মহসিন কবির: জাতীয় পার্টি (জাপা) আবারও বাঙলো। জাতীয় পার্টির (জাপা) নতুন অংশের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছেন এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার। শনিবার রাজধানীর গুলশানে ইমানুয়েল কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত জাতীয় কাউন্সিলে সারাদেশ থেকে আসা প্রায় ২ হাজার কাউন্সিলরের কণ্ঠভোটে তারা নির্বাচিত হন।
এদিকে জাপার বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও তার অনুসারীদের বাইরে রেখে এই কাউন্সিল করেছেন আনিসুল-হাওলাদার-চুন্নু অংশ। এ লক্ষ্যে প্রেসিডিয়াম সভার মাধ্যমে জাপার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হয়।
অন্যদিকে, জিএম কাদের অংশের মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে এ কাউন্সিল বাতিলের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, বর্তমান চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে অন্য কাউকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা এবং এভাবে কাউন্সিল ডাকা অবৈধ। এ সংবাদ সম্মেলন গতকাল সকালে রাজধানীর কাকরাইলে জাপার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। দুপক্ষের এ বিভাজনের ফলে দলটিতে নতুন অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন পার্টি নেতারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই প্রেসিডিয়াম মেম্বার গণমা্ধ্যমকে জানান, এ কাউন্সিলের মাধ্যমে জাপা স্পষ্টভাবে দুই ভাগে বিভক্ত হবে, অর্থাৎ দলে আরেক দফা ভাঙন তৈরি হবে। তারা মনে করেন, দুপক্ষের উচিত কাউন্সিল না করে আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধান করা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রেসিডিয়াম মেম্বার বলেন, বিভেদে লিপ্ত নেতারা বুঝতে পারছেন না যে তারা বর্তমান রাজনীতির শিকার হচ্ছেন। এর মাধ্যমে একটি রাজনৈতিক পক্ষ জাতীয় পার্টিকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে।
গঠনতন্ত্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে জাপা থেকে বহিষ্কার করেছিলেন। পরে তাদের নেতৃত্বে জাপার একটি অংশ ঐক্যের ডাক দেয় এবং দশম জাতীয় কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত নেয়।
গতকালের সংবাদ সম্মেলনে ব্যারিস্টার আনিসুল বলেন, শনিবারের সম্মেলন ঐতিহাসিক হবে। এই সম্মেলনের মাধ্যমে দলের দীর্ঘদিনের বিভেদ শেষ করে পল্লীবন্ধু এরশাদের স্বপ্নের জাতীয় পার্টির নবযাত্রা শুরু হবে। কাউন্সিলে সারা দেশ থেকে কয়েক হাজার কাউন্সিলর ও ডেলিগেট অংশ নেবেন। তিনি বলেন, আদালতের আদেশ ও গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এ কাউন্সিল আয়োজিত হয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করা হয়েছে এবং তাদের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
তিনি জানান, গত ৩০ জুলাই ঢাকার একটি নিম্ন আদালতের আদেশে জাপার চেয়ারম্যানের সাংগঠনিক কার্যক্রমে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। এর ফলে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম অনিশ্চয়তা ও স্থবিরতার মুখে পড়ে। বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, নির্বাচন কমিশনের সময়সীমা এবং জাপার মতো বৃহৎ রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বশূন্যতা গণতন্ত্রের জন্য সহায়ক নয়।
এ প্রেক্ষাপটে গঠনতন্ত্রের ২০(২)(খ) ধারা অনুযায়ী সাংগঠনিক উদ্যোগ নেওয়া হয়। ৫ আগস্ট ব্যারিস্টার আনিসুলের সভাপতিত্বে প্রেসিডিয়াম সভায় সর্বসম্মতিক্রমে জাতীয় কাউন্সিল আহ্বানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের সময়সীমা অনুযায়ী জাতীয় কাউন্সিল ৩০ জুনের মধ্যে হওয়ার কথা ছিল। ২৮ জুন নির্ধারিত হলেও ভেন্যু না পাওয়ায় তা স্থগিত করা হয়।
জাপার মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, গঠনতন্ত্রে চেয়ারম্যানের দীর্ঘ অনুপস্থিতিতে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান, কো-চেয়ারম্যান বা প্রেসিডিয়াম মেম্বারকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিয়োগের বিধান আছে। কিন্তু জিএম কাদের দেশে আছেন, সুস্থ আছেন এবং নিয়মিত অফিসে আসেন। তিনি কাউকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিয়োগ করেননি। তাই এ প্রক্রিয়া অবৈধ। বহিষ্কৃতদের কাউন্সিলে মূলধারার কোনো নেতাকর্মী যাবেন না।
তিনি আরও বলেন, শিষ্টাচারের কারণে বহিষ্কৃত নেতাদের কাউন্সিল থেকে বিরত থাকা উচিত। এ কাউন্সিল অবৈধ এবং রাজনীতিতে কোনো ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। জিএম কাদেরের নেতৃত্বে মূলধারার জাতীয় পার্টি টিকে থাকবে।
তিনি জানান, ২৮ জুনের কাউন্সিল ভেন্যু না পাওয়ায় স্থগিত হয়েছিল। কিছু সিনিয়র নেতা এ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। ৩০ ধারা অনুযায়ী জিএম কাদের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী নেতাদের বহিষ্কার করেন। বহিষ্কৃতরা দেওয়ানি মামলা করেন এবং আদালত চেয়ারম্যান ও দপ্তর সম্পাদকের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কার্যক্রমে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেন। তাই বহিষ্কৃতদের সভা ডাকা বা কাউন্সিল আয়োজন অবৈধ।
চেয়ারম্যান-মহাসচিব ছাড়াও জাপার উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন- কাজী ফিরোজ রশিদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা, এটিইউ তাজ রহমান, সোলায়মান আলম শেঠ, নাসরিন জাহান রতনা, নাজমা আকতার, লিয়াকত হোসেন খোকা, মোস্তফা আল মাহমুদ, মাসরুর মওলা, জসিম উদ্দিন ভূইয়া, আরিফুর রহমান, নুরুল ইসলাম মিলন, জিয়াউল হক মৃধা, খান ইসরাফিল খোকনসহ দলটির অধিকাংশ সিনিয়র নেতা ও বিভিন্ন জেলা কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা।
কাউন্সিলে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টি (জেপি) মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য দিদারুল আলম দিদার ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (মতিন) মহাসচিব জাফর আহমেদ জয়।