শাখাওয়াত মুকুল: বিএনপির চলমান আন্দোলন কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সভা-সমাবেশের আগে-পরে ৪ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এছাড়া, পুলিশ ও সরকার সমর্থীত দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হাতে ১ হাজারেরও বেশি বিএনপি নেতাকর্মী আহত হয়েছে। বৃহস্পতিবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ।
তিনি জানান, গত ১২ অক্টোবর চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে বিভাগীয় গণ-সমাবেশে অংশগ্রহণ করতে নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রামের মিরসরাই, কক্সবাজার ও খাগড়াছড়ি থেকে আগত প্রায় ২ শতাধিক নেতা-কর্মীকে পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা আহত করেছেন।
১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহের গণ-সমাবেশের আগের রাতে বিএনপির প্রয়াত নেতা মোশারফ হোসেনের বাস ভবনে বোমা হামলা চালায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। পাগলা থেকে আসা নেতা জসিম উদ্দিনসহ ১০ জনকে আহত করে।
২২ অক্টোবর খুলনার গণ-সমাবেশে অংশগ্রহণ করতে বিভিন্ন জেলা থেকে সমাবেশে আগত নেতা-কর্মীদের আওয়ামী লীগ এবং সরকারি বাহিনী দ্বারা আহত এবং গ্রেপ্তার করা হয়েছে। খুলনা মহানগরে আহত করা হয়েছে প্রায় ৩শ’ জনকে। খুলনা জেলায় আহত হয়েছে প্রায় শতাধিক নেতাকর্মী। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৫০ জনের বেশি।
এছাড়া, ওই সমাবেশকে কেন্দ্র করে যশোর জেলায় শতাধিক আহত ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে শতাধিক নেতাকর্মীকে। চুয়াডাঙ্গা জেলায় আহত হয়েছে ১৪ জন, কুষ্টিয়া জেলায় আহত হয়েছেন ১৮ জন। বাগেরহাট জেলায় আহত দুই শতাধিক এবং গ্রেপ্তার করা হয়েছে শতাধিক। নড়াইলে আহত ২৬ জন। ঝিনাইদহে আহত শতাধিক, মাগুরায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে প্রায় ২০ নেতাকর্মীকে। সাতক্ষিরা জেলায় আহত হয়েছে ১০ জন এবং গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২০ জনকে।
এছাড়া বাগেরহাট জেলা ছাত্রদল ও স্বেছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম ভূইয়া তনুকে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করেছে।
মির্জা ফখরুল আরও জানান, ৫ নভেম্বর বরিশাল বিভাগের গণ-সমাবেশে যাওয়ার পথে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনের গাড়ি বহরে হামলা, স্বেছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভূইয়া জুয়েল এর গাড়ি বহরে হামলা, ভোলা থেকে আসা লঞ্চে হামলা, পটুয়াখালী পার্টি অফিস ও কলাপাড়া পার্টি অফিসে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এছাড়া, গৌড়নদী, আগৈলঝরায় বিএনপি নেতাদের মালিকানাধীন ২৮টি ব্যবসায়া প্রতিষ্ঠানসহ অসংখ্য বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়ি-ঘরে হামলা করে ২ শতাধিক নেতা-কর্মীদের আহত করা হয়েছে এবং ৫০ এর অধিক নেতা কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
১২ নভেম্বর ফরিদপুর বিভাগে গণ-সমাবেশকে কেন্দ্র করে ২০ নেতা-কর্মীকে আহত এবং ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
১৯ নভেম্বর সিলেট বিভাগের গণ-সমাবেশকে কেন্দ্র করে গ্রেপ্তার ও হামলা অব্যাহত রেখেছে। বুধবার (১৬নভেম্বর) বিকেলে হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলায় দলীয় কার্যালয়ে পরিদর্শক (তদন্ত) চম্পক, সাব-ইনসপেক্টর দেবাশীষ ও রব্বানির নেতৃত্বে গুলি চালিয়ে ৩০ জন নেতা-কর্মীকে আহত করেছে। ইতিমধ্যে সিলেট বিভাগে প্রায় ২০ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ৩ ডিসেম্বর রাজশাহী বিভাগীয় গণ-সমাবেশকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য মোহনপুর থানাধীন মৌগাছি ইউনিয়নে বসতদিয়া ডিগ্রী কলেজে বোমা পেতে রেখে পুলিশ উদ্ধারের নাটক করে বিএনপির নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। সিরাজগঞ্জে রায়গঞ্জে প্রচারপত্র বিলির সময় বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ইকবাল হোসেন সহ ২০ নেতা-কর্মীকে আহত করেছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। সিরাজগঞ্জ জেলার এসপি আরিফ মন্ডল বিভিন্ন থানার ওসিদের নির্দেশনা দিয়েছেন বিএনপি সমাবেশের প্রচারণা যেন না চালাতে পারে।
তিনি বলেন, ঢাকার সমাবেশকে বানচাল করার লক্ষে মুন্সিগঞ্জের আমাদের নিরীহ নেতা-কর্মীদের উপর হামলা চালিয়ে শহিদুল ইসলাম শাওনকে হত্যা করে আবার বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে সাজানো মামলায় বিএনপির সমাজ সেবা বিষয়ক সম্পাদক ও মুন্সিগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব কামরুজ্জামান রতনকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলাম হাওলাদার, যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি আলী আকবর চুন্নুসহ ঢাকার বিভিন্ন থানায় ইতিমধ্যে ৫০ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। বুধবার নারায়ণগঞ্জে সোনারগাঁও থানা এলাকায় হামলা চালিয়ে ৫০ নেতা-কর্মীকে আহত করেছে।
এসএম/এসবি২
