শিরোনাম
◈ নারায়ণগঞ্জ থেকে কাশিমপুর কারাগারে আইভী ◈ ‘মিথ্যাচার ও আক্রমণাত্মক বক্তব্যের’ জবাব দিলেন আসিফ নজরুল ◈ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই গণহত্যার রিপোর্ট দাখিল সোমবার ◈ জনগণ দ্রুত নির্বাচন চায় : ডা. জাহিদ ◈ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি সরকার গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছে: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিবৃতি ◈ অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত আইপিএল ◈ যমুনার সামনে বিক্ষোভকারীদের জুমার নামাজ আদায়, নিরাপত্তা জোরদার, বাড়তি সতর্কতা ◈ নিয়ন্ত্রণরেখায় ফের ভারত-পাকিস্তান সেনাদের গোলাগুলি ◈ পাকিস্তান যদি পাল্টা আঘাত হানে, তখন তা ঘোষণার কোনও দরকার হবে না: জেনারেল আহমেদ শরিফ ◈ অনিশ্চয়তার মাঝেও পি‌সি‌বি চায় বাংলাদেশ দল পাকিস্তান সফরে আসুক

প্রকাশিত : ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৩, ১০:৪৫ দুপুর
আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৩, ১০:৪৫ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ভূমিকম্প : বাংলাদেশ কতোটা ঝুঁকিতে আছে?

অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল: ২ ডিসেম্বর, আনুমানিক সকাল ৯:৩৫ বাংলাদেশ একটি ভূমিকম্পের কারণে কেঁপে ওঠে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ মেটেরিওলজিক্যাল ডিপার্টমেন্ট(বিএমডি) উভয়ের মতে, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫.৬, উৎপত্তিস্থল ছিল লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার প্রায় ১০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে  রাজধানীর ৮১ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে। এটি প্রায় ৩৮.৫ কিলোমিটার গভীরতায় ঘটেছে, যা একটি গভীর ভূ-ত্বক ভূমিকম্পের শ্রেণীবিভাগের অধীনে পড়ে। মজার বিষয় হলো, এ ধরনের সিসমিক কার্যকলাপ উচ্চ মাত্রার ভূমিকম্পের ঝুঁকি বাড়ায় না কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই ধরনের ঘটনার সম্ভাবনা হ্রাস করে।

মডিফাইড মার্কালি ইনটেনসিটি (এমএমআই) স্কেলে, রামগঞ্জের ভূমিকম্পটি রামগঞ্জের কাছাকাছি এলাকায় পরিমাপ করার সময় ৬ ক্যাটাগরিতে পড়ে, যখন ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে আরও বেশি দূরত্বে হ্রাসের তীব্রতা পরিলক্ষিত হয় ময়মনসিংহে ৪ রংপুরে ২ থেকে ৩। ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় এর তীব্রতা ছিল প্রায় ৪ থেকে ৫ দুর্বল ভিত্তি সহ লম্বা ভবন  কাঠামো থেকে আরও বেশি কাঁপানো/তীব্রতার খবর পাওয়া গেছে। স্কেল অনুযায়ী, তীব্রতা ৬-এ পৌঁছায় যদি কম্পন শক্তিশালী হয় সবাই অনুভব করে, ভারী আসবাবপত্র নড়তে থাকে প্লাস্টার দেয়াল থেকে উঠে যায়। তীব্রতা ৩ থেকে ৪ দুর্বল ও হালকা কাঁপুনি চিহ্নিত করে, বেশ লক্ষণীয়ভাবে অনুভূত হয়, কম্পনগুলো একটি পাসিং ট্রাকের মতোই। উচ্চ তীব্রতায় (৬ এর উপরে) কম্পন ভবনের ক্ষতি করে।

এই ভূমিকম্পের কারণে বড় ধরনের কোনো প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় ভূমিকম্পের আতঙ্কে ভবন থেকে নিচে নামতে গিয়ে দুই শতাধিক পোশাক শ্রমিক আহত হওয়া একটি উল্লেখযোগ্য খবর। রামগঞ্জের একজন পুলিশ ইন্সপেক্টর বলেন, ঝাঁকুনির কারণে তিনি ঘুম থেকে ছিটকে পড়েছিলেন, যা তার বিছানায় ভারী ওজনের মতো পড়েছিল। ওই এলাকার ইউএনও তার গাড়িতে থাকা অবস্থায় কম্পনের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করেন। ভূ-পৃষ্ঠে কোনো ত্রুটি থাকলে সাধারণত ভূমিকম্প হয় চ্যুতির উপর দিয়ে চলাচলের ফলে ভূমিকম্পের তরঙ্গের আকারে হঠাৎ শক্তি নির্গত হয়। নিম্ন থেকে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প প্রায়শই বাংলাদেশ ও এর আশেপাশে ঘটে। কারণ দেশটি দুটি প্রধান ভূমিকম্পের উৎসের কাছাকাছি অবস্থিত পূর্বে ইন্দো-বার্মান সাবডাকশন বেল্ট ও উত্তরে ডাউকি ফল্ট। ২ ডিসেম্বরের ভূমিকম্পের কারণে ঘটেছিল বার্মিজ প্লেটের নিচে ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটের সাবডাকশন, সাবডাকশন ফ্রন্ট ঢাকা শহরসহ দেশের মধ্যাঞ্চলের মধ্য দিয়ে উত্তর-দক্ষিণে চলে গেছে।

অনেকে ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে এই এলাকায় যে কোনো সময় ৮ বা তার বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, অন্যরা বলছেন যে মাঝারি থেকে নিম্ন-মাত্রার ভূমিকম্পের মাধ্যমে শক্তির সম্ভাব্য বড়গুলোর ঝুঁকি হ্রাস করে, যখন স্থানীয় ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যগুলোকে হ্রাস করে।আমি আমার দলের সঙ্গে বেশ কয়েকটি গবেষণা পরিচালনা করেছি ও দেখেছি যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বেশিরভাগ ভূমিকম্পই অগভীর ও গভীর ভূত্বকের কাঠামোর সঙ্গে যুক্ত। ভূতত্ত্বে অগভীর ভূত্বকটি ১০ কিলোমিটারের কম গভীর তুলনামূলকভাবে দুর্বল পাললিক শিলা দ্বারা গঠিত, যখন গভীর ভূত্বকটি ১০-৪০ কিলোমিটার গভীর আগ্নেয় ও রূপান্তরিত শিলা দ্বারা গঠিত। একটি ভূত্বক ভূমিকম্পের সর্বোচ্চ মাত্রা হলো ৭.৫, এর বেশি নয়।
রামগঞ্জ ভূমিকম্প একটি গভীর ভূত্বক বৃহত্তর বরিশাল ও চাঁদপুর/কুমিল্লা অঞ্চল একটি অভিকর্ষ-উচ্চ অঞ্চল দ্বারা চিহ্নিত, যেখানে ভূত্বকের গভীরতা তুলনামূলকভাবে কম। তাই গভীর ভূত্বক ভূমিকম্প সেখানে ঘটতে পারে। এই নির্দিষ্ট ভূমিকম্প গভীরতা অঞ্চলে, এর আগে বেশ কয়েকটি ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছিল। যদিও ভূমিকম্পের কোন ভূ-পৃষ্ঠের অভিব্যক্তি পাওয়া যায়নি, তবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের ব্যাপক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির (সিডিএমপি) জন্য পরিচালিত একটি সমীক্ষায় কুমিল্লার লালমাই পাহাড়ে ময়নামতি চ্যুতির সারফেস এক্সপ্রেশন (ফল্ট স্কার্প) পাওয়া গেছে। সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের কাছাকাছি থাকা। তখন বিশদ তদন্ত সম্ভব ছিল না কারণ ত্রুটিটির জ্যামিতি, অভিযোজন ও অন্যান্য উপ-পৃষ্ঠের দিকগুলো মূল্যায়নের জন্য কোন ভূ-পদার্থগত জরিপ করা হয়নি।

অগভীর ও গভীর ভূত্বক ভূমিকম্প বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। ১৯১৮ সালের শ্রীমঙ্গল ৭.৩ মাত্রার ভূমিকম্প, ১৯৯৯ সালের মহেশখালী ৫.১ ভূমিকম্প ২০০৩ রাঙ্গামাটি ৫.৭ ভূমিকম্প দোহার ৪.৩ ভূমিকম্প বাংলাদেশের ক্রাস্টাল ভূমিকম্পের কিছু উদাহরণ। উপলব্ধ উপাত্ত ভূতাত্ত্বিক অন্তর্দৃষ্টি বিশ্লেষণ করে অনুমান করা যায় যে রামগঞ্জ ভূমিকম্প আশেপাশের ভূত্বক কাঠামোর সঙ্গে যুক্ত। তাই ৮ বা তার বেশি মাত্রার কোনো বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কার কোনো সুস্পষ্ট কারণ নেই। বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকি ও ক্ষয়ক্ষতি কমাতে, নির্মাণের সময় সচেতনতা বৃদ্ধি কঠোরভাবে বিল্ডিং কোড অনুসরণ করা প্রয়োজন। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অগভীর ও গভীর ভূত্বকের মধ্যে অসংখ্য ছোটখাটো ত্রুটি রয়েছে। আগে এগুলোকে ভূমিকম্প সৃষ্টিকারী চ্যুতি হিসেবে ধরা হতো না, কিন্তু রামগঞ্জের ভূমিকম্প সেই ধারণা পাল্টে দেয়। দেশের ভূমিকম্পের ঝুঁকির মূল্যায়নের জন্য এই ক্ষুদ্র আকারের ক্রাস্টাল ফল্টগুলোর একটি ব্যাপক তদন্ত এখন প্রয়োজন।

লেখক : উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। সূত্র : ডেইলি স্টার। অনুবাদ : মিরাজুল মারুফ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়