শিরোনাম
◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২১ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৮:৫০ সকাল
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৮:৫০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

পাসপোর্ট অপাঙক্তেয় তবুও অভিবাসনে অগ্রগামী

ডেস্ক রিপোর্ট : গ্রহণযোগ্যতার বিচারে বাংলাদেশী পাসপোর্টের অবস্থান একেবারে নিম্নসারিতে। এ পাসপোর্টে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে বিশ্বের অনেক বিমানবন্দরেই। বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠানোর ঘটনাও ঘটছে। তার পরও অভিবাসনের শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে ওপরের সারিতে। অভিবাসনসংক্রান্ত জাতিসংঘের চলতি বছরের প্রতিবেদন বলছে, যে পাঁচটি দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি অভিবাসন হচ্ছে, তার মধ্যে আছে বাংলাদেশও।

বৈশ্বিক অভিবাসনচিত্র নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ক দপ্তর। ইন্টারন্যাশনাল মাইগ্রেশন রিপোর্ট-২০১৭ শীর্ষক চলতি বছরের প্রতিবেদনটি গত সোমবার প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। তাতে দেখা গেছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অভিবাসী হিসেবে ছড়িয়ে থাকা ভারতীয় নাগরিকের সংখ্যা বর্তমানে সবচেয়ে বেশি, ১ কোটি ৬৬ লাখ। অভিবাসী বাংলাদেশীর সংখ্যাও কম নয়। বিশ্বের নানা প্রান্তে বাস করা বাংলাদেশী নাগরিকের সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ৭৫ লাখ। এ সংখ্যা নিয়ে বাংলাদেশ রয়েছে সবচেয়ে বেশি অভিবাসী দেশের তালিকায় পঞ্চম স্থানে।

কেউ শিক্ষার উদ্দেশ্যে, কেউ আবার কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে নিজ দেশ ছেড়ে অভিবাসী হচ্ছে। কেউ আবার দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে দারিদ্র্য, সংঘাত বা কাজের সুযোগ না পেয়ে। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে অভিবাসনের মূল কারণ কর্মসংস্থান বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, নিজ দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ না পেয়ে অথবা কাঙ্ক্ষিত পারিশ্রমিকের অভাবেই মূলত দেশ ছেড়ে অভিবাসী হচ্ছে এসব মানুষ। এর বাইরে আরো কারণ থাকলেও প্রধান নয় সেগুলো।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক (আইআর) বিভাগের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, আর্থিক সচ্ছলতার উদ্দেশ্যেই মূলত মানুষ অভিবাসী হয়। ভারত ও বাংলাদেশের বিপুল জনসংখ্যাও অধিক অভিবাসনের কারণ। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে গড়ে ওঠা নেটওয়ার্কও অধিক অভিবাসনের ক্ষেত্র হিসেবে কাজ করে। কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, সিলেটের মতো জেলার মানুষ অনেক আগে থেকেই অভিবাসী। নেটওয়ার্কের কারণে এসব জেলা থেকে অভিবাসনও বেশি হচ্ছে।

বাংলাদেশ থেকে বিপুল সংখ্যায় অভিবাসন হলেও বাংলাদেশী পাসপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা এখনো তলানিতে। ‘গ্লোবাল পাসপোর্ট পাওয়ার র্যাংক ২০১৭’ অনুযায়ী, গ্রহণযোগ্যতার নিরিখে বাংলাদেশী পাসপোর্টের অবস্থান ৯০তম। বৈশ্বিক আর্থিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আর্টন ক্যাপিটাল ৯৪টি দেশের মধ্যে এ তালিকা তৈরি করেছে। বাংলাদেশী পাসপোর্ট শক্তিশালী করতে সরকারের উদ্যোগও এক্ষেত্রে সীমিত।

দুর্বল পাসপোর্টের কারণে প্রতিনিয়তই বিভিন্ন বিমানবন্দরে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে বাংলাদেশীদের। মালয়েশিয়ার বিমানবন্দরে এ ধরনের ঘটনা ঘটে গতকালও। সরকারি সফরে একাধিক যুগ্ম সচিবসহ ১২ জন বাংলাদেশী সরকারি কর্মকর্তা এদিন মালয়েশিয়া যান। সফররত সবার সরকারি পাসপোর্ট হলেও মালয়েশিয়ায় কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন কাউন্টার থেকে তাদের অন অ্যারাইভাল ভিসা না দিয়ে পাঠানো হয় ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে। ইমিগ্রেশন পুলিশের দুর্ব্যবহারেরও শিকার হন তারা। একই অভিজ্ঞতার মুখে পড়তে হচ্ছে বিভিন্ন দেশে কাজের উদ্দেশ্যে যাওয়া বাংলাদেশীদেরও।

এসব প্রতিবন্ধকতা নিয়েই বাড়ছে অভিবাসীর সংখ্যা। জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১০ সালে অভিবাসীর শীর্ষ দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ষষ্ঠ। ওই সময় বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশী অভিবাসীর সংখ্যা ছিল ৫৪ লাখ। ৭৫ লাখ অভিবাসী নিয়ে বর্তমানে তালিকার পঞ্চম স্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের মতোই বিশ্বব্যাপী বেড়েছে অভিবাসীর সংখ্যা। জাতিসংঘের সর্বশেষ প্রতিবেদনের হিসাবে, ২০০০ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে বিশ্বব্যাপী অভিবাসী বেড়েছে ৪৯ শতাংশ। ২০০০ সালে মোট অভিবাসীর সংখ্যা ছিল ১৭ কোটি ৩০ লাখ। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ কোটি ৮০ লাখে।

জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অভিবাসীদের বড় অংশেরই জন্ম এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। মোট অভিবাসীর মধ্যে ১০ কোটি ৬০ লাখই এশিয়ার নাগরিক। অভিবাসীর উত্স হিসেবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইউরোপ। এর পরে রয়েছে লাতিন আমেরিকা, ক্যারিবিয়া ও আফ্রিকা।

দেশ হিসেবে অভিবাসনের দিক থেকে ভারতের পর দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মেক্সিকো। দেশটির ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ অভিবাসী হয়েছে। পাশাপাশি রাশিয়ার ১ কোটি ৬ লাখ, চীনের এক কোটি, সিরিয়ার ৬৯ লাখ, পাকিস্তানের ৬০ লাখ, ইউক্রেনের ৫৯ লাখ ও ফিলিপাইনের ৫৭ লাখ নাগরিক বিদেশে থাকে।

গন্তব্য হিসেবে অপেক্ষাকৃত বেশি উপার্জনের সুযোগ রয়েছে, এমন দেশগুলোকেই বেছে নিচ্ছে অভিবাসীরা। অভিবাসীদের পছন্দের তালিকায় সবার ওপরে আছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০০০ সালে দেশটিতে বিভিন্ন দেশ থেকে যাওয়া অভিবাসীর সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৪৮ লাখ। ২০১৭ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৪ কোটি ৯৮ লাখ।

অভিবাসীদের পছন্দের দেশ হিসেবে ২০০০ সালে রাশিয়া দ্বিতীয় অবস্থানে থাকলেও ২০১৭ সালে চতুর্থ স্থানে নেমে এসেছে দেশটি। ২০০০ সালে রাশিয়ায় মোট অভিবাসীর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ১৯ লাখ। ২০১৭ সালে এ সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ১৭ লাখে। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০০০ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে এসে রাশিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থা তুলনামূলক দুর্বল। কর্মসংস্থানের সুযোগও আগের চেয়ে কমেছে।

বর্তমানে অভিবাসীদের পছন্দের দেশ হিসেবে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সৌদি আরব। ২০১৭ সালে দেশটিতে মোট অভিবাসীর সংখ্যা ১ কোটি ২২ লাখ। বাংলাদেশীদের বৈদেশিক কর্মসংস্থানের শীর্ষ বাজারও এটি। দেশটিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ায় অভিবাসনও বেড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এছাড়া অভিবাসীদের পছন্দের তালিকায় ইউরোপের দেশ জার্মানি রয়েছে তৃতীয় স্থানে। ২০০০ সালে দেশটিতে অভিবাসী ছিল বিভিন্ন দেশের ৯০ লাখ মানুষ। চলতি বছর তা বেড়ে হয়েছে ১ কোটি ২২ লাখ।

অভিবাসীদের গন্তব্যের বিষয়ে অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, অভিবাসীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সবসময়ই আকর্ষণীয় গন্তব্য। দেশটির আর্থসামাজিক অবস্থা, জীবনযাপনের মান, কাজের সুযোগ বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে লোভনীয়। এ কারণে বরাবরের মতোই অভিবাসনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে বেছে নিচ্ছে মানুষ।

সৌদি আরবের বিষয়ে তিনি বলেন, শ্রমবাজারটি অনেক বড়। কারণ তাদের নিজস্ব শ্রম সরবরাহ কম। একইভাবে অন্যান্য হোস্ট কান্ট্রির ক্ষেত্রেও শ্রমবাজারের চাহিদা ও সরবরাহের ওপর নির্ভর করেই অভিবাসন বাড়ে-কমে।

সূত্র : বণিক বার্তা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়