একসঙ্গে তিন ফরম্যাটে অলরাউন্ডারদের শীর্ষে ওঠা একমাত্র ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগগুলোতে তার চাহিদাও ছিল বাকিদের চেয়ে অনেক বেশি। আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের দু’বারের শিরোপা জয়ে অন্যতম কাণ্ডারি ছিলেন সাকিব। জাতীয় দলের খেলার সময়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগে ব্যস্ত থাকায় তাকে নিয়ে নানা সমালোচনা হয়েছে একসময়। সেই সাকিবের এখন খেলার জায়গার অভাব পড়ছে! জাতীয় দলে অনিশ্চিত, আইপিএল, বিগব্যাশে নেই, কাউন্টিতে আছে নানা যদি-কিন্তু! একে একে সব দরজা বন্ধ হচ্ছে, তাহলে বাংলাদেশের এই সাবেক অধিনায়ক এখন খেলবেন কোথায়! গত ২৪ ও ২৫শে নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগের (আইপিএল) নিলাম।
বাংলাদেশ থেকে নাম দেয়া ১২জন ক্রিকেটারদের মধ্যে শুধু নিলামে ডাকা হয় মোস্তাফিজুর রহমান ও রিশাদ হোসেনের। তাদের কারও প্রতিই আগ্রহ দেখায়নি কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি। একসময় আইপিএলে সাকিবই ছিলেন বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি। অথচ সেই সাকিবের এবার ডাকই হলো না! ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলা, ফর্মও পড়তে শুরু করেছে এমন সময় অনেক তারকা ক্রিকেটারই আইপিএলে অবিক্রিত থেকে যান। ক্রিস গেইলও এমন তেতো স্বাদ পেয়েছেন, এবারের আসরে অবিক্রিত থেকে গেছেন ডেভিড ওয়ার্নারও।
যার আইপিএলে সর্বোচ্চ ৬২টি ফিফটি। অধিনায়ক হিসেবে সানরাইজার্স হায়দরবাদকে চ্যাম্পিয়ন করেছেন। রান আছে সাড়ে ৬ হাজারের বেশি। তবে সাকিবের মতো ডাকই হয়নি, এমন স্বাদ তার মানের ক্রিকেটার পেয়েছেন এমন সংখ্যা খুব একটা নেই! অবশ্য আইপিএলে গেলো কয়েক বছর ধরেই অনিয়মিত সাকিব। গত দুই আসরে খেলেননি, তার আগের আসরে সুযোগ পান মাত্র ২ ম্যাচ। আইপিএলে পরে নাম আসে বিগব্যাশের। সেখানেও সাকিবের জন্য দরজা বন্ধ। ২০১৯ সালে ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পেয়ে গোপন করায় তাকে দুই বছরের (এক বছরের স্থগিত) নিষিদ্ধ করে আইসিসি। পরের বছর তাকে লীগে নিতে আপত্তি জানায় ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) নৈতিক পুলিশ।
নিজ দেশের টুর্নামেন্ট বিপিএলে অবশ্য ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম কিংস তাকে দলে ভিড়িয়েছে। কিন্তু সাকিব বিপিএলে খেলবেন এমন নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারছে না। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মিরপুরে শেষ টেস্ট খেলতে চেয়েছিলেন সাকিব। কিন্তু জনরোষে নিরাপত্তা ইস্যুতে দেশেই ফিরতে পারেননি তিনি। কারণ, গত ৫ই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের একজন সংসদ সদস্য ছিলেন সাকিব। যে কারণে তাকে বাংলাদেশের জার্সিতে খেলতে না দেয়ার আবেদন করে ছাত্র-জনতা। শেষ পর্যন্ত তার খেলা হয়নি। সেক্ষেত্রে বিপিএল খেলতেও তিনি দেশে ফিরবেন এমন কথা জোর গলায় কেউ বলতে পারছেন না। বাকি থাকে পাকিস্তান প্রিমিয়ার লীগ (পিএসএল), ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লীগের (সিপিএল) মতো টুর্নামেন্ট। কোনোটিতেই সাম্প্রতিক সময়ে সাকিব নিয়মিত নন। সিপিএলে কয়েক ম্যাচ খেললেও পিএসএলে অনেকদিন ধরেই দেখা যায় না তাকে।
পিএসএলে ৮ বছরে মাত্র ১৪ ম্যাচ খেলেছেন তিনি আর সিপিএলে ৩৬। মেজর লীগ ক্রিকেট ও কানাডার গ্লোবাল সুপার লীগেও সাকিবের খেলা জায়গা হতে পারে। যদিও পারফর্মেন্সও খুব একটা সন্তোষজনক নয় সাকিবের। মেজর লীগে এবারের আসরে একাদশে জায়গা হারান তিনি কয়েক ম্যাচে। তবে লঙ্কা প্রিমিয়ার লীগে সাকিবকে দেখা যেতে পারে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে ইন্টারন্যাশনাল টি-টোয়েন্টি লীগে কোনো স্কোয়াডে সাকিব নেই। আর সম্প্রতি এসএ টি-টোয়েন্টি লীগের নিলামে সাকিব নাম দেননি। বর্তমানে তিনি খেলছেন টি-টেন লীগ। যে টুর্নামেন্ট নিয়ে অনেক কথা চাউর আছে। আইসিসির স্বীকৃতি না পাওয়া এই টুর্নামেন্টকে ঘিরে প্রতিনিয়ত ওঠে ফিক্সিংয়ের অভিযোগ।
অবশ্য এই টুর্নামেন্টে বল হাতে দারুণ করছেন সাকিব। প্রথম ম্যাচে ১৫ রান খরচার ২ উইকেট, দ্বিতীয় ম্যাচে ১ রান খরচায় ২ উইকেট আর গতকাল ১৭ রান খরচায় (অতিরিক্ত ৫) ১ উইকেট নেন তিনি। গতকাল ব্যাট হাতে খেলেন ১৯ বলে ২৯ রানের অপরাজিত ইনিংস। বাকি রইলো জাতীয় দল। গুঞ্জন আছে, ওয়েস্ট ইন্ডিজে ওয়ানডে ফরম্যাট দিয়ে জাতীয় দলে ফিরতে পারেন সাকিব। তবে তাতেও যদি-কিন্তু আছে! বিসিবি থেকে নিশ্চয়তা দেয়া হয়নি এ ব্যাপারে। ফলে সেটাও অনিশ্চিত। তাহলে সাকিব খেলবেন কোথায়! সূত্র : মানবজমিন
আপনার মতামত লিখুন :