হ্যাপী আক্তার: যুক্তরাষ্ট্রের একদল পুরুষ সংগঠনটি তৈরি করেছেন যাদের কাজ নারীদের ওপরে নির্যাতন আর সহিংসতা বন্ধে পুরুষদেরকে সচেতন করে তোলা। ‘কল টু ম্যান’ নামের সেচ্ছসেবী সংগঠনটিতে এরই মধ্যে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ কয়েক’শ মানুষ সেখানে যোগ দিয়েছেন। বর্তমানে ‘কল টু ম্যান’ সংগঠনে রবিবারের (১৪ জানুয়ারি) অনুষ্ঠানে নানা বয়সের ২’শর বেশি মানুষ অংশ নিচ্ছেন। যারা সমাজের নানা শ্রেণী পেশা থেকে এসেছেন। তাদের মধ্যে আছেন খেলোয়াড়, রাজনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ী।
একজন সেচ্ছাসেবী সমাজকর্মী হিসেবে অনেক দিন ধরে কাজ করছেন টনিপোটার। কাজ করতে গিয়ে দেখতে পান নারীদের ওপরে কী মাত্রায় সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। নারীদের প্রতি অনেক পুরুষেরই সহনশীলতা আর শ্রদ্ধার অভাব এর জন্য দায়ি। তাই তিনি পুরুষদের নিয়ে একটি কর্মসূচি করেছেন যার নাম ‘কল টু ম্যান’। যাদের কাজ নারীদের প্রতি সহিংসতা আর নির্যাতনের বিরুদ্ধে লড়াই করা। টনিপোটার বলেছেন, নারীদের প্রতি সহিংসতা বন্ধ করতে হলে পুরুষদেরই সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে।
টনিপোটার বলেছেন, যখন আমরা প্রথম ‘কলটুম্যান’ চালু করলাম তখন আমাদের প্রথম কাজ ছিলো সামাজিকভাবে ছড়িয়ে দেওয়া। যেসব ক্ষেত্রে, নারীদের কম মূল্যায়ন করা হয়, কম সম্মান করা হয় সেখানেই আমরা জোড় দিতে শুরু করলাম। কলটুম্যান সংগঠনে যারা যুক্ত হয়েছেন, তারা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যে তারা তাদের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে পুরুষদের সুস্থ্য মানসিকতা তৈরি আর নারীদের প্রতি নির্যাতন বন্ধের জন্য কাজ করবেন।
টনিপোটার আরো বলেন, পুরুষদের নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখতে হবে। ছেলেদের শেখাতে হবে তাদের কোনো আচরণ যেন নারীদের মধ্যে কোনো ভীতি তৈরি না করে। তাদের এই ধরণের আচরণকেও আর প্রশ্রয় দেওয়া হবে না । পুরুষদের প্রতি নারীদের যে ভীতি আর দূরত্ব রয়েছে তা দূর করা পুরুষদেরই দায়িত্ব।
পুরুষদের প্রতি নারীদের ভীতি দূর করতে টনিপোটারের দলে যারা যোগ দিয়েছেন তাদের একজন ফুটবলার মার্কভারসিলে। যিনি ক্যান্সারে সাথে যুদ্ধ করে অবশেষে জয়ী হয়েছে। মার্ক বলেছেন, আমি সেদিন কেবল থেরাপি নিতে যাচ্ছিলাম। সে দিন তার হবু স্ত্রী তাকে জানায় যে সে তার বাবার কাছেই যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। একথা শুনে আমি একজন পুরুষ হিসেবে নিজের পরিচয়টাই হারিয়ে ফেলেছিলাম। কিন্তু সে যখন বলেছে, আমার কাছে থাকলে সে সবচেয়ে নিরাপদ বোধ মনে করে। তখন যেন আমি একজন সাধারণ মানুষের চেয়েও বেশি কিছু হয়ে গেলাম। তখন আমার দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেল।
দুই বছর ধরে এই কর্মসূচির সাথে রয়েছে জেরিনিকলিংস। তাকে দেখে আরো অনেকেই এই কর্ম সূচির সাথে যুক্ত হয়েছেন। জেরিনিকলিংস বলেন, প্রতিবার যখন পুরুষের উপস্থিতিতে কোনো নারীর ওপরে দমন পিড়ন বা নির্যানত হবে। তাকে অপমানিত বা অসম্মানিত হতে দেবে, নারীর ওপরে নির্যাতনের মুখ বন্ধ রাখবেন। তখন নিজের কোনো প্রিয় বা ভালোবাসার মানুষ নারীর ওপরে অন্য কাউকে সুযোগ তৈরি করে দেওয়া।
এখন কিশোর আর তরুণদের সচেতন তৈরি করার চেষ্টা করছে কলটুম্যান। স্কুল-কলেজের ৩’শ শিক্ষার্থীর ওপরে জরিপ চালিয়ে কলটুম্যান দেখতে পেয়েছে, তাদের মাত্র ১৯ শতাংশ যৌনতার ক্ষেত্রে মেয়েদের সম্মতির বিষয়ে সচেতন। তবে কলটুম্যানের কর্মসুচির পর তার হার বেড়েছে ৭৫ শতাংশের বেশি।
যৌন সহিংসতা বন্ধের জন্য কাজ করে এমন একটি সংস্থা হলিবারবের কর্মকর্তা জনিয়রায় বলেছেন, যারা হাই-স্কুলে যেতে শুরু করেছে তাদের মধ্যে নারীদের প্রতি সহিংসতা দূর করতে তাদের শিক্ষা দেওয়া উচিত। কারণ তারা মেয়েদের ভিন্ন চোখে দেখতে শুরু করে। কাজেই তাদের এই সময়ে মেয়েদের প্রতি শ্রদ্ধাবোদ তৈরি হওয়া দরকার। সুস্থ্য সম্পর্কের ব্যাপারে তাদের ধারণা থাকা দরকার।
কলটুম্যান সংস্থাটি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ওরতি কিশোর তরুণদের বুঝানোর চেষ্টা করছের, যে নারীদের প্রতি তাদের আচরণ আর দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হওয়া উচিত। টনিপোটারের আশা এই শিক্ষা তাদের ভবিষ্যত জীবনের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দেবে। সূত্র: বিবিসি বাংলা