শিরোনাম
◈ পারস্পরিক শুল্ক সংকট: চূড়ান্ত দর-কষাকষিতে বাংলাদেশ ◈ আরব আমিরাতের আবুধাবিতে প্রবাসী বাংলাদেশির ভাগ্যবদল: লটারিতে জিতলেন ৮০ কোটি টাকা ◈ ২৪ ঘণ্টায় গাজায় নিহত ১১৮, যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পর্যালোচনায় হামাস ◈ ‘মব এবং জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হলে কঠোর পদক্ষেপ নেবে সেনাবাহিনী’ ◈ হোটেলে নারীকে মারধর করা বহিষ্কৃত যুবদল নেতার বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তারের চেষ্টায় পুলিশ ◈ বনানীর জাকারিয়া হোটেলে ঢুকে নারীদের ওপর যুবদল নেতার হামলা, ভিডিও ◈ দাঁড়িপাল্লা প্রতীকসহ জামায়াতের নিবন্ধন পুনর্বহালের গেজেট প্রকাশ ◈ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও শহীদ দিবস পালনের নির্দেশ ◈ তিন দিনের ছুটিতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, পাবেন না যারা ◈ উচ্চ ও নিম্ন আদালতকে ফ্যাসিস্টমুক্ত করতে হবে: সালাহউদ্দিন

প্রকাশিত : ১২ জানুয়ারী, ২০১৮, ০৯:৩৭ সকাল
আপডেট : ১২ জানুয়ারী, ২০১৮, ০৯:৩৭ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বাংলাদেশের জলসীমায় দস্যুতা বেড়েছে

ডেস্ক রিপোর্ট : গত বছরের ১৮ জানুয়ারির ঘটনা। চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর ফেলে লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী কনটেইনার জাহাজ সান্তা ফিওরেঞ্জা। আঁকশি বাঁধা দড়ি বেয়ে জাহাজে উঠে আসে চার ডাকাত। অ্যাফট মুরিং স্টেশনে জাহাজের এক দায়িত্বরত কর্মী তাদের উপস্থিতি শনাক্ত করেন। সঙ্গে সঙ্গে জাহাজের অ্যালার্ম সিস্টেম ব্যবহার করে সব কর্মীকে জড়ো করেন তিনি। কর্মীদের এ সজাগ উপস্থিতি টের পেয়ে জাহাজের স্টোর থেকে যতটুকু সম্ভব হয়, ততটুকু মালামাল নিয়ে কেটে পড়ে দুষ্কৃতকারীরা। তৎক্ষণাৎ বিষয়টি বন্দর কর্তৃপক্ষ ও কোস্টগার্ডকে জানানো হয়। কয়েক ঘণ্টা পর দুটি সন্দেহজনক নৌকা তল্লাশি করা হলেও খোয়া যাওয়া কোনো মালামাল পাওয়া যায়নি বলে জাহাজের কর্মকর্তাদের জানায় কোস্টগার্ড।

এরও দুই দিন আগে ১৬ জানুয়ারি চট্টগ্রাম বন্দরেই একই ধরনের আরেকটি ঘটনা ঘটে। মার্শাল আইল্যান্ডের পতাকাবাহী আরেকটি কনটেইনার জাহাজের নিরাপত্তায় দায়িত্বরত এক কর্মী ধারালো অস্ত্রধারী কয়েক দুর্বৃত্তের উপস্থিতি শনাক্ত করে। সে সময় পিএ অ্যালার্ম সিস্টেম ব্যবহার করে জাহাজের সব ক্রুকে জড়ো করা হয়। এক্ষেত্রেও নাবিকদের সতর্কাবস্থা টের পেয়ে কিছু মালামাল হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।  খবর বণিক বার্তা’র।

গত ৩১ ডিসেম্বরের ঘটনা। কুতুবদিয়া দ্বীপের ১৬ নটিক্যাল মাইল পশ্চিমে ক্রেস্ট ২৫২ নামে ইন্দোনেশিয়ার পতাকাবাহী একটি বার্জকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল ক্রেস্ট স্পার্টান ৮ নামে সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহী একটি টাগ বোট। এর মধ্যেই একদল দুর্বৃত্ত বার্জে উঠে বেশ কিছু মালামাল হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় জাহাজ দুটির নাবিক ও ক্রুদের মধ্যে কেউ হতাহত হয়নি।

বাংলাদেশের জলসীমায় পণ্যবাহী জাহাজগুলোয় গত বছর এ ধরনের দস্যুতার ঘটনা ঘটেছে মোট ১১টি, যা কোনো দেশের জলসীমায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ব্যবহৃত পণ্যবাহী জাহাজে হামলা বা জলদস্যুতার সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশকে তুলে এনেছে পঞ্চম অবস্থানে। অন্যদিকে ২০১৬ সালে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছিল মাত্র তিনটি। সে হিসেবে গত বছর বাংলাদেশের জলসীমায় পণ্যবাহী জাহাজে দস্যুতার ঘটনা বেড়েছে তিন গুণেরও বেশি।

বাংলাদেশের জলসীমায় গত বছর চট্টগ্রাম বন্দর ও কুতুবদিয়া দ্বীপের আশপাশের অঞ্চলে জলদস্যুতার ঘটনা ঘটেছে নয়টি। ইন্দোনেশিয়ার অফ পালাউ বিনতান ও ফিলিপাইনের ম্যানিলা ছাড়া বিশ্বের আর কোথাও গত বছর পণ্যবাহী জাহাজ লক্ষ্য করে এ পরিমাণ দস্যুতার ঘটনা ঘটেনি।

‘পাইরেসি অ্যান্ড আর্মড রোবারি অ্যাগেইনস্ট শিপস: রিপোর্ট ফর দ্য পিরিয়ড ১ জানুয়ারি-৩১ ডিসেম্বর, ২০১৭’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্সের (আইসিসি) বিশেষায়িত বিভাগ ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম ব্যুরো (আইএমবি) গত বছর বিভিন্ন দেশে ঘটে যাওয়া আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ব্যবহূত পণ্যবাহী জাহাজে হামলা বা জলদস্যুতার সার্বিক চিত্র তুলে ধরে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ব্যবহৃত পণ্যবাহী জাহাজে হামলার ঘটনা ঘটেছে মোট ১৮০টি। এর মধ্যে ১২১টিই ঘটেছে ইন্দোনেশিয়া, নাইজেরিয়া, ফিলিপাইন, ভেনিজুয়েলা ও বাংলাদেশ— এ পাঁচটি দেশে।

বাংলাদেশের জলসীমায় এ ধরনের দস্যুতার প্রবণতা সম্পর্কে আইএমবি প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব ক্ষেত্রে দুর্বৃত্তরা সাধারণত জাহাজগুলোকে নোঙর ফেলার সময়েই টার্গেট করে থাকে। এসব হামলার অধিকাংশই ঘটে চট্টগ্রাম বন্দর বা সেখানকার প্রবেশ ও নির্গমন পথে। তবে কর্তৃপক্ষের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকার কারণে গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে এ ধরণের দস্যুতার ঘটনা বেশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে এসেছে।

প্রতিবেদনের ভাষ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছিল ২০১৪ সালে। ওই বছর দেশের জলসীমায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ব্যবহূত পণ্যবাহী জাহাজে দস্যুতার ঘটনা ঘটেছিল ২১টি।

বণিক বার্তার প্রতিবেদনে জানা গেছে, বাংলাদেশের জলসীমায় গত বছর ঘটে যাওয়া ১১টি জলদস্যুতার ঘটনার মধ্যে ছয়টি ঘটেছে জাহাজ নোঙররত অবস্থায়। বাকি পাঁচটি ঘটেছে জাহাজ চলমান বা ইঞ্জিন চালু অবস্থায়।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশী দস্যুদের মধ্যে ধারালো অস্ত্র ব্যবহারের প্রবণতাই বেশি। ঘটে যাওয়া ১১টি দস্যুতার মধ্যে ছয়বারই দস্যুরা সঙ্গে করে ধারালো হাতিয়ার নিয়ে জাহাজে উঠেছিল। বাকি ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রে দস্যুদের অস্ত্র ব্যবহার সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

তবে প্রতিবেদনে তুলে ধরা তালিকা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ইন্দোনেশিয়ার অফ পালাউ বিনতান ও ফিলিপাইনের ম্যানিলা বন্দরের পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দর ও কুতুবদিয়া দ্বীপের আশপাশের এলাকা এখন এ মুহূর্তে বৈশ্বিক পণ্যবাহী জাহাজগুলোর জন্য সবচেয়ে অনিরাপদ স্থান হয়ে উঠেছে। গত বছর তিনটি বন্দরেই নোঙররত অবস্থায় দস্যুতার শিকার হয়েছে নয়টি করে বাণিজ্য পণ্যবাহী জাহাজ।

পণ্যবাহী জাহাজে জলদস্যুতার দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া। দেশটিতে গত বছর এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে ৪৩টি। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা নাইজেরিয়ায় এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে ৩৩টি। এর পর তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে থাকা ফিলিপাইন ও ভেনিজুয়েলায় গত বছর পণ্যবাহী জাহাজে জলদস্যুতার ঘটনা ঘটেছে যথাক্রমে ২২ ও ১২টি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়