ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ বন্ধে নতুন কূটনৈতিক আলোচনার সূচনা হয়েছে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের একটি প্রস্তাবে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, পুতিন প্রস্তাব দিয়েছেন, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল ডনবাস অঞ্চলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ এবং দখলকৃত ভূখণ্ডের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির বিনিময়ে যুদ্ধবিরতিতে রাজি তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার জানান, এ নিয়ে ১৫ আগস্ট আলাস্কায় পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করবেন। তবে বৈঠকের সুনির্দিষ্ট স্থান ও আলোচনার খুঁটিনাটি তিনি জানাননি। ক্রেমলিনও এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি শনিবার স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে, নিজেদের ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয় এবং যে কোনও শান্তি-আলোচনায় ইউক্রেনকে অবশ্যই অংশ নিতে হবে। তিনি বলেন, ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে নেওয়া যে কোনও সিদ্ধান্ত হবে শান্তিবিরোধী সিদ্ধান্ত। এতে কিছুই অর্জিত হবে না।
ইউরোপীয় নেতারা পুতিনের প্রস্তাব নিয়ে গভীর সংশয় প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, প্রস্তাব অনুযায়ী ইউক্রেনকে শুধু পূর্বাঞ্চল ছেড়ে দিতে হবে। অথচ রাশিয়ার পক্ষ থেকে অন্য কোনও বড় অঙ্গীকার আসেনি যুদ্ধ থামানোর প্রতিশ্রুতি ছাড়া।
পুতিন প্রস্তাবটি বুধবার মস্কোয় মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের কাছে তুলে ধরেন। যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন ও ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের ধারাবাহিক আলোচনা সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবের প্রথম ধাপে ইউক্রেনকে ডনেস্ক থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে এবং যুদ্ধের ফ্রন্টলাইন স্থগিত হবে। দ্বিতীয় ধাপে ট্রাম্প ও পুতিন চূড়ান্ত শান্তি-চুক্তির খসড়া তৈরি করবেন, যা নিয়ে পরে জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনা হবে।
রাশিয়ার প্রস্তাব অনুযায়ী, ডনেস্ক ও লুহানস্কের পাশাপাশি ২০১৪ সালে দখল করা ক্রিমিয়ার ওপরও সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি দাবি করছে মস্কো। এছাড়া দক্ষিণের জাপোরিজ্জিয়া ও খেরসনের দখলকৃত অংশ নিয়েও আলোচনার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র ক্যারোলাইন লেভিট বলেন, সংবেদনশীল কূটনৈতিক আলোচনার প্রতি সম্মান জানিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য নিয়ে মন্তব্য থেকে বিরত থাকবে যুক্তরাষ্ট্র।
ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, প্রেসিডেন্ট একতরফাভাবে ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। জেলেনস্কি বারবার বলেছেন, পূর্ণ ও শর্তহীন যুদ্ধবিরতির পরেই কেবল সীমান্ত-সংক্রান্ত কোনও আলোচনায় বসা সম্ভব।
ইউরোপের কিছু নেতা ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় সংঘাত স্থগিত হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে সতর্ক আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক বলেন, হয়তো যুদ্ধের সমাপ্তি নয়, কিন্তু সংঘাতের বরফ গলতে শুরু করতে পারে।
এদিকে, আলোচনার মধ্যেই রুশ বাহিনী ইউক্রেনের ওপর হামলা বাড়িয়েছে। শুক্রবার ভোরে কিয়েভের উপকণ্ঠ বুচায় বোমাবর্ষণ করে তারা। এ স্থানটি ২০২২ সালে রুশ সেনারা গণহত্যা চালিয়েছিল।
পুতিন প্রস্তাবটি ভারত, চীন, বেলারুশ, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং তুরস্কসহ কয়েকটি দেশের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন বলে রুশ সরকার জানিয়েছে। তবে, ইউক্রেন ও ইউরোপীয় অংশীদাররা এখনও প্রস্তাবটিকে যুদ্ধবিরতির আড়ালে কৌশলগত চাল বলে মনে করছেন।