শিরোনাম
◈ ওসি নিয়োগে নতুন নীতিমালা: যোগ্যতা, স্বচ্ছতা ও সীমাবদ্ধতা নির্ধারণ ◈ পুলিশে ফের বড় রদবদল ◈ সীমানা পুনর্বিন্যাসে ভাঙ্গায় সহিংসতা: থানাঘেরাও, গাড়ি ভাঙচুর ◈ ৫ দফা দাবিতে জামায়াতের বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা ◈ প্রবাসীরা পোস্টাল ব্যালটে কীভাবে ভোট দেবেন, জানালেন ইসি ◈ তারুণ্যের শক্তি আমাদের জাতির চালিকাশক্তি : প্রধান উপদেষ্টা ◈ দেশে নিবন্ধিত কোচিং সেন্টার ৬,৫৮৭, অনিয়ন্ত্রিত আরো বহু; নীতিমালা শূন্যতায় বাড়ছে বাণিজ্যিকীকরণ ◈ অনলাইন জুয়ার অর্থ লেনদেনে দুই অভিনেত্রী গোয়েন্দা নজরে ◈ রাবি হল সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী ৩৯ প্রার্থী ◈ জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে যেভাবে ধরা পড়ল ৫০ প্রতারক! (ভিডিও)

প্রকাশিত : ২৩ জুলাই, ২০২৫, ১২:৪৯ দুপুর
আপডেট : ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০১:০০ রাত

প্রতিবেদক : মহসিন কবির

বড় সমাবেশ থেকে জামায়াতের কী বার্তা দিল?

মহসিন কবির: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শনিবার (১৯ জুলাই) বড় সমাবেশ করেছে। কেউ বলেছেন ১০ লাখ লোক হয়েছে। কেউ বলেছে ১৫ লাখ লোক হয়েছে। লোক গণনা করা তো সম্ভব নয়। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন নিজেদের শক্তির জানান দিলো জামায়াত। ১৬ বছরের দুঃশাসনের অত্যাচারে তাদের শক্তি ক্ষয় হয়নি, বরং বেড়েছে। কেউ কেউ বরেছেন তাদের সব ভোটারই এসেছেন। এপর্যন্ত তাদের ভোটর শক্তি। ঘরে কয়েকে লাখ মহিলা ভোটার । 

বিশ্লেষকদের ভাষ্যে, সমাবেশে জামায়াতের আমির বা দলটির কাছ থেকে নির্বাচন নিয়ে স্পষ্ট কোনো বার্তা মেলেনি। এতে জনগণ কিছুটা বিভ্রান্ত হয়েছে। তারা মনে করেন, জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্ব এত বড় সমাবেশ আয়োজনের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়েছে তারা বেশ শক্তপোক্তভাবেই রাজনৈতিক মাঠে নামছে।

ফ্যাসিবাদের পতন ঘটানো জুলাই অভ্যুত্থানের আগে ও অভ্যুত্থানকালে বিএনপি ও জামায়াতের রাজনৈতিক অবস্থান মোটামুটি কাছাকাছি থাকলেও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তাদের মধ্যে দূরত্ব স্পষ্ট হয়ে পড়েছে। জামায়াত নেতাদের নানা বক্তব্যে এখন প্রকাশ পাচ্ছে, পতিত আওয়ামী লীগশূন্য রাজনৈতিক ময়দানে তাদের মূল প্রতিপক্ষ বিএনপি। এরই ধারাবাহিকতায় তারা সমাবেশে বিএনপিকে বাদ দিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপিসহ অন্য কিছু দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে।  

এতে একদিকে যেমন বোঝা যাচ্ছে; এককভাবে বিএনপিকে মোকাবিলা করা জামায়াতের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। অন্যদিকে সবার কাছে এই বার্তাও স্পষ্ট যে, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদসহ যে কয়টি দল সমাবেশে অংশ নিয়েছে, তারা জামায়াতের ওপর ভিত্তি করে রাজনীতি ও নির্বাচনের মাঠে নামতে চায়। যদিও বিএনপির মতো বড় দলকে চ্যালেঞ্জ করা তাদের পক্ষে সম্ভব হবে কি না, তার উত্তর সময়সাপেক্ষ।  

বিশ্লেষকরা বলছেন, এ সমাবেশের মাধ্যমে জামায়াত একটি সম্মিলিত বিরোধী জোট গড়ার বার্তা দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে তারা অন্যান্য ইসলামী দলগুলোকেও কাছে টানবে। জুলাই অভ্যুত্থানের সংগঠকদের নিয়ে গটিত দল এনসিপিকেও জামায়াত জায়গা করে দেবে নিজের স্বার্থের জন্য। আবার এনসিপিও জামায়াতের দিকে ঝুঁকছে প্রায়। কেননা, দুটি দলই লেভেল প্লেইং ফিল্ড, আইনশৃঙ্খলা, নির্বাচনের পরিবেশ নেই, পিআর পদ্ধতির নির্বাচন নিয়ে একসুরে কথা বলছে।  

এ সমাবেশ থেকে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে এক লড়াইয়ের পর দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরেক লড়াইয়ের ঘোষণা দেন দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি আরও বলেন, পুরোনো ব্যবস্থাপত্রে বাংলাদেশ আর চলবে না।  

জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা, শিবিরের সভাপতি ও অন্যান্য দলের শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যের পর সভাপতি হিসেবে ডা. শফিকুর রহমান ভাষণ দেন। এতে তিনি রাজনৈতিক উত্তরণের নতুন পথ তৈরি হয়েছে বলে জানান। তিনি এমন এক লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন, যেখানে নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত হয়।

জামায়াতের আমির তার বক্তব্যে জানান, আগামী নির্বাচনে যদি তার দল জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে তাহলে তাদের এমপি-মন্ত্রীরা সরকারি প্লট নেবেন না, ট্যাক্স ফ্রি গাড়ি চড়বেন না। দেশের সব খরচের হিসাব জনগণের সামনে প্রকাশ করবেন। তিনি বলেন, চাঁদা আমরা নেব না, দুর্নীতি আমরা করব না। চাঁদা নিতে দেব না, দুর্নীতিও সহ্য করব না।

তিনি ২০২৪ সালের রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানে তার বক্তব্যে শহীদ ও নির্যাতিতদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। ডা. শফিকুর রহমান বলেন, শহীদ আবু সাঈদরা যদি বুক পেতে না দাঁড়াতেন, তাহলে আমরা আজকের বাংলাদেশটা দেখতাম না। তাদের ঋণ পরিশোধের শক্তি আল্লাহ যেন জামায়াতকে দেন।  

তিনি আরও বলেন, যারা বস্তাপঁচা ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশকে নিতে চান তাদের আমরা বলি, জুলাইযুদ্ধ করে যারা জীবন দিয়েছে, আগে তাদের জীবনটা ফেরত এনে দেন। যদি শক্তি থাকে ফেরত এনে দেন। আপনারা পারবেন না। যেহেতু পারবেন না, কাজেই নতুন ব্যবস্থায় নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে।  

নিজ ভাষণের এক পর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে যান জামায়াতের আমির। মিনিটখানেক অপেক্ষা করে ডা. শফিকুর আবার বক্তব্য শুরু করেন। কিন্তু আবার অসুস্থ হয়ে পড়ে যান। এরপর মঞ্চে থাকা দলের নেতারা তাকে ধরে বসান। তিনি পরে বসে থেকেই নিজের বক্তব্য শেষ করেন।  

পুরো ভাষণের কোথাও জামায়াত কবে নাগাদ নির্বাচন চায়, সে ব্যাপারে কোনো ইঙ্গিত দেননি জামায়াতের আমির। নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করলে জামায়াত কী করবে, তার একটি ধারণা তিনি দিয়েছেন, যেটি সাধারণত প্রতিটি রাজনৈতিক দলই দিয়ে থাকে।

আবার সংস্কার নিয়ে জামায়াতের যে তোড়জোড় বিগত দিনগুলোয় দেখা গেছে, শনিবারের সমাবেশে সে বিষয়েও কড়া কোনো বক্তব্য শোনা যায়নি। সংস্কার আগে, নির্বাচন পরে এ বিষয়টিও খুব স্পষ্ট করেনি জামায়াতে ইসলামী। অন্যদিকে একটি দল নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর সরকার গঠন করে যে পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করে, তেমন কোনো বার্তাও দেয়নি জামায়াত। দলটি সরকার গঠন করতে পারলে তারা ভারত, পাকিস্তান, চীন, যুক্তরাষ্ট্র; কার সঙ্গে কী সম্পর্ক রাখবে, নাকি ভারসাম্যমূলক পররাষ্ট্র নীতি হবে, সেটিও স্পষ্ট হয়নি। রাজনৈতিক শক্তি জানান দেওয়ার সমাবেশে যে নীতিগত বিষয়গুলো তুলে ধরা দরকার, সেটিও জামায়াতের কর্মসূচিতে থেকেছে অনুপস্থিত।

জাতীয় সমাবেশের আগে জামায়াতের নেতারা বলেছিলেন, এটি ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ঐতিহাসিক মহড়া ও দেশের রাজনীতির টার্নিং পয়েন্ট হবে। সমাবেশের পর তাদের ভাষ্য, জামায়াতের এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে সামনের রাজনীতিতে মেরুকরণ আরও স্পষ্ট হয়েছে।

জামায়াতের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যারা দেশের রাজনীতিতে ভূমিকা রাখতে চাইছে সেসব দলগুলোর নেতাদের ভাষ্য, তাদের প্রথম ও প্রধান চাওয়া দেশের মৌলিক সংস্কার। তারা রাজনীতি ও নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড চান। একই সঙ্গে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত চান। যে কারণেই তারা জামায়াতের সঙ্গে এক হয়েছেন। কিন্তু কিছু কিছু রাজনৈতিক দল আছে যারা মৌলিক সংস্কার ছাড়াই একটা নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসতে মুখিয়ে আছে বা তাদের সঙ্গে নেই— তারা এই সমাবেশে আমন্ত্রণ পায়নি।

লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২০২৬ সালে পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও (ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে) নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে বলে ইঙ্গিত দেন। বিএনপিও আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের কথা বলে আসছে। জামায়াতের আমির সে ব্যাপারেও কিছু বলেননি। ফলে জামায়াত আদৌ নির্বাচন চায় কি না, সেটি একটি প্রশ্ন বলে মনে হচ্ছে কোনো কোনো বিশ্লেষকের কাছে।  

এ ছাড়া, সমাবেশে বক্তারা বারবার ‘ঈমানদার নেতৃত্ব’, ‘জনগণের সেবক’ এবং ‘ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্রের’ স্বপ্ন দেখিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ তুলে জামায়াত তাদের বিগত দিনের সহিংসতার আন্দোলনের দায় এড়িয়ে এক নতুন ধরনের জবাবদিহিমূলক ও দুর্নীতিমুক্ত রাজনীতির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।  

হিন্দু মহাজোট মহাসচিবের উপস্থিতি ঘিরে আলোচনা
সমাবেশে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব ড. গোবিন্দচন্দ্র প্রামাণিকও অংশ নেন। তিনি তার বক্তব্যে পতিত আওয়ামী লীগের সঙ্গে টেনে বিএনপিকে নিয়েও বিষোদগার করেন। বিএনপির ব্যাপারে তিনি বলেন, এ দলটির বিরুদ্ধে হিন্দু সম্প্রদায়কে অবহেলা ও ক্ষতির অভিযোগ রয়েছে। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর এবং সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রামে একজন কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বিএনপির সমালোচনা করেন।  

কিছু কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, জামায়াত গোবিন্দচন্দ্র প্রামাণিককে সমাবেশে ডাকার মাধ্যমে বিএনপিকে কোণঠাসা করতে চায়। ড. প্রামাণিক জামায়াতে ইসলামীকে শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে নয়, বরং একটি ‘ইউনিভার্সাল ইউনিভার্সিটি’ আখ্যা দেন। তিনি এও বলেন, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে অংশগ্রহণের কারণে সমাবেশে উপস্থিত জনতার জীবন ধন্য হবে। বিষয়গুলো বিএনপিকে আসন্ন নির্বাচন থেকে দূরে ঠেলার নামান্তর। বিষয়টি, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলের জন্য দৃষ্টিকটূ। কেননা, জামায়াত চেষ্টা করছে ভিন্ন ধর্মের শীর্ষ সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতাকে তাদের সমাবেশে নিয়ে এসে বিএনপিকে টার্গেট করতে, যা রাজনৈতিক আগ্রাসনের নতুন স্বরূপ তুলে ধরছে।

‘রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা যেন ব্যক্তিআক্রমণে রূপ না নেয়’
সমাবেশে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম মূল্যবোধের রাজনীতি ও নিজেদের মধ্যে সম্মানজনক প্রতিযোগিতার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমাদের রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা যেন কখনো ব্যক্তিগত আক্রমণে রূপ না নেয়।

সমাবেশে নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন গণধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলো যেন নির্বিঘ্নে প্রচার প্রচারণা করতে পারে, নিরপেক্ষ একটি প্রশাসনিক এবং রাষ্ট্রব্যবস্থা যেন থাকে, সেই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। যেটা আজকের সমাবেশের একটা দাবি।  

জামায়াতের সাত দফায় যা আছে
অনেকেই মনে করেছিল, জামায়াত তাদের নির্বাচনী প্রস্তুতির একটি রূপরেখা সমাবেশের মাধ্যমে জনগণের কাছে তুলে ধরবে। কিন্তু সেটি হয়নি। ফলে দীর্ঘদিন ধরে গণতন্ত্র চাওয়া মানুষের যে প্রত্যাশা, সেটি পূরণ হয়নি।  

জামায়াত তাদের সাত দফা দাবিতে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ও অন্যান্য সময় সংঘটিত সব গণহত্যার বিচার; রাষ্ট্রের সব স্তরে প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার; ঐতিহাসিক জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্রের পূর্ণ বাস্তবায়ন; জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবারের পুনর্বাসন; জনগণের প্রকৃত মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে পিআর (প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন; প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ; রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের জন্য সমান সুযোগ ও ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিতকরণ চেয়েছে।

সমাবেশে আমন্ত্রিত অতিথিদের অনেকেই বলেছেন, তারা জামায়াতের সাত দফা দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। তারা মনে করেন, মৌলিক সংস্কার না করে নির্বাচন করলে কোনো পরিবর্তন আসবে না।  

বিশ্লেষকরা যা বলছেন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন এ প্রসঙ্গে বাংলানিউজকে বলেন, ‘৫ আগস্টের পর অন্যান্য সব দলের চেয়ে জামায়াতকে বেশ সুসংগঠিত মনে হয়েছে। কালকের সমাবেশ সেটারই শোডাউন। তাদের নির্বাচন নিয়ে কথা না বলে পিআর পদ্ধতি নিয়েই বেশি কথা বলতে দেখা গেছে, যার অংশ হিসেবে বিএনপিকে এই সমাবেশে তারা দাওয়াত করেনি। তবে বাংলাদেশের বাস্তবতায় আমি মনে করি না, পিআর পদ্ধতির প্রচলন করার সময় এখনো এসেছে। কিন্তু জামায়াত এই সমাবেশের মাধ্যমে হয়তো প্রমাণ করতে চেয়েছে, তারা প্রস্তুত আছে, সবকিছুর জন্যই। ’

যশোর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি যাকির শওকত বাংলানিউজকে বলেন, জামায়াতের আমির আসলে যে বার্তাটি জনগণকে দিতে চেয়েছিলেন, সেটি সুস্পষ্টভাবে আসেনি। তার দল থেকে যারা এমপি-মন্ত্রী হবেন, তাদের গাড়ি বা প্লট নেওয়া বা না নেওয়া সম্পর্কে তিনি যা বলেছেন, সেটি পরোক্ষভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার বার্তা হতে পারে। অর্থাৎ, জামায়াত সরকার গঠনে ইচ্ছুক। তারা নির্বাচনও চায়। দেশবাসীর কাছে দলটি এই বার্তাটি এত বড় সমাবেশের মাধ্যমে প্রত্যক্ষভাবে দিতে পারেনি।  

তিনি বলেন, সমাবেশে জামায়াতের আমির দেশের বর্তমান গণতান্ত্রিক অবস্থান সম্পর্কে কোনো কথা বলেননি। বরং তিনি চাঁদাবাজির বিষয়ে কথা বলেছেন। তার ভাষ্যমতে, চাঁদাবাজ তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ। তারা যদি সরকার গঠন করতে পারেন, তবে চাঁদাবাজদের কোনো প্রশ্রয় জামায়াত দেবে না। মোদ্দা কথা, এত বড় একটি সমাবেশ থেকে জামায়াতের যে বার্তা জনগণকে দেওয়ার কথা, সেটি তারা দিতে পারেনি; বরং সারা দেশের সামনে নিজেদের শক্তি প্রকাশ করেছে।

বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের ঘনিষ্ঠতা ও দূরত্ব
১৯৯৯ সাল থেকে পরের দুই যুগ বিএনপি ও জামায়াত জোটসঙ্গী ছিল। ২০০১-২০০৬ পর্যন্ত একসঙ্গে সরকারও পরিচালনা করে দল দুটি। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে সমঝোতার ভিত্তিতে দুই দল আলাদা হয়ে যায়। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর বিএনপির যুগপৎ আন্দোলন থেকেও সরে যায় জামায়াত। জুলাই অভ্যুত্থানে দল দুটি অংশ নিলেও ৫ আগস্টের পর বিএনপির প্রধান নির্বাচনী প্রতিযোগী হওয়ার চেষ্টা করছে জামায়াত।

ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের শাসনামলে ১১ বছর ঢাকায় এককভাবে সমাবেশ করার সুযোগ পায়নি জামায়াত। ২০০৯ সালের আগে দলটি সমাবেশ করতো পল্টন ময়দানে। ২০১২ সালে সেখানেও তাদের রাজনৈতিক সমাবেশ বন্ধ করে সরকার। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রাজনৈতিক সমাবেশ আয়োজন শুরু হয় একই বছর থেকে। বিএনপির জোটের সঙ্গে জামায়াত সমাবেশ করলেও এককভাবে কখনও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কর্মসূচি করতে পারেনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়