শিরোনাম
◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২০ আগস্ট, ২০২২, ০৩:৫৫ রাত
আপডেট : ২০ আগস্ট, ২০২২, ০২:২৯ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

শঙ্কা বাড়ছে পারমাণবিক বিপর্যয়ের

ছবি: সংগৃহীত

ইউলিয়া কেসাইভা ও আনা চেরনোভা (সিএনএন থেকে): রাশিয়া-অধিকৃত এনেরহোদার শহরে বাস করেন ইউক্রেনীয় নাগরিক ওলগা। দক্ষিণ-পূর্ব ইউক্রেনের দিনিপ্রে্রা নদীর তীরবর্তী এই শহর থেকে প্রতিদিন পার্শ্ববর্তী জাপোরিঝিয়া নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টে (পারমাণবিক বিদ্যত্ চুল্লি) কাজ করতে যান তিনি। প্ল্যান্টটি এখন আলোচনার কেন্দ্রে। ইউরোপের সবচেয়ে বড় নিউক্লিয়ার কমপ্লেক্স এটি। প্ল্যান্টটির আশপাশ জুড়ে ক্রমবর্ধমান গোলাগুলির পর বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে এটি। অবস্হার পরিপ্রেক্ষিতে সম্ভাব্য পারমাণবিক দুর্ঘটনার কথা বলছেন অনেকেই।

কিয়েভ অভিযোগ করে আসছে, রাশিয়ান বাহিনী নিউক্লিয়ার কমপ্লেক্সটির ভেতরে ভারী অস্ত্রশস্ত্র মজুত করেছে। গত মার্চ মাসে প্ল্যান্টটি দখলে নেয় রুশ বাহিনী। এর পর থেকেই প্ল্যান্টের ভেতরে অস্ত্র-গোলাবারুদ জড়ো করা শুরু করে দখলদার বাহিনী। প্ল্যান্টটিকে তারা মূলত আক্রমণ চালানোর ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। কারণ তারা ভালোভাবেই জানে যে, এখান থেকে আক্রমণ চালালে ইউক্রেন পালটা গুলি ছুড়বে না। কেন না, ইউরোপে যে ছয়টি নিউক্লিয়ার প্ল্যান্ট আছে এটি তার মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং এই প্ল্যান্টকে ঘিরে আক্রমণ চালালে তা এক বিরাট বিপর্যয় বয়ে আনবে। পালটা অভিযোগ আছে মস্কোর পক্ষ থেকেও। মস্কোর দাবি, ইউক্রেনীয় সেনারা সাইটটিকে (প্ল্যান্ট) টার্গেটে পরিণত করেছে। এর আশপাশে গুলি ছুড়ছে তারা। প্রকৃতপক্ষে উভয় পক্ষই নিউক্লিয়ার টেররিজমের (পারমাণবিক সন্ত্রাসবাদ) জন্য একে অপরের দিকে আঙুল তোলার চেষ্টায় মরিয়া।

ওলগা ও তার ইউক্রেনীয় সহকর্মীরা চলমান বাজে পরিস্হিতির মধ্যেও প্ল্যান্টে কাজ করা চালিয়ে যাচ্ছেন। চলমান ঘটনাদৃষ্টে পারমাণবিক বিপর্যয়ের এই শঙ্কা তাদের জন্য কেবল ‘দুঃস্বপ্নের ভূত’ নয়; বরং তাদের জন্য প্র্রতিদিনের বাস্তবতা এটি।

সিএনএনকে দেওয়া ওলগার সাক্ষাত্কারে এক কঠিন পরাবাস্তবতার চিত্র উঠে আসে। ওলগা বলেন, ‘এটি তাদের জন্য ‘ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখার মতো’। এই প্ল্যান্টে কাজ করা লোকজনের ওপর রাশিয়ান বাহিনী কড়া নজরদারি চালায়। যদিও ইউক্রেনীয় প্রযুক্তিবিদদের দ্বারা প্ল্যান্টটি পরিচালিত হচ্ছে এখনও।’

পারমাণবিক স্হাপনাটি দখলের পর থেকে বিগত কয়েক মাসে বহু ইউক্রেনীয় কর্মী ধীরে ধীরে কাজে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। বর্তমানে ছিন্নভিন্ন কিছু কক্ষে আংশিকভাবে কাজ চালানো হচ্ছে। এক্ষেত্রে কর্মীদের থাকতে হয় কড়া নজরদারির মধ্যে। কমপ্লেক্সের ভেতরে প্রবেশর জন্য তাদের দুটি চেকপয়েন্ট অতিক্রম করতে হয়। প্রতিটি পয়েন্টে তাদের ওপর রাশিয়ান সৈন্যরা কড়া তল্লাশি চালায়। ওলগা বর্ণনা করেন, ‘প্ল্যান্টটি রুশ বাহিনীর হাতে বেদখলের পরে শুধু অপারেশনাল কর্মীরা স্টেশনে কাজ করছেন। সেখানে অনেকগুলো ভাঙা এবং পোড়া ঘর ও জানালা ছিল। কর্মীরা ধীরে ধীরে কাজ ছাড়তে শুরু করে। রুশ বাহিনী শুধু কিছু নির্দিষ্ট কাজের কর্মীদের আসতে বলছে এখন।’ ওলগা বলতে থাকেন, ‘প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ কর্মী চলে গেছে। কর্মী কমে যাওয়ার ফলে ও যুদ্ধের দামামায় কাজের গতি ক্রমশ দুর্বল হয়ে আসছে।’

উভয় পক্ষকে পাওয়ার স্টেশনের কাছে সামরিক কার্যক্রম বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। স্পষ্ট হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে জাতিসংঘ বলেছে—প্ল্যান্টের কাছে সামরিক কার্যক্রম বন্ধ না করলে বড় মাশুল গুনতে হবে উভয়পক্ষকেই। কিন্তু এর ঠিক কয়েক ঘণ্টা পরই প্ল্যান্টের চারপাশে গোলাবর্ষণের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় ইউক্রেন ও রাশিয়া পরস্পরকে দোষারোপ করছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্েতানিও গুতেরেস এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘উত্তেজনা কমানোর পরিবর্তে গত বেশ কয়েকদিন ধরে আরো গভীর উদ্বেগজনক ঘটনার খবর পাওয়া গেছে যেগুলো অত্যন্ত দুঃখজনক। এভাবে চলতে থাকলে বড় বিপর্যয় নেমে আসবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি প্ল্যান্ট থেকে কর্মী ও সামরিক সরঞ্জাম প্রত্যাহারের পাশাপাশি সাইটে কোনো বাহিনী মোতায়েন কিংবা সামরিক সরঞ্জাম মজুত না করার আহ্বান জানাচ্ছি।’

১১ আগস্ট নিউইয়র্কে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে ভাষণ দিতে গিয়ে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্হার (আইএইএ) প্রধান রাফায়েল গ্রোসি বলেন, ‘সাম্প্রতিক হামলার ফলে প্ল্যান্টের কিছু অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে। এটি সম্পূর্ণরূপে ‘অগ্রহণযোগ্য কর্মকাণ্ড’। এর ফলে সম্ভাব্য রেডিয়েশন লিকেজের (পারমাণবিক বিকিরণ) ফলে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে। অবিলম্বে সেখানে একটি বিশেষজ্ঞ টিম প্রবেশের অনুমতি দেওয়া দরকার। পরিস্হিতি খুব দ্রুত অবনতির দিকে যাচ্ছে।’ গ্রোসি আরো বলেন, ‘এটি একটি গুরুতর সময়। চরম বাজে সময়। আইএইএকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জাপোরিঝিয়াতে তার মিশন পরিচালনা করার অনুমতি দেওয়া উচিত।’

ইউক্রেনের রাষ্ট্র-চালিত পারমাণবিক শক্তি সংস্হা এনারগোঅ্যাটম অভিযোগ করে বলেছে যে, রাশিয়ান বাহিনী প্ল্যান্টের একটি সংরক্ষণাগারকে লক্ষ্য করে গোলা বর্ষণ করে। এ জাতীয় আক্রমণের ফলে ‘বিকিরণ’ সৃষ্টি হয়ে মারাত্মক বিপদ ঘটতে পারে। সংস্হাটি তার টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্টে একটি বিবৃতি দিয়ে দাবি করে, প্ল্যান্টটিতে ‘বিকিরণ ও অগ্নি নিরাপত্তা মান লঙ্ঘনের ঝুঁকি’ তৈরি হয়েছে। এবং তা সত্ত্বেও কাজ চালিয়ে যাচ্ছে এটি। ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডেনিস মোনাস্টিরস্কি বলেন, “প্ল্যান্টের ওপর তাদের ‘পর্যাপ্ত নিয়ন্ত্রণ’ নেই। প্ল্যান্টের যে অংশে কাজ করা দরকার সে অংশে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না ইউক্রেনীয় বিশেষজ্ঞদের।” একই দাবি কর্মী ওলগারও—কমপ্লেক্সের কিছু অংশে ইউক্রেনীয় কর্মীদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না।

প্ল্যান্টে হামলার বিষয়ে ইউক্রেনের হাত রয়েছে বলে দায়ী করে আসছে রাশিয়া। দখলদার প্রশাসনের স্হানীয় কর্মকর্তা ভ্লাদিমির রোগভ রাশিয়ান-রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্হা রসিয়া ২৪ চ্যানেলকে বলেন, “ইউক্রেনের হামলার পর প্ল্যান্টের পাওয়ার ট্রান্সমিশন লাইনের ‘নিরবচ্ছিন্নতা’ বিঘ্নিত হয়ে পড়ে।” যদিও কীভাবে এই হামলার ঘটানা ঘটানো হয় তা নিয়ে তিনি কিছুই বলতে পারেননি।

পালটা যুক্তি দিয়ে প্ল্যান্টে হামলার জন্য রাশিয়াকে দায়ি করছে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি, পারমাণবিক বিদু্যত্ কেন্দ্র থেকে ছোড়া রুশ রকেট আঘাত হানে দিনিপ্রো নদীর ডান তীরে নিকোপোল শহর ও আশপাশের জেলাগুলোতে। স্হানীয় কর্মকর্তাদের মতে, গোলাগুলিতে কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হন। তারা দাবি করেন, নিহতদের মধ্যে একজন ১৩ বছর বয়সি মেয়েও রয়েছে।

গত কয়েক মাস ধরে কমপ্লেক্সে রাশিয়ান বাহিনীকে সামরিক সরঞ্জাম আনতে দেখেছেন প্ল্যান্টের কর্মী ওলগা। এর বেশির ভাগই এখন সকলের দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। ওলগা বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে স্টেশনের মধ্যে অল্পমাত্রায় সরঞ্জাম ছিল। এখন এটি আরো বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্ল্যান্টের যে এলাকায় এসব সংরক্ষণ করা হচ্ছে সেখানে কর্মীদের যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় না। কিন্তু যখন কাজ থেকে বাড়ি ফেরেন তারা, তখন রাশিয়ান বাহিনী মজুতকৃত সামরিক অস্ত্রের প্রয়োগ ঘটায়। রাতের বেলা ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটানো শুরু হয়। শহরে গুলি চালায় রুশ বাহিনী। তাদের গোলার আঘাতে নদীর তীরে এতটাই ঝাঁকুনি লাগে যে বাড়িঘর কাঁপতে থাকে। জানালা কাঁপতে থাকে। রাতের নীরবতায় মানুষ যখন ঘুমায় তখন এটি অতিমাত্রায় ভয়ঙ্কর।’

মিরাভস্কা নামক ৪৫ বছর বয়সি এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ফোনে সিএনএনকে বলেন, ‘বিদু্যত্কেন্দ্রে কিছু ঘটলে, কী মাত্রায় যে দুর্ঘটনা ঘটবে...আমি তা ভাবতে পারছি না। আপনি কি মনে করেন আমাদের কোনো কিছুতে বাঁচাতে পারে? আমরা পারমাণবিক বিদু্যত্কেন্দ্র থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরে নদীর ওপারে থাকি! কাজেই দুর্ঘটনা ঘটলে কোনো কিছুতেই আমাদের বাঁচাতে পারবে না; এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।’

মিরাভস্কা বর্ণনা করেন, গত মাসে যখন গোলাগুলি আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে তখন অনেক বাসিন্দা আতঙ্কে পালিয়ে যায়। তবে তিনি থেকে যান। রাতে, তিনি ও তার কিশোর ছেলে গৃহপালিত প্রাণীদের নিয়ে বাড়ির বেসমেন্টে লুকিয়ে পড়েন। বোমার আঘাত থেকে বাঁচতে বেসমেন্টকে তারা আশ্রয় বানিয়েছেন। সেখানেই তারা থাকেন। মিরাভস্কা বলেন, ‘যখন থেকে তারা আমাদের ওপর গোলাগুলি শুরু করেছে, তখন থেকে জীবন বদলে গেছে। আমি বেসমেন্টে থাকি। আমরা সেখানে রাতে ঘুমাই। এক মাস ধরে সেখানেই ঘুমাচ্ছি।’

প্ল্যান্টকে ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলে তার ফলাফল কী রকম ভয়াবহ হতে পারে, তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, আক্রমণের ঘটনা ঘটলে তা হাই-ভোল্টেজ পাওয়ার লাইনকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। বহু ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহত হবে।

যাহোক, রাশিয়া-ইউক্রেন চলমান বৈরিতা বন্ধের দাবি উঠছে। শিল্পোন্নত দেশগুলোর সংগঠন জি৭ ১০ আগস্ট জার্মানিতে অনুষ্ঠিত এক বৈঠক থেকে একটি বিবৃতি জারি করেছে। রাশিয়াকে তার বাহিনী প্রত্যাহার করে নেওয়ার দাবি জানায় সংগঠনটি। এবং একই সঙ্গে ইউক্রেনের কাছে প্ল্যান্টের নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তর করার আহ্বান জানিয়েছে গ্রুপটি।

জি৭-এর বিবৃতিতে রাশিয়ান সশস্ত্র বাহিনীর ওপর দোষারোপ করা হয়। জি৭ভুক্ত দেশগুলোর বক্তব্য হলো, চলমান হামলা-সংঘর্ষের ঘটনাগুলো পারমাণবিক দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে এবং তা ইউক্রেনের জনসংখ্যা, প্রতিবেশী রাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিপন্ন করছে। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের একজন মুখপাত্র বলেছেন, পারমাণবিক বিদু্যত্কেন্দ্রের চারপাশকে ‘অসামরিক অঞ্চল’ ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এবং একই সঙ্গে রাশিয়াকে ‘ইউক্রেনের পারমাণবিক স্হাপনায় বা তার কাছাকাছি যে কোনো ধরনের সামরিক অভিযান বন্ধ করার’ দাবি যুক্তরাষ্ট্রের। তবে, এসব কথা রাশিয়ার কানে ঢুকবে বলে মনে হয় না। লেখকদ্বয়: সাংবাদিক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়