’ সূত্র : সময় টিভি ও বাংলাট্রিবিউন