জান্নাতুল ফেরদৌসী: রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যান্সার নির্ণয়ে এখন পর্যন্ত যতগুলো প্রযুক্তি রয়েছে সেগুলো কোনটাই সহজলভ্য নয়। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যান্সার নির্ণয়ের ব্লাড টেস্ট এই প্রযুক্তিটি যদি সহজলভ্য হলেই বাংলাদেশের জন্য কার্যকরী হবে বলে মনে করছেন ক্যান্সার সোসাইটির সাবেক জেনারেল সেক্রেটারি ডাঃ আহমেদ সাঈদ। ক্যান্সার রোগী কমাতে হলে জনগণকে সচেতন করা ও ক্যান্সার সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জনগণের মাঝে পৌঁছে দিতে হবে।
বিবিসি বাংলার এক সাক্ষাৎকারে ক্যান্সার সোসাইটির সাবেক জেনারেল সেক্রেটারি ডাঃ আহমেদ সাঈদ এসব কথা বলেন।
৮ ধরনের ক্যান্সার নির্ণয় করা সম্ভব এমন এক ধরনের ব্লাড টেস্ট সম্প্রতি আবিষ্কার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের জন হকিংস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। তারা বলছেন, এই পদ্ধতি প্রচলন করা গেলে আগে থেকে ক্যান্সার নির্ণয় করে জীবন বাঁচানো সম্ভব। গবেষকরা বলছেন, ১ হাজারেরও বেশি মানুষের ওপর ‘ক্যান্সার সেক’ নামে এই গবেষণায় ৭০ শতাংশ সঠিক ফলাফল পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশের ক্যান্সার প্রেক্ষাপটে এমন আবিষ্কার কতটা তাৎপর্য পূর্ণ?
এমন প্রশ্নের জবাবে বিবিসির এক সাক্ষাৎকারে ক্যান্সার সোসাইটির সাবেক জেনারেল সেক্রেটারি ডাঃ আহমেদ সাঈদ বলেন, এটা খুবই তাৎপর্য পূর্ণ। কারণ ক্যান্সার এর মূল বিষয় হলো রোগটা সম্পর্কে যত আগে জানতে পারবো, শুরুতেই যদি রোগ নির্ণয় হয় তাহলে ফলাফল অনেক ভালো দাঁড়ায় এবং একেবারে ভালো হয়ে যাওয়ার ও সুযোগ থাকে। সুতরাং প্রথামিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা খুবই ভালো ভূমিকা রাখবে বলে আমি আশা করি।
বাংলাদেশে কি পরিমাণ মানুষ এখন ক্যান্সারে আক্রান্ত?
তিনি বলেন, ক্যান্সার নিয়ে যে পরিসংখ্যান বা নিবন্ধন করা হয় সেটা আমাদের দেশে এখনো করা হয়নি। হাসপাতাল এবং বিভিন্ন জায়গায় কিছু তথ্য আছে তাতে বাংলাদেশে আনুমানিক ১৫-২০ লাখ ক্যান্সার রোগী আছে। প্রতিবছর ২-৩ লাখ নতুন ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয় এবং দেড় থেকে ২ লাখ রোগী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।
কোন ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাংলাদেশে বেশি দেখা যায়?
এ প্রসঙ্গে ডাঃ আহমেদ সাঈদ বলেন, পুরুষ এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ভিন্নতা রয়েছে। মহিলাদের ক্ষেত্রে ২টি ক্যান্সারের প্রকৃতি বেশি দেখা যায় সেগুলো হলো, জরায়ুুর মুখে ক্যান্সার ও স্তন ক্যান্সার। এখন স্তন ক্যান্সারটা বেশি দেখা যায়। পুরুষদের ক্ষেত্রে ফুসফুস ও গলার ক্যান্সার।
রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যান্সার নির্ণয় করা বাংলাদেশে কতটা ব্যয়বহুল হতে পারে?
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই মূহুর্তে বলা যায় না। তবে রক্ত পরীক্ষা করে প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার নির্ণয় এটা ব্যয় বহুল হতে পারে বলে আমার মনে হয়। কারণ এখন পর্যন্ত যতগুলো রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যান্সার নির্ণয় রয়েছে সেগুলোও সহজলভ্য না। নতুন যেটা আসছে সেটা কতটা ব্যয় বহুল হবে সেটা বলতে পারছিনা। এগুলো যদি সহজলভ্য করা যায় তাহলে বাংলাদেশের জন্য এটা কার্যকরী হবে।
রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে এই আবিষ্কার যদি ফলপ্রসূ হয় তাহলে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী সংখ্যা কমানো সম্ভব হবে কি বা এর সম্পর্কে সচেতনতা বাড়বে কতটুকু?
এই প্রসঙ্গে ডাঃ আহমেদ সাঈদ বলেন, পরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় ক্যান্সার রোগী কমাতে সাহায্য করবে না। এটা সাহায্য করবে মূলত প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার ফলাফল ভালো করবে। ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা কমাতে হলে ক্যান্সার কেন হয় এর কারণ সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা।