শিরোনাম
◈ কুমিল্লায় বিদেশ থেকে ছুটিতে এসে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন আবুল হাসান ◈ মোবাইল হ্যাকিংয়ের শিকার মোল্লাহাটের ইউএনওসহ সরকারি কর্মকর্তারা, জনসাধারণকে সতর্ক থাকার আহ্বান ◈ কুমিল্লার লালমাইয়ে বিয়ের নাম ভাঙ্গিয়ে বরপক্ষকে মারধর ও লুটপাটের ঘটনায় কনে পক্ষের বিরুদ্ধে থানায় মামলা ◈ এবার এআই ব্যবহার করে পুঁজিবাজারে প্রতারণা, বিনিয়োগকারীদের বিএসইসির সতর্কবার্তা ◈ ডিপ্লোমা-বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের সংকট সমাধানে কাজ করছে সরকার: উপদেষ্টা ◈ রাতে ঢাকাসহ যেসব জেলায় ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের আভাস ◈ টি-টো‌য়ে‌ন্টি ফর‌মে‌টের জাতীয় ক্রিকেট লিগ ১৪ সেপ্টেম্বর শুরু হবে, সূচি প্রকাশ ◈ ক‌ঠিন প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ‌কে হারা‌নো ক‌ঠিন: নেদারল‌্যান্ডস অ‌ধিনায়ক এডওয়ার্ডস ◈ অস্ত্র পরিষ্কারের সময় রাজশাহী পুলিশের এক কর্মকর্তা গুলিবিদ্ধ ◈ পুরাতনকে বিতাড়িত করেছি, এবার নতুন ইস্যু: মোহাম্মদ তাহের

প্রকাশিত : ২৮ আগস্ট, ২০২৫, ১০:২২ দুপুর
আপডেট : ২৮ আগস্ট, ২০২৫, ০৬:০০ বিকাল

প্রতিবেদক : এল আর বাদল

নতুন আই‌নে অনলাইন গে‌মিং বিল পাস হওয়ায় ভার‌তের ক্রিকেট শি‌ল্পে ২০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি

স্পোর্টস ডেস্ক : ভারতে পাস হয়েছে ‘অনলাইন গেমিং বিল’। নতুন আইনে ২০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি হবে কেন্দ্রীয় সরকারের। ধাক্কা ভারতের ক্রিকেটশিল্পেও। মোটা টাকা হারাবেন বিরাট কোহলি-মহেন্দ্র সিংহ ধোনিরা।

ড্রিম ১১’-সহ সকল ফ্যান্টাসি স্পোর্টস অ্যাপ বা ‘রিয়েল গেমিং অ্যাপ’ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ভারতীয় দলের মূল স্পনসর হিসাবে সরে গিয়েছে ‘ড্রিম ১১’। তবে এটা স্রেফ ভগ্নাংশমাত্র। ভারতের এই নতুন আইনের ফলে গোটা ক্রিকেটশিল্পই বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে। আইপিএল-সহ যে সব লিগ এই ধরনের অ্যাপের থেকে পাওয়া অর্থের উপরে বেঁচে থাকে, তাদের মাথায় হাত পড়েছে। এই সংস্থাগুলিই আসলে ক্রিকেটের ‘অক্সিজেন বাহক’। সমস্যায় পড়েছেন অনেক ক্রিকেটারও। লোভনীয় সব চুক্তি হাতছাড়া হয়ে যেতে চলেছে।

কেন অ্যাপ নিষিদ্ধ করল সরকার?

গোটা দেশে অসংখ্য ফ্যান্টাসি স্পোর্টস অ্যাপ রয়েছে। অনলাইনে টাকার বিনিময়ে এই গেমগুলি খেলে অর্থ রোজগার করা যেত। কেন্দ্রীয় সরকারের ধারণা, এই অ্যাপগুলি লাভের টাকার একাংশ খরচ করে সন্ত্রাসবাদে মদত দেওয়ার মতো একাধিক অনৈতিক কাজে। তাই আইন করে এই ধরনের অ্যাপ নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, অনেকেই এই অ্যাপে টাকা লাগাতে গিয়ে প্রচুর অর্থ হারিয়েছেন। দেশের বিভিন্ন জায়গায় আত্মহত্যার খবরও শোনা গিয়েছে। 

শুধু অ্যাপগুলিই নিষিদ্ধ হয়নি, তাদের প্রচারও করা যাবে না। ভারত সরকার রাজস্ব বাবদ ২০ হাজার কোটি টাকা হারাতে চলেছে। কারণ এই অ্যাপগুলি থেকে যাঁরা অর্থ রোজগার করতেন, তাঁদের কর হিসাবে একটা অংশ সরকারকে দিতে হত।

সমালোচকদের দাবি, অনলাইন গেমিংয়ের জন্য যদি এতই সমস্যা হয়, তা হলে আইন এনে মদ, জুয়া এবং ক্যাসিনোও বন্ধ করে দেওয়া উচিত। তবে সরকারের সিদ্ধান্তকে নড়ানো যায়নি।

কাদের সঙ্গে কত টাকার চুক্তি ছিল বোর্ডের?

২০২৩-এ অনলাইন শিক্ষামূলক সংস্থা ‘বাইজুস’-এর সঙ্গে ভারতের চুক্তি শেষ হয়। তার পরেই ‘ড্রিম ১১’-এর সঙ্গে চুক্তি করে ভারতীয় বোর্ড। তিন বছরের চুক্তি ছিল। ২০২৩-২০২৬ পর্যন্ত ভারতীয় দলের মূল স্পনসর থাকার জন্য ৩৫৮ কোটি টাকা বোর্ডকে দেওয়ার কথা ছিল ‘ড্রিম ১১’-এর। আর এক ফ্যান্টাসি স্পোর্টস অ্যাপ ‘মাই১১সার্কল’-এর সঙ্গে বোর্ডের চুক্তি হয়েছিল ৬২৫ কোটি টাকার। 

মাই১১সার্কল’ আইপিএলের প্রধান স্পনসর হিসাবে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল। পাঁচ বছর মেয়াদ ছিল সেই চুক্তির। প্রতি বছর বোর্ড ১২৫ কোটি টাকা করে পেত। ফলে দু’টি সংস্থা মিলিয়ে বোর্ডের ক্ষতি ৯৮৩ কোটি টাকার। 

কাদের সঙ্গে কোন সংস্থার চুক্তি?

রোহিত শর্মা, জসপ্রীত বুমরাহ, কেএল রাহুল, ঋষভ পন্থ এবং পাণ্ড্য ভাই— হার্দিক ও ক্রুণালের সঙ্গে ‘ড্রিম ১১’-এর চুক্তি রয়েছে। শুভমন গিল, মহম্মদ সিরাজ, যশস্বী জয়সওয়াল, রুতুরাজ গায়কোয়াড়, রিঙ্কু সিংহ এবং সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে ‘মাই১১সার্কল’-এর। বিরাট কোহলি চুক্তিবদ্ধ ছিলেন ‘এমপিএল’-এর সঙ্গে। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি বিজ্ঞাপন করেছেন ‘উইনজ়ো’-র হয়ে। আরও অনেকে বিভিন্ন অ্যাপের প্রচার করতেন। সকলেই তাঁদের চুক্তি হারাতে চলেছেন।

কার কত টাকা ক্ষতি?

পণ‌্য বিপণনের জন্য এক-একজন ক্রিকেটার এক-এক রকম অর্থ নেন। কোহলির চুক্তির পরিমাণ বার্ষিক ১০-১২ কোটি টাকা। ধোনি নেন ৬-৭ কোটি টাকা। তুলনায় তরুণ এবং অপরিচিতেরা নেন বছরে ১ কোটি। সব মিলিয়ে, ভারতীয় ক্রিকেটারেরা বার্ষিক ১৫০-২০০ কোটি টাকা হারাতে চলেছেন।

 কারণ এই ধরনের কোনও অ্যাপেরই আর প্রচার করা যাবে না। কোহলি, ধোনির মতো নামী ক্রিকেটারদের খুব একটা প্রভাব পড়বে না। কারণ অন্যান্য বিজ্ঞাপন থেকে তাঁদের আয় ভালই। গেমিং অ্যাপ থেকে হয়তো বার্ষিক রোজগারের ৫-১০ শতাংশ আসে। তবে অনেকের ক্ষেত্রেই ক্ষতির পরিমাণ বিরাট।

৫০-১০০ শতাংশ অর্থ হারাতে চলেছেন কেউ কেউ। সিরাজ কিছু দিন আগে পর্যন্ত মাত্র তিনটি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। অর্থাৎ বিজ্ঞাপন বাবদ তাঁর রোজগারের ৩৩ শতাংশ অর্থ ক্ষতি হল। ওয়াশিংটন সুন্দরও তিনটি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। অনেকেই আছেন যাঁদের সঙ্গে চুক্তি ছিল শুধু গেমিং অ্যাপেরই। তাঁদের পুরো উপার্জনই জলে যেতে চলেছে।

আইপিএল এবং ক্রিকেটের উপর প্রভাব

বোর্ডের মূল স্পনসর হারানো প্রধান ধাক্কা। পাশাপাশি আইপিএল হারাবে ‘মাই১১সার্কল’কে, যারা প্রতি বছর বোর্ডকে ১২৫ কোটি টাকা করে দিত। পাঁচ বছরের চুক্তিতে আর তিন বছর বাকি ছিল। ফলে বোর্ডকে আইপিএলের সহযোগী স্পনসর খুঁজতে হবে। কলকাতা, লখনউ এবং হায়দরাবাদের মতো দলগুলি গেমিং সংস্থা থেকে বছরে ১০-২০ টাকা রোজগার করত। সেটাও থাকছে না। লেজেন্ডস লিগ এবং বিভিন্ন রাজ্যের ছোটখাটো লিগেও যে সব গেমিং অ্যাপ টাকা ঢালত, সে সবও বন্ধ হয়ে যাবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আইনের ফলে বিজ্ঞাপন শিল্পে বছরে ৮-১০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হবে।

এক সংস্থার মুখ্যকর্তা করণ তৌরানি ‘ক্রিকবাজ়‌’ ওয়েবসাইটে বলেছেন, “সার্বিক বিজ্ঞাপনী খরচে এই গেমিং সংস্থাগুলি বাজারের ৭-৮ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করত। তার ৮০ শতাংশই উবে যাবে। কারণ গেমিং বাজারের ৮০ শতাংশই নিয়ন্ত্রণ করে রিয়েল গেমিং অ্যাপগুলিকে, যেখানে টাকা দিয়ে খেলতে হয়। তাই এটা বড়সড় ক্ষতি।” ক্রিকেটারদের সম্পর্কে তিনি বলেছেন, “ওই সংস্থাগুলো প্রচুর টাকা খরচ করত ক্রিকেটারদের পিছনে। তাই ক্রিকেটারদের রোজগার মার খাবে। ব্র্যান্ড ভ্যালু কমবে। সার্বিক ভাবে ২০-২৫ শতাংশ রোজগার কমবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়