পাপ্পী আয়ান: [২] মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। সকল শ্রেণি পেশার মানুষ উদযাপন করছে ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে। তবে লক্ষীপুরের মেঘনাতীরের মানতা সম্প্রদায়ের (ভাসমান জেলে) কাছে নেই কোনো ঈদের খুশি। কারণ টানা ১ মাস ১০ দিন তারা মাছ শিকার করতে পারেননি। অনেকের ঘরে এখন পেট ভরে ভাত খাওয়ার চালও নেই। তাদের কাছে ঈদের খুশিতো দূরের কথা, এখন খেয়ে পরে বেঁচে থাকাই দায়।
[৩] মানতা সম্প্রদায়ের লোকজন জানান, তাদের উপার্জনের একমাত্র উৎস্য হচ্ছে নদীতে মাছ শিকার। আর ওই মাছ বিক্রি করেই তারা জীবিকা নির্বাহ করেন। পরিবারের ছোট শিশুটিও এ পেশায় নিয়োজিত। শিক্ষার আলো নেই বললেই চলে তাদের মাঝে। আর অন্য কোনো কর্ম তারা জানেনও না। কিন্তু জাটকা সংরক্ষণের লক্ষ্যে নদীগুলোতে মার্চ-এপ্রিল দুই মাস সকল প্রকার মাছ শিকার নিষিদ্ধ। আর তাই কাজ না থাকায় বন্ধ হয়েছে আয়ের পথ। সংসারে দুবেলা খাবার জুটাছে না এই জেলে সম্প্রদায়ের।
[৪] ৬০ বছর বয়সী মারজাহান বেগম জানান, চার ছেলেসহ তার পরিবারে ৯ সদস্য। মাছ শিকার করেই সবার আহারের ব্যবস্থা করা হয়। ৫টি এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছেন তিনি। মাছ শিকার বন্ধ, তাই আয় রোজগারও বন্ধ। কিন্তু ঋণের কিস্তি বন্ধ নেই। কিস্তির টাকা দিতে দেরি হলেও কথা শুনতে হয়। এজন্য মহাজনের কাছ থেকে ‘দাদন’ (আগাম অর্থ) নিয়েই কিস্তি এবং সংসার চালিয়ে নিচ্ছেন। ঈদ মানে এখন শুধু একটি শব্দ তাদের জন্য। ভাত জুটলেই হয়, ঈদ নিয়ে কোনো চিন্তা নেই তাদের। মাছ শিকার করতে পারলেই তারা ঈদের আনন্দে আনন্দিত হন।
[৫] জেলে ইউসুফ, রাকিব হোসেন ও সফিক মাঝি জানান, দুই মাস মাছ শিকার বন্ধ। এ সময়টা সবার খুবই কষ্টে কাটে। আয়-রোজগার বন্ধ থাকে। জন্মের পর একটু বড় হতেই পরিবারের সঙ্গে মাছ শিকারে হাত লাগাতে হয়। এটা ছাড়া তাদের অন্য কোনো কাজ জানাও নেই। নদীতে অভিযানের সময় ধারদেনা করে সংসার চলে। গাঙে না গেলে খাবার জোটে না। সূত্র. জাগোনিউজ
[৬] অন্যদিকের মতো চাঁদপুর আনন্দ বাজারের জেলে পল্লীতে বসবাস করা জেলে বিল্লাল হোসেন তার আদরের দুই সন্তানকে কথা দিয়েছিলেন এই ঈদে কিনে দিবে তাদের পছন্দের পোশাক। তবে ধার দেনা করে চলা সংসারে যেখানে দুবেলা খাবার যোগানোর নিশ্চয়তা নেই। সেখানে অধরাই রয়ে গেল স্ত্রী-সন্তানদের নতুন কাপড় কিনে দেয়ার স্বপ্ন।
[৭] বিল্লাল বলেন, সবার একটা আশা থাকে সন্তাদের নতুন জামা কিনে দিবে। কিন্তু এবারের দুইমাসের অভিযানের কারণে কারও জন্য কিছুই কেনা হয়নি। সূত্র. এখনটিভি
[৮] এদিকে বরগুনায় ঈদের দিনেও মাছ শিকার করছেন জেলে সম্প্রদায়। জানা গেছে, গভীর বঙ্গোপসাগরের পাশাপাশি নদ-নদীতে ঈদের দিনেও থেমে নেই। প্রতিদিনের মতো ভোর রাতে নদীতে জাল ফেলে আবার সময় মতো জাল টানতে হবে। তাই ঈদের নামাজ শেষে বিষখালী ও বলেশ্বর নদে জাল টানতে যান কবির হোসেন, আ. জব্বার, সোহরাব ভাণ্ডারিসহ অনেক জেলে।
[৯] তারা বলেন, আমাদের কোনো বিশেষ দিন নেই। প্রতিদিনই আমাদের কাছে সমান। ঈদ ছাড়া যেমন আমাদের দিন কাটে, ঈদের দিনও ঠিক এমনভাবেই কাটে। প্রতিদিনের মতো ভোর রাতে নদীতে জাল ফেলে আসছি ঈদের নামাজটা পড়ে আবার জাল টানতে যাচ্ছি।
[১০] আ. জব্বার বলেন, ঈদের দিন সকালে বাবা-মায়ের কবর জেয়ারত করে, ঈদের নামাজ শেষ করে নদীতে জাল টানার জন্য রওয়ানা হয়েছি। যদি কয়েকটা মাছ পাই তা বিক্রি করে পোলাপাইনের জন্য নতুন জামা কিনবো।
[১১] একই গ্রামের নুরুল আলম বলেন, আমরা এ পেশা ছাড়া আর কোনো কাজ শিখিনি। ভোর রাতেই নদীতে আইছি, এখন পর্যন্ত বাড়িতে যাইতে পারি নাই, ঈদের নামাজও পড়তে পারি নাই। এটাই আমাদের ঈদ। সূত্র. বাংলানিউজ ২৪ ডটকম । সম্পাদনা : কামরুজ্জামান
এসবি২
আপনার মতামত লিখুন :