শাপলা ছাড়া অন্য কোনো প্রতীক পছন্দ করা সম্ভব নয় বলে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। প্রতীক বাছাই করতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পাঠানো এক চিঠির জবাবে এ কথা জানায় দলটি।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর জাতীয় নাগরিক পার্টিকে দেওয়া এক চিঠিতে শাপল বাদে ৫০টি প্রতীকের একটি তালিকা থেকে নিজেদের প্রতীক বাছাই করতে বলে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। মঙ্গলবার (০৭ অক্টেবর) ইমেইলে ইসির সেই চিঠির জবাব দিয়েছে এনসিপি।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, এনসিপি মনে করে গণমানুষের সাথে শাপলা প্রতীক কেন্দ্রীক তার গভীর সংযোগ সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। শাপলা এনসিপির শুভাকাঙ্খী, সমর্থক, কর্মী, নেতৃবৃন্দকে দেশের জনগণের সঙ্গে চমৎকার বন্ধনে আবদ্ধ করেছে। দেশের মানুষের ভালোবাসাকে উপেক্ষা করার শক্তি এনসিপির নাই; ফলশ্রুতিতে শাপলা ব্যতীত নির্বাচন কমিশনের প্রেরিত ৩০ সেপ্টেম্বরের চিঠির প্রেক্ষিতে বেঁধে দেওয়া তালিকা থেকে অন্য কোনো প্রতীক পছন্দ করা এনসিপির জন্য সম্ভবপর নয়।
এতে বলা হয়, দেশের মানুষ মনে করে শাপলাকে প্রতীক হিসাবে অন্তর্ভুক্ত না করা এবং এনসিপিকে শাপলা বরাদ্দ না দেওয়ার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত কোনো আইনি ভিত্তি দ্বারা গঠিত নয় বরং এনসিপির প্রতি বিরূপ মনোভাব ও স্বেচ্ছাচারী দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ। নির্বাচন কমিশন প্রতীক ইস্যুতে এনসিপির সঙ্গে অন্যায্য আচরণ করছে বলে প্রতীয়মান হয়, যা স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে নির্বাচন কমিশনের গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের স্পিরিটের বাইরে গিয়ে নির্বাচন কমিশন দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় কতটুকু অবদান রাখতে পারবে, সে বিষয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, এনসিপির নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনের চেয়ে নির্বাচন কমিশন উদ্দেশ্যমূলকভাবে অনেক বিলম্ব করছে বলে জনমনে প্রশ্নের উদ্রেক ঘটেছে। নির্বাচন কমিশন এনসিপিকে তার প্রার্থিত শাপলা প্রতীক বরাদ্দ না দিয়ে বিষয়টি নিয়ে অনাকাঙ্খিত, আইনবহির্ভূত, বৈষম্যমূলক এবং স্বেচ্ছাচারী আচরণ করছে। এর মাধ্যমে অসৎ উদ্দেশ্যে নির্বাচন কমিশন এনসিপির নির্বাচনী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হওয়া থেকে বঞ্চিত করছে। নির্বাচন কমিশনের এরূপ বৈরী আচরণ লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে কমিশনের সদিচ্ছা ও সক্ষমতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে।
নির্বাচন কমিশন এনসিপির জন্য শাপলা প্রতীক বরাদ্দ করবে আশা প্রকাশ করে চিঠিতে বলা হয়, সার্বিক বিবেচনায় এনসিপি আশা করে, নির্বাচন কমিশন ২০০৮ সালের নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালার বিধি ৯(১) সংশোধনক্রমে জাতীয় নাগরিক পার্টির অনুকূলে ১. শাপলা, ২. সাদা শাপলা, এবং ৩. লাল শাপলা থেকে যেকোন একটি প্রতীক বরাদ্দ করবে।
চিঠিতে এনসিপির শাপলা প্রতীক পেতে বাধা নেই, আইনজীবীদের এমন বক্তব্যের কথা তুলে ধরে বলা হয়, ইতোপূর্বে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবীসহ সারা দেশের ১০১ জন বিজ্ঞ আইনজীবী শাপলাকে প্রতীক হিসাবে বরাদ্দ দিতে কোনো আইনি বাধা নেই বলে বিবৃতি দিয়েছেন। সম্প্রতি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান যুক্তরাষ্ট ভিত্তিক ঠিকানা টেলিভিশনে প্রদত্ত এক সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট করে উল্লেখ করেছেন যে, ‘শাপলা প্রতীক এনসিপিকে না দেওয়াটা এটা খুব বেশি আইনের জটিলতা বলে আমি মনে করি না। এটা দেওয়া যেতেই পারে। দেয়নি বলে ভবিষ্যতেও দেওয়া যাবে না, এমনটি আমি মনে করি না। ’
এ প্রসঙ্গে চিঠিতে আরও বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের অনেক প্রথিতযশা আইনজীবী নির্বাচন কমিশন এনসিপিকে শাপলা প্রতীক বরাদ্দ দিতে পারে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। অধিকন্তু নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে এনসিপির অনুকূলে শাপলা প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া নিয়ে তার দলের ইতিবাচক অবস্থান ব্যক্ত করেছেন।
চিঠিতে শাপলাকে প্রতীক হিসেবে দৃশ্যমান করার ক্ষেত্রে শাপলার ভিন্ন ভিন্ন ভার্সন বা আংশিক ডিসটর্টেট ভার্সন গ্রহণ করার ক্ষেত্রে এনসিপি সবসময় আলোচনায় প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানানো হয়।
৫০টি প্রতীকের তালিকা থেকে থেকে এনসিপিকে মার্কা বাছাই করতে দেওয়া চিঠির সমালোচনা করে এনসিপির চিঠিতে আরও বলা হয়, এনসিপির পাঠানো ০৩ আগস্ট এবং ২৪ সেপ্টেম্বরের দরখাস্তের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। ওই দরখাস্ত দুটি অনিষ্পন্ন অবস্থায় রেখে নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে এনসিপিকে গত ৩০ সেপ্টেম্বর চিঠি পাঠানো বিধিসম্মত হয়নি বলে মনে করে এনসিপি। উৎস: বাংলানিউজ২৪