রাজধানীতে ভূমিকম্পের ঝাঁকুনিতে আতঙ্কিত হয়ে দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে নামতে গিয়ে, মাথা ঘুরে পড়ে কিংবা ভারী বস্তু চাপা পড়ে হাত-পা ভেঙে এখন পর্যন্ত ৯০ জন জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৮ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আজ শুক্রবার (২১ নভেম্বর) পঙ্গু হাসপাতালে গিয়ে এমন তথ্য পাওয়া যায়।
সারাদেশে আজ সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে এর মাত্র ছিল ৫ দশমিক ৭। নরসিংদীর ঘোড়াশালে এর উৎপত্তিস্থল বলে জানা গেছে।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ভূমিকম্পে আতঙ্কিত হয়ে দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে নামতে গিয়ে, মাথা ঘুরে পড়ে ও ভারী বস্তু চাপা পড়ে আহত হয়েছেন অনেকে। আহতদের চিকিৎসায় লম্বা সারি পড়েছে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (পঙ্গু হাসপাতালে)। বিকেল সাড়ে ৬টা পর্যন্ত রাজধানী ও আশেপাশের জেলা থেকে এই হাসপাতালে ভূমিকম্প থেকে নামতে গিয়ে, ভবন থেকে পড়ে, কোনো কিছুর আঘাতে আহত ৯০ জন রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে
আজকের ভূমিকম্পে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এক বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি জানায়, দেশের বিভিন্ন জেলায় আহত হয়ে এখন পর্যন্ত ২০৮ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে পুরান ঢাকার বংশাল এলাকায় তিনজন, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে এক শিশু ও নরসিংদীর পলাশের মালিতা গ্রামে এক বৃদ্ধ মারা গেছেন।
কালাচাঁদপুর থেকে আসা ৫০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে পড়ে কোমরের হাড়ে গুরুতর আঘাত পান। আব্দুল্লাপুরের ইয়াসিন আরাফাত জানান, অফিসে কাজ করার সময় ভূমিকম্পে আলমারি তার ওপর পড়ে ডান হাত ভেঙে গেছে।
নতুন বাজার বেড়াইতের তানজিমা ফেরদৌস (৪০) মাথা ঘুরে পড়ে কোমরে আঘাত পান। মিরপুর–৬ এর মনিম সিঁড়ি থেকে পড়ে বাম পা ভেঙে ফেলেছেন।
সিদ্ধিরগঞ্জের মুড়ি বিক্রেতা আবদুস সোবহান জানান, চায়ের দোকানে ছিলাম, মাথা ঘুরে দৌড় দিতে গিয়ে পড়ে—বাম পা-টা ভেঙে গেছে। এ ছাড়া বসুন্ধরা, রামপুরা, হাতিরঝিলসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বহু আহত পঙ্গু হাসপাতালে সেবা নিতে আসেন।
পঙ্গু হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স লক্ষ্মী রানী দাস বলেন, বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত ৮৩ জন ভূমিকম্পে আহত হয়ে সেবা হয়েছেন। বেশিরভাগ রোগীই হাত–পা ফ্র্যাকচার, কোমর, সোল্ডার জোড়া সরে যাওয়াসহ বিভিন্ন অস্থি–সংক্রান্ত ইনজুরিতে ভুগছেন।
সন্ধ্যায় পঙ্গু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কেনান বলেন, হাসপাতালে আসা রোগীদের বেশির ভাগেরই হাত–পা ভাঙাসহ বিভিন্ন ধরনের আঘাত রয়েছে। এ পর্যন্ত ৯০ জনকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে। গুরুতর আহত হওয়ায় ১৮ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
ডা. কেনান বলেন, আহতদের অধিকাংশই ঢাকার আশেপাশের এলাকার বাসিন্দা। যাদের অবস্থা তুলনামূলকভাবে হালকা, তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।