লাবিব হোসেন: মানুষের দেহে রক্তের প্রয়োজনীয়তা অপরিমাপযোগ্য। বিভিন্ন দুর্ঘটনায় আহত বা রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি, কিংবা দুর্লভ রক্তে আক্রান্ত ব্যক্তিরাই জানে রক্তের প্রয়োজনীয়তা ঠিক কতটা। সূত্র: একাত্তর টিভি
[২] রক্তদান কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতি বছর বিশ্বে ১০ কোটি ৭০ লাখ ব্যাগের বেশি রক্ত সংগৃহীত হয়। বিশ্বস্বাস্থ সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, মানুষের জীবন রক্ষায় ব্যবহার হয় এই রক্ত। কিন্তু উন্নয়নশীল অনেক দেশেই প্রয়োজনের সময় সংগৃহীত রক্ত পাওয়া যায় না। আবার শিল্পোন্নত দেশে রক্তের স্বল্পতাও দেখা যায়। সে কারণেই মানুষ বহু শতাব্দী আগে থেকেই মানুষ রক্তের বিকল্পের খোঁজ বা কৃত্রিম রক্তের খোঁজে রয়েছে। এমন কি পশু রক্তকে মানুষের রক্তের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার যায় কি না, তা নিয়েও চলেছে গবেষণা।
[৩] ১৯৬০ এর দশকে ৮০ ভাগ কৃত্রিম রক্ত নিয়ে বেঁচেছিলো ল্যাবে পরীক্ষা চালানো কিছু প্রাণী। তখন ভাবা হয়ে ছিলো কৃত্রিম রক্ত মানুষের সমস্যার সমাধান করতে পারবে। ‘পারফিউরো কার্বন’ এটি রক্তের মতই শরীরের অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারতো।
[৪] জাপান এই রক্তের উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু এই গল্পের শেষটা ভালো হয়নি। কারণ ‘পারফিউরো কার্বন’ কিডনি ও শরীরের অন্যান্য অঙ্গের ক্ষতি করে থাকে। তাই এই অধ্যায় এর সমাপ্তি ঘটে ওইখানেই। ১৯৯৪ সালে কৃত্রিম রক্ত বাজার থেকে সরিয়ে নেয়া হয়।
[৫] সতেরো শতাব্দীতে চিকিৎসকরা রক্তের বিকল্প হিসেবে লবণ, দুধ, প্রস্রাব এবং বিয়ারের ব্যবহার করতো। কিন্তু রোগী বাঁচানো যেতো না। ১৮১৮ সালে ‘জেমস ব্যান্ডেল’ নামে একজন ইংরেজ ধাত্রীবিদ্যা বিসারদ রক্ত পরিসঞ্চালনের জন্য একটি যন্ত্র আবিষ্কার করে। যা দিয়ে একজন সুস্থ মানুষের দেহ থেকে অন্যজন মৃত্যু পথযাত্রীর দেহে রক্ত পরিসঞ্চালন করে তাকে বাঁচিয়ে তোলা হয়। তিনিই প্রথম বলে একজন মানুষের শরীরে কেবল আরেকজন মানুষের রক্তই দেওয়া যাবে।
[৬] ১৯০১ সালে ‘ডা. কার ল্যান স্টেইনার’ দেখায় মানুষের রক্তের প্রধানত চারটি গ্রুপ রয়েছে সেগুলো হলো এ, বি, এবি, এবং ও। এরপর ১৯০২ সালে রক্ত দেয়াকে নিরাপদ বলে স্বীকৃতি দেয়া হয়। ১৯৭০ এবং ১৯৮০ এর দশকে রক্তদানের সময় শুধুমাত্র জার্মানিতে হাজার হাজার লোক হেপাটাইটিস এবং এইডসে আক্রান্ত হন। এসব সমস্যার সমাধান হতে পারে কৃত্রিম রক্ত।
[৭] ২০২২ সালে কৃত্রিম উপায়ে রক্ত তৈরি করে ব্রিটিশ গবেষকরা। প্রাথমিক ভাবে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দুইজনের শরীরে এই রক্ত দেয়া হয়েছিলো। ফুসফুস থেকে যেসব লোহিত রক্ত কনিকা শরীরে রক্ত সরবরাহ করতো তা নিয়েই করা হয়ে ছিলো এই গবেষণা। কিছু কিছু রক্তের গ্রুপ এতোটাই বিরল যে পুরো যুক্তরাজ্যে মাত্র ১০ জন মানুষ তা দিতে পারেন। এ গবেষণা সফল হলে যাদের রক্তের গ্রুপ বিরল তারা আর রক্তের অভাবে মারা পরবে না। সম্পাদনা: রাশিদ
আপনার মতামত লিখুন :