এল আর বাদল : সঠিক মাত্রায় ঘুম না হলে ক্রমাগত শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন একজন মানুষ। যার ফলে একটি সুন্দর জীবনও বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে। সাধারণত ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমকে স্বাভাবিক ধরা হয়। কিন্তু তাই বলে টানা এক মাস ঘুম! শুনে অবাক লাগলেও বাস্তবে এমন এক গ্রাম আছে। যে গ্রামের মানুষ টানা ১ মাস পর্যন্ত ঘুমান। -- নিউজ১৮
কাজাখস্তানের কালাচি গ্রামের মানুষরা একবার ঘুমালে সহজে ঘুম থেকে ওঠেন না। এমনকি মাসের পর মাস পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকেন। তাই এই গ্রামকে স্লিপি হোলো বলা হয়।
কালাচি গ্রামে কোনও ব্যক্তি একবার ঘুমিয়ে পড়লে অন্তত এক মাস জাগে না। তাই এই গ্রামটি সারা বিশ্বে স্লিপি হোলো নামেও পরিচিত। এই গ্রামের কিছু মানুষের অবস্থা এমন যে, ঘুমিয়ে গেলে বহু চেষ্টার পরেও তাদের আর জাগানো যায় না।
কালচির লোকেরা অবশ্য এই দীর্ঘ এবং গভীর ঘুম একেবারেই উপভোগ করেন না, বরং তারা এতে খুবই কষ্ট পান। অনেক সময় এমনও হয়েছে যে একজন মানুষ রাস্তার মাঝখানে ঘুমিয়ে পড়েছে। তারপর বহু মাস সেখানেই ঘুমিয়ে রয়েছেন।
কালাচি গ্রামের মোট জনসংখ্যা প্রায় ৬০০। কিছু গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোট জনসংখ্যার ১৪ শতাংশের দীর্ঘ ও গভীর ঘুমের সমস্যা রয়েছে। তবে কোথা থেকে তাদের চোখে এত ঘুম আসে সেটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন।
পরিবেবিদরা মনে করছেন এই গ্রামের ভৌগলিক পরিবেশ এমন যে এখানকার বাসিন্দারা এই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকেন। তবে এবার আসল চমক। এই এক মাস ধরে ঘুমিয়ে থাকার পরও এই গ্রামের বাসিন্দাদের শরীর খারাপ হয় না। তাদের এই সময় কোনও খিদে পায় না। তারা আগে থেকেই জানেন তাদের এই পরিস্থিতি দিয়ে যেতে হবে বছরের একটি মাস তাদেরকে এক মাস ঘুমিয়ে কাটাতে হবে। তাই তারা আগে থেকেই নিজেদের তৈরি করে রাখেন।
এই ঘুমের অসুস্থতার রহস্যময় ঘটনাটি প্রথম ২০১৪ সালে প্রকাশিত হয়, যখন দেখা যায় যে গ্রামের জনসংখ্যার প্রায় এক পঞ্চমাংশ ব্যক্তি "স্লিপ সিনড্রোম" এ আক্রান্ত। ২০১৫ সালের মধ্যে, অর্ধেকেরও বেশি বাসিন্দা গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন, কারণ তারা এই রোগের প্রকোপ থেকে বাঁচতে চেয়েছিলেন।
এই রোগের কারণ অনুসন্ধানে জানা যায় যে, গ্রামের কাছাকাছি একটি ইউরেনিয়াম খনি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে এমনটি হচ্ছে। এই খনি থেকে নির্গত রেডন গ্যাস সম্ভবত এই অসুস্থতার কারণ। কালাচি গ্রামের এই অদ্ভুত ঘটনাটি বিশ্বজুড়ে মনোযোগ আকর্ষণ করেছে এবং এর কারণ অনুসন্ধানে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করছেন।