শিরোনাম
◈ হত্যার অস্ত্র এক পার্ক করা গাড়ি: যেভাবে হত্যা করল ইরানের পরমাণু কর্মসূচির প্রধানকে ◈ চার লাখ কোটির খেলাপি: ১০ ব্যাংকেই আটকে তিন লাখ কোটি ◈ ১১ মাসে তৈরি পোশাক রফতানি ৩৬.৫৬ বিলিয়ন ডলার, প্রবৃদ্ধি ১০.২০% ◈ ইরানের দিকে যাচ্ছে মার্কিন রণতরী ◈ জামায়াতের অবস্থানে হঠাৎ পরিবর্তন কেন? ◈ মেয়রের শপথ: ইশরাক-আসিফ বাকযুদ্ধ, এর সমাধান কি? ◈ 'আমি করতেও পারি, নাও পারি', ইরানে হামলায় যোগ দেওয়ার বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প ◈ ইসরাইল লক্ষ্য করে এবার হাইপারসনিক ছুড়েছে ইরান ◈ লন্ডন বৈঠকের পর বিএনপি-জামায়াত সম্পর্কে ফাটল: হতাশা, বিরক্তি ও রাজনীতির নতুন সমীকরণ ◈ পরিবেশের ক্ষতি করে কোনো উন্নয়ন নয়: প্রধান উপদেষ্টা

প্রকাশিত : ১৯ জুন, ২০২৫, ০১:৫২ রাত
আপডেট : ১৯ জুন, ২০২৫, ০৬:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

জামায়াতের অবস্থানে হঠাৎ পরিবর্তন কেন?

 বিবিসি বাংলা: প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই সংস্কার, বিচারসহ নানা ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতার বার্তাই দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এমনকি নির্বাচন নিয়েও এ পর্যন্ত তেমন কঠোর কোনো বক্তব্য আসেনি তাদের পক্ষ থেকে। তবে হঠাৎ করেই প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে দলটি।

এমনকি ১৭ জুন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার প্রথম দিনেও অংশ নেয়নি জামায়াত।

যদিও বুধবার আলোচনার দ্বিতীয় দিনে অংশ নিয়ে দলটি জানিয়েছে, লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতি ও যৌথ সংবাদ সম্মেলন ঘটনার "প্রতীকী প্রতিবাদ" হিসেবে তারা গতকাল মঙ্গলবার ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় অংশ নেয়নি।

দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের গণমাধ্যমকে বলেন, একটি রাজনৈতিক দলের সাথে বৈঠক করে প্রধান উপদেষ্টা যৌথ বিবৃতি দেওয়ায় দেশের অন্য রাজনৈতিক দলগুলো বিব্রত হয়েছে।

বিএনপির সঙ্গে বৈঠক নিয়ে কোনো প্রশ্ন না থাকলেও "জয়েন স্টেটমেন্ট এবং জয়েন প্রেস ব্রিফিং এখানেই আমাদের সমস্যা" বলেন মি. তাহের।

এই ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন উল্লেখ করে মি. তাহের বলেন, "এভাবে চলতে থাকলে সংস্কার কমিশনও খুব বেশি অগ্রসর হতে পারবে না।"

এছাড়া নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ইস্যুতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সাম্প্রতিক এক বক্তব্যেরও সমালোচনা করেন জামায়াতের নায়েবে আমির।

জামায়াতে ইসলামীর এমন অবস্থানে এখন প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে দলটির?

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকার সম্পাদক সালাহউদ্দিন মুহাম্মদ বাবর বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে না যাওয়া এবং সংস্কারের আগে নির্বাচন ইস্যুতে জামায়াতের সাম্প্রতিক অবস্থান–– অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কিছু ভিন্নমতেরই ঈঙ্গিত দেয়।

"যদিও এগুলো খুব মেজর বিষয় না," বলছেন মি. বাবর।

তিনি বলেন, "একটা প্ল্যাটফর্মে রাজনৈতিক দলগুলো আমাদের দেশে তো কখনোই হয় নাই, সেক্ষেত্রে কিছু মতভেদ থাকতেই পারে। তবে মেজর দুইটা পার্টির মধ্যে দুরত্ব তৈরি হয়েছে। এই মুহূর্তে যার অবসান হলে জাতির জন্য কল্যাণ হতো।"

সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়েই প্রশ্ন জামায়াতের

অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই সরকারকে সহযোগিতা করার কথা বলে আসছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন ইস্যুতে নানা সময় বিএনপির ভিন্ন অবস্থান থাকলেও জামায়াত খুব একটা দ্বিমত করেনি।

তবে, গত ১৩ই জুন লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের পর থেকেই সরকারের সমালোচনা করছে জামায়াত। প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে দলটি।

লন্ডনে তারেক-ইউনূস বৈঠক ও যৌথ সংবাদ সম্মেলনের পর দেয়া এক বিবৃতিতে, প্রধান উপদেষ্টা "একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ করেছেন" বলেও মন্তব্য করেছিল জামায়াত।

এমনকি এই ঘটনার প্রতিবাদ হিসেবে ১৭ই জুন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায়ও অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকে দলটি, যাকে তারা "প্রতীকী প্রতিবাদ" হিসেবেই উল্লেখ করছে।

যদিও ১৮ই জুন, বুধবারের আলোচনায় অংশ নিয়েছে জামায়াতে ইসলাম। ‌

এদিন ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের জানান, প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষ অবস্থানের আশ্বাস পেয়েই জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় আবারো অংশ নিয়েছেন তারা।

তিনি বলেন, "মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা আমাদের মাননীয় আমিরের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। আমরা আমাদের কথা বলেছি এবং উনি আশ্বস্ত করেছেন যে উনার সরকার নিরপেক্ষ সরকার। উনারা কোনো বিশেষ দল বা গোষ্ঠীর প্রতি ইনক্লাইন্ড (অনুরক্ত) না।"

এদিন নির্বাচন ও আইনশৃঙ্খলা ইস্যুতেও কথা বলেন মি. তাহের।

নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সাম্প্রতিক এক বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, "যিনি একটা বিল্ডিংয়ের তালা খোলার মতো ব্যবস্থা করতে পারেন নাই এক মাসেও, তিনশোটা কনস্টিটিউয়েন্সিতে (নির্বাচনি আসন) উনি কীভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করবেন, এটা খুবই একটা বিষ্ময়ের ব্যাপার।"

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মি. তাহের বলেন, "ইফ-যদি দিয়ে তো কোনো ফাইনাল ডিসিশন হয় না। আমাদের ঐকমত্য কমিশন এখনো ইফ-যদিতে আছে।"

এর আগে সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে জাতির সামনে প্রশ্ন উঠেছে বলে মন্তব্য করেছিলেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারও।

তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, "প্রধান উপদেষ্টা নিরপেক্ষ থাকতে পারেননি। ফলে উনি‌ই (প্রধান উপদেষ্টা) বলুন নিরপেক্ষ উনি কীভাবে থাকবেন।"

জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের এমন বক্তব্যে অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে তাদের দূরত্বের বিষয়টি সামনে এনেছে।

ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে না যাওয়া এবং সংস্কারের আগে নির্বাচন ইস্যুতে জামায়াতের সাম্প্রতিক অবস্থান, অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে দলটির ভিন্নমতেরই ঈঙ্গিত দেয় বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক সালাহউদ্দিন মুহাম্মদ বাবর।

তিনি বলছেন, বিএনপির সাথে সরকারের বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতি রাজনীতিতে সন্দেহ তৈরি করেছে।

লন্ডনের বৈঠকের পর "বক্তব্যগুলো একসাথে না হয়ে আলাদা আলাদা হলে এটা আরও বেশি ইফেক্টিভ হতো এবং এটা নিয়ে কোনো বিতর্ক হতো না," বিবিসি বাংলাকে বলেন মি. বাবর।

তবে সরকারের সাথে জামায়াতের ভিন্নমতের থেকে বিএনপির সাথে তাদের দূরত্বকেই বেশি উদ্বেগজনক হিসেবে মনে করেন মি. বাবর।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, "মেজর দুইটা পার্টির মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। আমার মনে হয় যে এই মুহূর্তে দুরত্বটা অবসান হলে জাতির জন্য তা কল্যাণকর।"

যার কারণ হিসেবে, বিএনপির কিছু নেতার সাম্প্রতিক বক্তব্য বা অবস্থানকেই দুষছেন তিনি। "বিএনপির কতিপয় লোকের আচরণ ও বক্তব্য জামায়াতের জন্য কষ্টদায়ক, স্পর্শকাতর হয়ে পড়েছে," বলেন মি. বাবর।

"জুলাই চার্টার ঘোষণার আগেই তাদের ভুল বোঝাবুঝির অবসান করা ঠিক হবে" বলেও মত সালাহউদ্দিন মুহাম্মদ বাবরের। এক্ষেত্রে দুই পক্ষের সাথে সরকারকেও আলোচনার পরামর্শ তার।

সরকারের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক

জামায়াতের সঙ্গে কিছুটা মতভেদ তৈরি হলেও বিএনপির সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের সম্পর্কে ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকদের কেউ কেউ।

ঈদুল আজহার আগেও নির্বাচনের রোডম্যাপ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনের শপথসহ কয়েকটি ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব প্রকাশ্যে এসেছিল।

সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছিলেন দলটির অনেক সিনিয়র নেতা। ক্ষোভ জানিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের প্রতিও।

গত ২৮শে মে, ঢাকায় আয়োজিত তারুণ্যের সমাবেশ থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশনাও দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

ঈদের আগে জাতীর উদ্দেশে দেয়া ভাষণে ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধের যেকোনো একটি দিনে নির্বাচনের ঘোষণায় ক্ষোভ বাড়ে বিএনপিতে।

ওই ভাষণে মি. ইউনূস "শব্দ চয়নে রাজনৈতিক ভব্যতার সীমা অতিক্রম" করেছেন এবং একটি "বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন"- এমন অভিযোগ আনে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটি।

কিন্তু গত ১৩ই জুন লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক ও যৌথ বিবৃতিতে আগামী রোজার আগের নির্বাচন আয়োজনের সম্ভাবনা তৈরিতে দলটির সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের সম্পর্কে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা।

এমনকি স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের পর দলের স্থায়ী কমিটির সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে দ্বন্দ্ব তৈরি হয় এমন কিছু না করার বিষয়েও সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়