শিরোনাম
◈ জুলাই অভ্যুত্থানের সেই ঐক্য কোথায়? ◈ ব্রিটিশদের ‘নাকানিচুবানি’ দিতে ইরানের এক দশকের ‘ছায়া যুদ্ধ’: যেভাবে চলছে যুক্তরাজ্যের ভেতরে গোপন তৎপরতা ◈ চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার জাকির হোসেন বরখাস্ত, আরও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা ◈ এবার অঝোরে কাঁদলেন মিসাইল ম্যান কিম জং উন (ভিডিও) ◈ জুলাই নিয়ে ‘আপত্তিকর’ ফেসবুক পোস্ট: পুলিশের বিরুদ্ধে ছাত্রদের অবরোধ-বিক্ষোভ ◈ নতুন উচ্চতায় রেমিট্যান্স: ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবাসী আয়ের সর্বোচ্চ প্রবাহ ◈ ডলারের দরপতনে রেকর্ড, ১৯৭৩ সালের পর সবচেয়ে বড় পতনে বিশ্ববাজারে আস্থার সংকট ◈ “৭১-এর মুক্তিযোদ্ধাদের মতোই চব্বিশের যোদ্ধাদেরও জাতি ভুলবে না” — তারেক রহমান ◈ গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে ঐক্য বজায় রাখার আহ্বান খালেদা জিয়ার ◈ শ্রীলঙ্কার বিরু‌দ্ধে বুধবার  সি‌রি‌জের প্রথম ওয়ানডে ম‌্যা‌চে  মু‌খোমু‌খি  বাংলাদেশ

প্রকাশিত : ১৯ নভেম্বর, ২০১৭, ০৮:৪৫ সকাল
আপডেট : ১৯ নভেম্বর, ২০১৭, ০৮:৪৫ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কৃষিজমি না থাকলে খাদ্য পাব কই?

মোহাম্মদ অংকন : আমার বাবা একজন কৃষক। বাবার সঙ্গে ফোনে কথা হলো। তার মনটা বেশ খারাপ। জানতে চাইলে, বাবা বললেন, এবার জমির ফসল একদম ভালো হয়নি। ক্রমশ জমির ফসল কমে আসছে। কেন কমে আসছে, জানতে চাইলে বাবা বললেন, তার জমির পাশের জমিগুলো আর কৃষি জমি থাকলো না। প্রায় কৃষি জমিতে ইট-ভাটা তৈরি করা হয়েছে। ফলে পার্শ্ববর্তী জমিগুলোর ফসল ভালো হচ্ছে না। জমির উর্বরতা কমে যাচ্ছে। কৃষি জমিতে কেউ ইট-ভাটা করে আনন্দিত আর কেউ কৃষি জমি হারিয়ে যাচ্ছে ভেবে চিন্তিত। এভাবে কৃষি জমি হারানোর কি কোনো মানে হয়?

আমরা জানি, কৃষি প্রধান দেশ হিসাবে বাংলাদেশ সুপরিচিত। এ দেশের ৬৮ শতাংশ মানুষের জীবন-জীবিকার প্রধান উত্স হলো কৃষি জমি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এই কৃষি জমির পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে। কেন এই কৃষি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে? প্রশ্নটা সহজ মনে হলেও উত্তরটা হয়তো বেশ জটিল। এর নেপথ্যের কারণগুলো না জানলে কৃষি জমি রক্ষা করার কোনো উপায় খুঁজে পাওয়া যাবে না।

আমি কোনো বিশেষজ্ঞ নই। কৃষি জমি কেন কমছে এ বিষয়ে তবুও দু’চারটে অভিমত দিতে চাই। কৃষি জমি কমে আসার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্পায়ন, নদী ভাঙন, আবাসন ও অবকাঠামো নির্মাণ প্রভৃতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এসব কারণে সত্যই যদি কৃষি জমির পরিমাণ কমে আসে তাহলে আমাদের দেশে খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করি।

বাংলাদেশের কৃষি পরিসংখ্যান বলছে, দেশে মোট কৃষি জমির পরিমাণ ৮৫ লাখ ২০ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে প্রতিবছর দেশের ৬৮ হাজার ৭৬০ হেক্টর চাষাবাদযোগ্য জমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। স্বাধীনতার ৪৭ বছরে জমির পরিমাণ ১২ লাখ ৪২ হাজার হেক্টর কমেছে। বাণিজ্যিক কারণে প্রতিদিন গড়ে ৬৯২ একর, নির্মাণ কাজের কারণে এক হাজার হেক্টর জমি বিলীন হচ্ছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী এভাবে যদি কৃষি জমি কমতে থাকে, তবে একটা সময় দেশে ব্যাপক হারে খাদ্য সংকট দেখা দেবে। শুধু তাই নয় বিপুল সংখ্যক মানুষ উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে। এখন যে পরিমাণ বেকার লোক রয়েছে তার হার আরও বৃদ্ধি পাবে।

ইতোমধ্যে দেখা গেছে, কৃষি জমি হারিয়ে অনেকে ভিন্ন পেশা বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছে। কৃষি নির্ভরতায় তাদের দিনাতিপাত কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। কৃষি জমি কম, কাজও কম। সকলের ধারণা, কৃষি জমি সুরক্ষা আইন না থাকায় কৃষি জমি কমছে। যে যেভাবে পারছে, জমি বিনষ্ট করে চলেছে। কৃষি জমিতে পুকুর খনন করতে শুরু করে দিয়েছে। কেউবা ইটভাটা তৈরি করছে। এমন চিত্র আমাদের নাটোর জেলায় প্রচুর লক্ষ করেছি। অথচ ভূমি রক্ষায় রাষ্ট্রের সমন্বিত কোনো পরিকল্পনা নেই বললেই চলে।

বাংলাদেশে মোট ভূমির পরিমাণ ৩ কোটি ৫৭ লাখ ৬৩ হাজার একর। এ জমির সিংহভাগই কৃষি জমি। দুঃখের বিষয়, আমরা কৃষি জমি ধরে রাখতে পারছি না। সরকার কৃষি জমি ধরে রাখার কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করছে না। যে হারে জমি কমছে, তা যদি নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তবে দেশে অচিরেই খাদ্য সংকট দেখা দিবে। কৃষি জমি হতে সরাসরি প্রাপ্ত ফসলই আমাদের জীবিকার প্রধান উত্স। এ কথাটি সকলের মাথায় রাখতে হবে।

আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। এমন স্লোগান আজকাল পথেঘাটে উচ্চকণ্ঠে বলতে শোনা যায়। এ নিয়ে গর্ব করারও শেষ নেই। যারা এভাবে গর্ব করে, তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, খাদ্যের প্রধান উত্স কৃষি জমি রক্ষা করতে না পারলে গর্ব করার বাহন মিলিয়ে যেতে হয়তো বেশি সময় লাগবে না। ইদানীং নদ-নদীর নাব্যতা কমে যেতে শুরু করছে। উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততা দেখা দিয়েছে। এমন হলে কৃষক কি ঠিকমতো ফসল ফলাতে পারবে? কখনই পারবে না। তার উপর যথেচ্ছাচারে যদি বিদ্যমান কৃষি জমি নষ্ট করা হয়, তবে কী উপায় হবে!

সেদিন একটি পত্রিকায় পড়লাম, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে খাল কেটে মরুভূমিতে ফসল ফলানো হচ্ছে। এটি একটি ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া। তবুও তাদের চেষ্টার কমতি নেই। আবার ভিয়েতনামের এক শহর থেকে আরেক শহরে যেতে জমির উপর দিয়ে ফ্লাইওভার নির্মাণ করছে। যাতে কৃষি জমি রক্ষা পায়। দেখুন, কৃষি নিয়ে বিদেশিদের ভাবনা কতটা সুদূরপ্রসারী। তার বিপরীতে প্রকৃতিগতভাবে আমাদের দেশ কৃষি উপযোগী হওয়া সত্ত্বেও আমরা কৃষি জমিকে নষ্ট করছি। কৃষিকে অবহেলা করছি। এর পরিণাম ভয়াবহ হবে।

আমাদের কৃষকেরা কতটা ভাগ্যবান তা এ দেশের সোনার মাটিই বলে দেয়। এ দেশের মাটি উর্বর। কৃষির জন্য বেশ উপযোগী। এ দেশের জমিগুলোতে কোনো ধরনের চাষ ছাড়াই বীজ ফেলে রাখলে গাছ জন্মে যায়। কোনো কোনো জমিতে বছরে দুইবারের অধিক ফসল ফলানো যায়। এমন উর্বর দেশ পৃথিবীর আর কোথাও দেখা যায় না। অথচ বছরের পর বছর ধরে প্রকৃতির এই অপার দান স্বেচ্ছায় ধ্বংস করা হচ্ছে। যেখানে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি উদ্বৃত্ত ফসল রপ্তানি করার অপার সুযোগ রয়েছে, সেখানে কৃষি জমি ধ্বংসের এই প্রক্রিয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

বাংলাদেশের ভূমির অনুপাতে লোকসংখ্যা অনেক বেশি। প্রতিবছর প্রায় ২৫ লাখ মানুষ বাড়ছে। কিন্তু কৃষি জমি এক শতাংশও বাড়ছে না। আর বাড়ানোরও কোনো সুযোগ দেখছি না। যেসব কৃষি জমি দখল হয়ে গেছে তা ফেরানো সম্ভব নয়। কেউ স্থাপনা, কারখানা ভেঙে কৃষি জমি উদ্ধার করবে না। বরং উল্টোটা করতে সবাই আগ্রহী। মাঝে মাঝে সমুদ্রে দ্বীপ এবং নদীতে চর জেগে উঠার কথা শোনা গেলেও সেগুলো কবে চাষযোগ্য হবে তা নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। সে আশায় বসেও থাকা যায় না। ফলে আমাদের বিদ্যমান কৃষি জমির দিকেই দৃষ্টি দিতে হবে। এসব জমি আর হাতছাড়া করে যাবে না। কোনোভাবে হাতছাড়া হলে খাদ্য সংকট যে তীব্র হয়ে উঠবে, তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।

তাই কৃষি জমির এমন বেহাল অবস্থায় জমিগুলো রক্ষায় সরকারকে সুনির্দিষ্ট আইন দ্রুত প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। খবর পেলাম, ছয় বছর ধরে কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইন ঝুলে আছে। এটা কোনোভাবেই সমীচীন হতে পারে না। অপরিকল্পিত নগরায়ন, শিল্পায়ন, আবাসন ও অবকাঠামো নির্মাণের রাশ টেনে ধরতে হবে। কৃষি জমি বাঁচিয়ে পরিকল্পিতভাবে এসব কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করতে হবে। যে জমি থেকে মানুষের খাদ্যের চাহিদা পূরণ হয়, সে জমি যে-কোনো মূল্যে রক্ষা করতে হবে। দৃষ্টিতে মনে হতে পারে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, তবে যেভাবে অলক্ষ্যে কৃষি জমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে, তাতে সংকট দেখা দিতে খুব বেশি সময় লাগবে না। দেশের মানুষের খাদ্য সংস্থান যে জমি থেকে হয়, সে জমি কেন আমরা নষ্ট করব?

n লেখক :শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজি (বিইউবিটি)।ইত্তেফাক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়