অন্তর্বর্তী সরকারের অনেক উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আঁতাত করে এখন সেফ এক্সিটের কথা ভাবছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
সম্প্রতি এখন টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ নিয়ে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরক মন্তব্য করেন এনসিপি নেতা নাহিদ।
সাক্ষাৎকারে উপদেষ্টা পরিষদ নিয়ে আক্ষেপ করে তিনি বলেন, 'যারা উপদেষ্টা হয়েছেন, তাদের অনেককেই বিশ্বাস করাটা আমাদের ভুল হয়েছিল। আমাদের উচিত ছিল ছাত্র নেতৃত্বকেই শক্তিশালী করা। সরকারে গেলে সম্মিলিতভাবে যাওয়া।'
অনেক উপদেষ্টা 'নিজেদের আখের গুছিয়েছেন' এবং 'গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন' বলেও অভিযোগ করেন তিনি। সময় আসলে এসব উপদেষ্টার নাম প্রকাশ করবেন বলেও হুশিয়ারি দেন তিনি।
নাহিদ বলেন, 'অনেক উপদেষ্টাই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে লিয়াজোঁ করে ফেলেছে, তারা নিজেদের সেইফ এক্সিট নিয়ে ভাবছে। তাদের মনে হয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন ছাড়া তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না, সরকার পরিচালনা করতে পারবে না। আবার এটাও সত্য, রাজনৈতিক দলগুলো (উপদেষ্টাদের) নানান বাঁধা দিয়েছে।'
ছাত্রনেতাদের উপদেষ্টার আসনে গ্রহণ করা উচিত হয়েছিল কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে নাহিদ বলেন, 'অভ্যুত্থানের শক্তি সরকারে না থাকলে এই সরকার তিন মাসও টিকত না।'
জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম অভ্যুত্থানের পর তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে যোগ দেন। গত ফেব্রুয়ারিতে তিনি পদত্যাগ করে এনসিপির আহ্বায়কের দায়িত্ব নেন। তবে ছাত্র আন্দোলনের অন্য দুই প্রতিনিধি মাহফুজ আলম এবং আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া এখনো উপদেষ্টা হিসেবে বহাল আছেন।
উপদেষ্টার পদে যাওয়া ছাত্রনেতাদের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, তাঁরা কেউ সরকারের উপদেষ্টা পদে যেতে চাননি। তাঁদের মূল দাবি ছিল জাতীয় সরকার গঠন করা।
তিনি যুক্তি দেন, রাজনৈতিক দলগুলো সম্মত হয়ে নাগরিক সরকার করলে ছাত্রদের কাঁধে এই দায়িত্ব আসত না। ‘যদি অভ্যুত্থানের শক্তি সরকারে না থাকত, তাহলে এই সরকার তিন মাসও টিকতো না’—বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘এ সরকারকে উৎখাত করার, প্রতিবিপ্লব করার চেষ্টা চলমান ছিল প্রথম ছয় মাস। এখনো আছে কিছুটা। সময়ের প্রয়োজনে এ দায়িত্ব আমাদের নিতে হয়েছিল।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক নাহিদ ইসলাম। ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর দুটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি পদত্যাগ করেন তিনি।
এর তিন দিন পর আত্মপ্রকাশ করে তার নেতৃত্বাধীন জাতীয় নাগরিক পার্টি।