মানবজমিনের প্রতিবেদন।। আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো ইতিমধ্যে ঘোষিত রোডম্যাপে স্বস্তি প্রকাশ করেছে। সেইসঙ্গে শুরু করেছে নির্বাচনী প্রস্তুতি। এদিকে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, এনসিপিসহ কয়েকটি ইসলামী ও সমমনা দল নির্বাচনের ঘোষিত সময়সীমাকে ইতিবাচক বললেও তফসিল ঘোষণার আগে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, পিআর পদ্ধতির নির্বাচন, দৃশ্যমান সংস্কার বিচারসহ বিভিন্ন দাবিতে রয়েছে সোচ্চার। গোলটেবিল বৈঠক, সংবাদ সম্মেলন, আলোচনা সভাসহ নানা ফোরামের এসব ইস্যুতে সরব রয়েছে তারা। তবে নির্বাচনী প্রস্তুতিতে থেমে নেই তারাও। বিশেষ করে জামায়াতের প্রায় ৩০০ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ আসনে নির্বাচনী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন সরবে-নীরবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জামায়াত ৩০০ আসনে প্রার্থী দিলেও শীর্ষ নেতাদের ১৫-২০ আসনের প্রতি দৃষ্টি দেশবাসীর। এর মধ্যে ঢাকা-১৫ একটি। রাজধানীর কাফরুল-মিরপুর এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৫ আসনে আগামী নির্বাচনে লড়বেন জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তিনি এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তবে তার আগে ১৯৯১, ‘৯৬ সালে ডা. শফিকুর রহমান মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনে নির্বাচন করেন।
দলটির নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসন থেকে ১৯৮৬ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এবারো ওই আসনে তার প্রার্থিতা প্রায় নিশ্চিত। কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম) আসনে ২০০১ সালে নির্বাচনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জামায়াতের নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। আসন্ন নির্বাচনেও তিনি এই আসনে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী। ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বর্তমান জামায়াতের অন্যতম নীতিনির্ধারক। একজন হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে আগামী নির্বাচনে এই আসনে দৃষ্টি নিবন্ধিত থাকবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের। খুলনার ফুলতলা-ডুমুরিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-৫ আসন। ২০০১ সালের নির্বাচনে এই আসন থেকে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। আগামী নির্বাচনেও তিনি এই আসনে দাঁড়িপাল্লা মার্কা নিয়ে লড়বেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ ২০০৮ সালে কক্সবাজার-২ (কুতুবদিয়া- মহেশখালী) আসন থেকে নির্বাচিত হন। আগামী নির্বাচনে এ আসনে তার প্রার্থিতা প্রায় নিশ্চিত। ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি হামিদুর রহমান আযাদ একজন হেভিওয়েট প্রার্থী। বর্তমান জামায়াতের প্রথম সারির অন্যতম নীতিনির্ধারক। তার এই আসন নিয়েও আগামী নির্বাচনে যথেষ্ট কৌতূহল থাকবে রাজনৈতিক অঙ্গনে।
অবিভক্ত ঢাকা মহানগর জামায়াতের সাবেক আমীর মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বর্তমান জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল। সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্লাপাড়া) আসনে তিনি দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে লড়বেন বলে দলের পক্ষ থেকে জানা যায়। তিনিও গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থী হিসেবে দৃষ্টিতে থাকবেন পর্যবেক্ষক মহলের। ফাঁসির মঞ্চ থেকে রাজনৈতিক ময়দানে ফিরে আসা জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সিনিয়র সদস্য এটিএম আজহারুল ইসলাম রংপুর-২ (তারাগঞ্জ-বদরগঞ্জ) আসনে দলটির সম্ভাব্য প্রার্থী। প্রায় সাড়ে ১৪ বছর কারাবন্দি থাকার পর সম্প্রতি তিনি ফাঁসির দণ্ডাদেশ থেকে খালাস পান। এর পর থেকেই নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন জামায়াতের বর্ষীয়ান এই নেতা। নানা কারণে আগামী নির্বাচনে রংপুর-২ আসনেও দৃষ্টি থাকবে পর্যবেক্ষক মহলের।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের আমীর নুরুল ইসলাম বুলবুল চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর) আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী। ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি বুলবুলও নির্বাচনী মাঠে শক্ত প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়া তরুণ এবং আলোচিত প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে দেখা যাবে সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ) আসনে ঢাকা মহানগর উত্তরের আমীর মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনে এডভোকেট শিশির মনির, পিরোজপুর-১ মাসুদ সাঈদী, পিরোজপুর-২ শামীম সাঈদী, পটুয়াখালী-২ (বাউফল) আসনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, কুষ্টিয়া-৩ (কুষ্টিয়া সদর) আসনে মুফতি আমীর হামযাকে।