শিরোনাম
◈ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ ◈ তারেক রহমানের নেতৃত্বেই জুলাই শহীদদের স্বপ্নের দেশ গড়া সম্ভব : মীর স্নিগ্ধ ◈ স্কুলে ভর্তি এবারও লটারিতে, আবেদনের তারিখ ঘোষণা ◈ মোবাইল ব্যবহার নিয়ে পুলিশ সদস্যদের জরুরি নির্দেশনা ◈ ৪ স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ: রাজধানীর সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা জোরদার ◈ বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে ভারতের নতুন সামরিক ঘাঁটি: শিলিগুড়ি করিডোর ঘিরে ‘নীরব শক্তি প্রদর্শন’ বলছে টিআরটি ওয়ার্ল্ড ◈ একনেক সভায় ৭ হাজার ১৫০ কোটি টাকার ১২টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন ◈ অবৈধ পথে ইতালি গেল ১৮ হাজার বাংলাদেশি, ভিসা পেয়েছে ৯ হাজার: রাষ্ট্রদূত আলেসান্দ্রো ◈ ইসির সিদ্ধান্ত অবৈধ, বাগেরহাটে ৪টি সংসদীয় আসন বহাল ◈ রাতে জরুরি বৈঠক ডেকেছেন তারেক রহমান

প্রকাশিত : ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৪:০৪ সকাল
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৪:০৪ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি ছাড়া কী মানবকল্যাণ সম্ভব?

দীপক চৌধুরী : বড়দিনকে সামনে রেখে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের উদ্দেশে দেওয়া বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যটি ছিল এরকম, ‘বাংলাদেশ একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসেবে জন্ম নেয়, যেখানে ১৯৭১ সালে সব ধর্মের মানুষ দেশকে স্বাধীন করতে যুদ্ধ করেছিল। তাই জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে দেশের সব মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগের অধিকার রয়েছে।’ কথাগুলো শতভাগ সত্য। কিন্তু তা কী সবাই বিশ^াস করে! বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়াও কিন্তু বলে থাকেন, ‘বড়দিনের সার্বজনীনতা দেশের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন ও সহাবস্থান আরও জোরদার করবে।’ কিন্তু বিএনপি কী কখনো অসাম্প্রদায়িকতা বিষয়টি বিশ^াস করে? শুক্রবার ছুটির দিন। খিলগাঁও বাজারে গিয়েছি ‘মনভরে’ বাজার করতে। হাঁস-মুরগী কাটবার দোকানে লম্বা লাইন। সেখানেই সময় কাটানোর জন্য গল্প শুরু। একথা সেকথার পর রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণ।

হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন সাধারণ মানুষ প্রশ্ন করলেন, ‘নির্বাচন তো সামনে। তাইতো আবার ভয়। নির্বাচন কী সুন্দরভাবে হবে।’ মানে? জানতে চাই। ভদ্রলোক বললেন, ‘বলছিলাম নির্বাচন এলেই তো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর ভয়ঙ্কর চোট। ২০১৮ তো ভয়ের বছর?’ সম্ভবত আমাদের ‘এক নম্বর’ সমস্যা আমরা যা বলি তা বিশ^াস করি না। এ কারণেই যুদ্ধাপরাধীদের সাজা হয়নি দীর্ঘদিন। বরং তাদের রাজনীতিতে অপরিহার্য করে তোলা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারই সেই অপরাধীদের বিচার করেছে, করছে। মুক্তিযুদ্ধে, যে যুদ্ধে লাখ লাখ মানুষ রক্ত দিয়েছে, সেই যুদ্ধের যথার্থ উত্তরাধিকারী তিনিই যিনিÑ সেই সত্যকে লালন করেন। বহুদিন ঝুলে থাকা যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু করেছে, আরও চলছে, আগের সরকারগুলো তা পারেনি। রাজনীতিতে ‘কমিটমেন্ট’ না থাকলে কখনো মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায় না, মানুষকে আপন করে পাওয়া যায় না। আপনি মনেপ্রাণে যা বিশ^াস করেন না ক্রমাগত তা বলে বেড়ানোর অভ্যাস থাকলে ইতিহাস আপনাকে কঠিন গর্তে নিক্ষেপ করবে।

ইতিহাস থেকে এ শিক্ষা আমাদের নেওয়া উচিত। যদিও এেেদশের অনেকে এটা নেন না, অনেক রাজনীতিবিদ আজ অপাক্তেয়। ‘ওয়ার্কিং জার্নালিস্ট’ হিসেবে বিস্তর অভিজ্ঞতা থেকে কষ্মিনকালেও যে দলটির কথা কাজে মিল পাইনি বা দেখিনি সেটি হচ্ছে জিয়াউর রহমানের সৃষ্ট বিএনপি। দলটির লোকেরা বিশ^াস করে, সংখ্যালঘুরা বিএনপিকে ভোট দেয় না। তাহলে গৌতম চক্রবর্তী বিএনপি থেকে এতো ভোট পেয়ে এমপি-মন্ত্রী হলো কীভাবে? এর উত্তর নেই। ক্যান্টনমেন্ট থেকে গড়ে ওঠা দলকে আন্দোলনের মাধ্যমে ‘রাজনৈতিক চরিত্র সুলভ’ করার আপ্রাণ চেষ্টা করে নিজের মতো করে গুছিয়ে নিয়েছিলেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া। এরপর সরকার নির্মাণ করলেন। ১৯৯১ থেকে ৯৬ সাল পর্যন্ত চলতে গিয়ে প্রথম দফায় নানা ঘটনায় বিতর্কিত হন তিনি। যাই হোক, সম্ভবত ৯৩ সালের কথা। তখন একদিন সচিবালয়ে ত্রাণ ও পুনর্বাসন প্রতিমন্ত্রী লুৎফর রহমান খান আজাদের অফিসে বসে কফি খাচ্ছি। রাজনীতির উত্থান-পতনের কথা, পুঁজিবাজারের কথা, ঘূর্ণিঝড়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্তদের তৎকালীন অবস্থা ছিল আমাদের আলোচনার বিষয়।

মন্ত্রী হলেও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কারণেই নানাকথা, বিএনপি সরকারের দোষত্রুটির সমালোচনাও করা সম্ভব হয়েছিল আমার পক্ষে। হঠাৎ পরিবেশ বদলে গেল। বিএনপির একদল সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে নাজিম উদ্দিন আলমের প্রবেশ। তিনি ঢুকতে ঢুকতে গল্প করছিলেন, ‘মালাউনের বাচ্চারা কী ধানের শীষে ভোট দেবে? নৌকায় দিয়েছে শালা-রা-আ-আ.........।’ প্রতিমন্ত্রীর মুখোমুখি আমি। তাকিয়ে আছি তার দিকে। বিব্রত চেহারা আর লাল হয়ে যাওয়া মুখ দেখলাম তার। আজাদ প্রায় চেঁচিয়ে উঠলেন, ‘উনি আমাদের বন্ধু, দাদা। সাম্প্রদায়িক কথাবার্তা রাজনীতিকদের মুখে মানায় না আলম!’ নাজিম উদ্দিন আলমের কণ্ঠে অন্যকথা তখন।

‘বলছিলাম আমার পরিচিত এক হিন্দু ব্যবসায়ীর কথা। একটা উদাহরণ দিচ্ছিলাম... আর কী...।’ পরে কী হয়েছিল, কী ঘটেছিল তা উত্থাপন না করলেও বুঝতে কারো কষ্ট হওয়ার নয়, সাম্প্রদায়িকতা কাদের মগজে, মননে, মস্তিষ্কে। অনেকেই তথাকথিত রাজনীতির কারণে ভুলে যান, বাংলাদেশ একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ, যেখানে সব ধর্ম, বর্ণ ও ধর্মমতের মানুষ তাদের নিজস্ব মর্যাদা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে বসবাস করে।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও গল্পকার
সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়