শিরোনাম
◈ সৌদি আরব কর্মী ভিসায় যেতে লাগবে না মেনিনজাইটিসের টিকা ◈ সাইবার সিকিউরিটি আইনের সব মামলা প্রত্যাহার করা হবে: আসিফ নজরুল ◈ আবারও সীমান্তে বিএসএফের কাঁটাতারের বেড়া দেয়ার চেষ্টা, বিজিবির বাধা ◈ চার অতিরিক্ত ডিআইজিসহ পুলিশের ২০ কর্মকর্তাকে বদলি ◈ তিন ম্যাচের একটিতে হারলেই স্বপ্ন ভাঙতে পারে শাকিবের ঢাকার, অন্য দলের সামনে কী সমীকরণ জেনে নিন ◈ শিল্পী সমিতি থেকে আজীবন বহিষ্কৃত হলেন চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তার ◈ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশ-পাকিস্তানের সম্পর্ক উষ্ণ, ৩ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্যের আশা ◈ ধরা পড়েননি পালানো ওসি, ‘সম্ভবত’ ইন্ডিয়া চলে গেছেন: ডিএমপি কমিশনার ◈ ৩ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে পয়োবর্জ্য শোধনাগার ব্যর্থতায় রূপ নিতে চলেছে ◈ কৃষি পণ্যের বিশেষ ওএমএস বন্ধ করল সরকার

প্রকাশিত : ০৫ জানুয়ারী, ২০২৫, ১২:৫৩ রাত
আপডেট : ২১ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৩:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ নিয়ে নতুন বিতর্ক, বাড়ছে বিভেদ

মহসিন কবির: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ নিয়ে রাজনীতিবিদদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের বিভেদ বাড়ছে। বায়াত্তরের সংবিধান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত শাসনতন্ত্র এটা বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই।পক্ষ-বিপক্ষের বাগবিতন্ডা চলছে। 

এদিকে জুলাই ঘোষণাপত্রের বিষয়ে জনগণকে সচেতন করতে আগামী ৬ থেকে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত সারাদেশে লিফলেট বিতরণ, সমাবেশ ও গণসংযোগ করবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের পক্ষ থেকে দৃঢ়ভাবে বলা হচ্ছে, ’৭২-এর সংবিধান কবরস্থ করে নতুন বন্দোবস্ত করা হবে। এমন বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামী ছাড়া অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। শুধু তাই নয়, এ আন্দোলনে কার কী ভূমিকা তা নিয়েও পক্ষে-বিপক্ষে নানা বক্তব্য আসছে। ফলে আন্দোলনে অংশীজনদের মধ্যে মতবিরোধ ও বিভেদ স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

এমন এক বাস্তবতায় জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণায় কী আসতে পারে, আদৌ জনমানুষের আকাক্সক্ষার প্রতিফলন তাতে ঘটবে কিনা- এ নিয়ে অস্পষ্টতা বিরাজ করছে। রাজনীতিকরা বলছেন, গণ-অভ্যুত্থানের পর ঘোষণাপত্র উত্থাপনের ইতিহাস নেই। তাহলে কেন এই ঘোষণা করা হচ্ছে জানেন না তারা। অন্যদিকে ঘোষণাপত্রে সব পক্ষের মতামত থাকা জরুরি বলে মনে করেন বিশিষ্টজনরা। বিগত ১৬ বছরের লড়াই-সংগ্রামের প্রতিফলন এই ঘোষণাপত্রে অন্তর্ভুক্ত হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে বলেও মনে করেন রাজনীতিকরা।

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. আল মাসুদ হাসানুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেছেন, জুলাই ঘোষণাপত্রে বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা তাদের ইচ্ছার প্রতিফলন প্রকাশ করেছে। সরকার যেহেতু দায়িত্ব নিয়েছে, তারা সব পক্ষের মতামত নিয়ে ঘোষণাপত্রটি প্রকাশ করবে। তিনি মনে করেন, এটা একদিক থেকে ভালো হয়েছে। কারণ ছাত্ররা এই ঘোষণা করলে একপক্ষ দ্বিমত পোষণ করতে পারত। এতে বিভেদ আরও বাড়ত। এখন যা হবে তাতে সবপক্ষের মতামত থাকলে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে বলে মনে করেন তিনি।

গত ৩১ ডিসেম্বর বিকাল ৩টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে বিপ্লব আখ্যা দিয়ে ঘোষণাপত্র পাঠের সিদ্ধান্ত নেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা। পাশাপাশি ছাত্রদের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে বাহাত্তরের সংবিধানকে কবর দেবেন তারা। এককভাবে এমন ঘোষণাপত্র পাঠের সিদ্ধান্ত এবং ’৭২-এর সংবিধানকে কবর দেওয়ার বক্তব্যে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে বিশিষ্টজনরা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে থাকেন। এরপর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়ে দেন, ঘোষণাপত্রের এ উদ্যোগের সঙ্গে সরকারের সংশ্লিষ্টতা নেই। 

তিনি এটিকে ‘প্রাইভেট ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তারপর ঘোষণাপত্রের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে সমাবেশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সেখানে ১৫ দিনের মধ্যে ঘোষণাপত্র প্রকাশ করতে সরকারকে আল্টিমেটাম দেওয়া হয়।

এসব বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দলীয় সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। জানা গেছে, ওই আলোচনায় জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তির ত্যাগ-তিতিক্ষা, গুম, হত্যা, নির্যাতন, হামলা, মামলাসহ তাদের অবদান যুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত ’৭২-এর সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারেও পরামর্শ দিয়েছেন।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় গণমাধ্যমকে বলেছেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। এই ছাত্র-জনতা কারা? আমরা যারা গত ১৬ বছর গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছি, সংগ্রাম করেছি তারাই তো। লড়াই করতে গিয়ে আমাদের নেতাকর্মীসহ গণতন্ত্রকামী মানুষ জীবন দিয়েছেন। গুম-খুন, জেল-জুলুম নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের নির্যাতনের পুরোচিত্র এ ঘোষণাপত্রে থাকতে হবে। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে একমত হয়ে তা করতে হবে।

সংগ্রাম-লড়াইয়ের প্রেক্ষিত উল্লেখ থাকার মতামত দিয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি আসম আবদুর রব। তিনি  বলেছেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং ’২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের অভিপ্রায় পূরণের অঙ্গীকার থাকতে হবে, সংগ্রাম-লড়াইয়ের প্রেক্ষিত উল্লেখ থাকতে হবে, জনগণের মালিকানা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি থাকতে হবে, গণহত্যার দায়ে অভিযুক্তদের বিচারের ঘোষণা থাকতে হবে, প্রজাতন্ত্র নির্মাণে রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক সংস্কারের পরিকল্পনা থাকতে হবে।

জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেছেন, ঘোষণাপত্র আগে তৈরি হয়। আমরা যদি ইতিহাস দেখি বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধ, তাহলে দেখব ঘোষণা পাঠ হয়েছে; ঘোষণা হয়েছে তারপর মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে। এখন জুলাই অভ্যুত্থানের কী ঘোষণা দেবেন তা আমার মাথায় কাজ করছে না। কথাবার্তায় যা মনে হচ্ছে তাদের বিষয়টা অস্পষ্ট। এই অস্পষ্ট বিষয় কেন সামনে আসছে তা আমার বোধগম্য নয়।

‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, আমি এটাকে বিপ্লব বলছি না। এটা জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণা। অভ্যুত্থানের পরপর ঘোষণা করলে যে আবেদন ছিল, সাড়ে চার মাস বা পাঁচ মাস পর সেই আবেদন অনেকখানি ফিকে হয়ে গেছে। তারপরও যদি এটা করা যায় খারাপ হবে না। সেদিক থেকে রাজনৈতিক দল, ছাত্র, তরুণসহ সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে কথা বলে সবার মতামতের ভিত্তিতে ঘোষণা তৈরি করা যেতে পারে।

এদিকে জুলাই প্রক্লেমেশন বা জুলাই ঘোষণাপত্রের বিষয়ে জনগণকে সচেতন করতে আগামী ৬ থেকে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত সারাদেশে লিফলেট বিতরণ, সমাবেশ ও গণসংযোগ করবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি।

শনিবার (৪ জানুয়ারি) রাজধানীর বাংলামোটরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, গত ৩১ ডিসেম্বর শহিদ মিনারে মার্চ ফর ইউনিটিতে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে জুলাই প্রক্লেমেশন ঘোষণার দাবি জানিয়েছি। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এই অভ্যুত্থানে যেমন দেশের প্রত্যেক মানুষের অংশগ্রহণ ছিল, আমরা মনে করি এই ঘোষণাপত্রে জনমানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফল ঘটবে।

তিনি বলেন, আমরা মানুষের কাছে ছুটে যেতে চাই। দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, পেশাজীবী মানুষের মাঝে জনসংযোগ চালাব। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি যৌথভাবে এই কাজটি করবে।

তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদ সরকার সব মানুষের টুটি চেপে ধরেছিল। আমরা প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের কাছে ছুটে যেতে চাই। সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারীও উপস্থিত হন।

দলটির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বিবিসি বাংলাকে বলছেন দেশের বর্তমান ভঙ্গুর অবস্থায় হুট করে 'ঘোষণাপত্র' প্রকাশের পেছনের উদ্দেশ্য আসলে কী? এটা না জানলে তো নানা চিন্তার উদ্রেক হবেই। আবার ঘোষণা দিয়েও করা হলো না কেন। সেটারও বা কারণ কী।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক জোবাইদা নাসরীন বিবিসি বাংলাকে বলছেন, জুলাই 'ঘোষণাপত্রে' যেসব বিষয় আনার কথা বলা হচ্ছিলো সেগুলোর সাথে বিএনপির যোগসূত্র কম এবং সে কারণেই বিএনপির কাছে এটিকে 'নির্বাচন বিলম্বিত করার একটি চেষ্টা' হিসেবেই মনে হয়েছে বলে তার ধারণা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়