শিরোনাম
◈ আওয়ামী লীগের পক্ষে ফেসবুক-ইউটিউবে কথা বললেই গ্রেপ্তার! ◈ কী লিখেছিলেন মাহফুজ আলম, ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ডিলিট করলেন কেন? ◈ জনঅভিযোগে সাড়া দিচ্ছে সরকার: দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে ৯০৯টি ই-মেইল, শুরু হয়েছে পর্যালোচনা ও ব্যবস্থা গ্রহণ ◈ শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ভুলে সব শেষ, খেসারত দিচ্ছেন সাধারণ কর্মীরা ◈ “নারীকে অপমান ইসলামবিরোধী কাজ”—নারী কমিশন নিয়ে সমালোচনার জবাবে ফরহাদ মজহার ◈ ভারতের ছত্তিশগড়ে ট্রাকের সংঘর্ষে ১৩ জন নিহত ◈ পাকিস্তানে আত্মঘাতী হামলা, ২ পুলিশ নিহত ◈ আসছে ঘূর্ণিঝড় 'শক্তি'র আশঙ্কা: ২৪-২৬ মে উপকূল আঘাত হানতে পারে ◈ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ নিয়ে আইনজীবীদের ব্যাখ্যা, চলে যেতে পারে আন্ডারগ্রাউন্ডে ◈ পাকিস্তান সফ‌রে যাওয়া কি আদৌ নিরাপদ! চিন্তিত বি‌সি‌বি

প্রকাশিত : ১১ ডিসেম্বর, ২০২৩, ০৩:৪৯ রাত
আপডেট : ১১ ডিসেম্বর, ২০২৩, ০৩:৪৯ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের সেই হাসি আমি আজও ভুলতে পারিনি

মিজানুর রহমান খান

মিজানুর রহমান খান: সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের মৃত্যুর খবরে ২০০৬ থেকে ২০০৮ সালের অনেক ঘটনা মনে পড়লো। আমার সাংবাদিকতা জীবনে এই সময়টা ছিলো উল্লেখযোগ্য। এই দুই বছর সময়কালে যতো উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা নিয়ে প্রতিদিন স্টুডিওতে মাইক্রোফোনের সামনে বসেছি, এরকম অভিজ্ঞতা পরে খুব কমই হয়েছে। এ সময় আমি বেশকিছু সাক্ষাৎকার নিয়েছি যেগুলো পরে রাজনৈতিক উত্তেজনা তৈরি করেছে, এমনকি সেসব সাক্ষাৎকারে উপদেষ্টা, সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতারা যেসব কথা বলেছেন সেসবের উপর ভিত্তি করে পরের রাজনৈতিক গতিপথ নির্ধারিত হয়েছে। বিবিসিতে সেসময় সকালের অনুষ্ঠানের জন্য নাইট শিফটে কাজ করতে হতো। এজন্য আমরা অফিসে আসতাম লন্ডনের স্থানীয় সময় সন্ধ্যায়। এসেই খুব দ্রুত সম্পাদকীয় কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে তাড়াহুড়ো করে কয়েকটি সাক্ষাৎকার নিতে হতো। কারণ বাংলাদেশে তখন রাত গভীর হয়ে যেতো এবং যতো বিলম্ব হতো, উপদেষ্টা, কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ এবং বিশ্লেষকদের ফোনে পাওয়া ততোই অনিশ্চিত হয়ে পড়তো।

এই সময়ে শীর্ষস্থানীয় সব রাজনীতিকদের সঙ্গে প্রায় প্রতি রাতে কথা বলার কারণে তাদের সঙ্গে একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছিলো। এই সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত হৃদ্যতাপূর্ণ ও আস্থামূলক। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যেসব উপদেষ্টার সঙ্গে এরকম সম্পর্ক তৈরি হয়েছিলো, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। তাকে যখনই ফোন করতাম, এমনকি রাত বারোটার পরেও, তিনি নিজেই ফোন ধরতেন এবং কিছুক্ষণ খোশ গল্পের পর তিনি সানন্দে সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হয়ে যেতেন। আমার মনে পড়ে একদিনের ঘটনা ছাড়া তিনি আমাকে কখনো সাক্ষাৎকার দিতে অস্বীকৃতি প্রকাশ করেননি। আমাকে তিনি এতোটাই বিশ্বাস করতেন যে তার নিজের কঠিন সময়েও অনুরোধ করলে তিনি ইন্টারভিউ দিতে রাজি হয়ে যেতেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ছাত্ররা সেনাবাহিনীর একজন সদস্যকে লাথি মারার ঘটনায় তিনি আমাকে যে সাক্ষাৎকারটি দিয়েছিলেন তাতে তিনি এমন কিছু গরম গরম কথা বলেছিলেন যা রাজনীতিতে চরম উত্তেজনা তৈরি করেছিলো এবং তার জের ধরেই তিনি সেদিন সাক্ষাৎকার দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। 

আলোচিত ওই সাক্ষাৎকার দিয়ে তিনি কিছুটা বিপদে পড়ে গিয়েছিলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার, সেনাবাহিনী এবং রাজনৈতিক দলগুলোর দিক থেকে তিনি প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে আক্রমণের মুখে পড়েছিলেন। সেই অসন্তোষের খবর আমি অন্যান্য উপদেষ্টা ও সেনা কর্মকর্তাদের মুখ থেকেও শুনেছিলাম। এরকম পরিস্থিতিতে একদিন রাতে তাকে ফোন করি। কয়েক মিনিট কথা বলার পর তাকে যখন সাক্ষাৎকার দিতে অনুরোধ করি তখন তার স্বর নিচু হয়ে যায়। আমি বুঝতে পারি যে তিনি এসব বিষয় নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কথা বলতে চাইছিলেন না। তিনি মনে করছিলেন যে এর ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে যেতে পারে। কিন্তু আমি ছিলাম নাছোড়বান্দা। কথায় কথায় রাতও বেড়ে যাচ্ছিলো। তাই তাকে যখন আরো একবার বোঝানোর চেষ্টা করি, এখনও স্পষ্ট মনে আছে, তার সেই কণ্ঠ এতো বছর পরেও কানে বাজে, আমাকে অবাক করে দিয়ে অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে তিনি বলেছিলেন : আজ রাতে না লক্ষীটি! আমি তখন হাসতে হাসতে তাকে বলেছিলাম, আপনার বলা এই কথাটি আমি আমার জীবনে শুধু স্ত্রীর মুখেই শুনেছি। তিনি আমার ওই রসালো ইঙ্গিত বুঝতে পেরেছিলেন এবং স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে এতো উচ্চস্বরে হেসে উঠেছিলেন যে ওই হাসি আমি আজও ভুলতে পারিনি। লেখক: সাংবাদিক। ফেসবুকে ৯-১২-২৩ প্রকাশিত হয়েছে। 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়