অজয় দাশগুপ্ত: অস্ট্রেলিয়া আগমনের পর পর বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটি ছিলো অর্ককে স্কুলে সেটেল করা। ক্লাস টু’র ছাত্র হলেও ভাষাগত পার্থক্য ভীষণ ঝামেলায় ফেলেছিলো। গোড়ার দিকে কয়েক মাস কান্নাকাটি স্কুল উঠোনের বড় গাছটি জড়িয়ে ধরে কাঁদতো। তাকে ক্লাসরুমে পাঠানোই ছিলো মুশকিল। সে দুঃসময়ে একটি ইতালিয়ান বাচ্চাকে স্কুল থেকে নিযুক্ত করা হয়েছিলো। মেন্টর নামে পরিচিত বাচ্চাটি নাচ, গান, জোকস এসবের মাধ্যমে সার্থকভাবে অর্ককে ক্লাসরুমে ফিরিয়ে নেয়। তখন ওদের গেইম টিচার ইংরেজির শিক্ষকসহ অনেকের কাজগুলো কাছ থেকে দেখেছি। গোড়াতে মনে হতোÑ এরা কী সার্কাসের কেউ? প্রতিটি ঘটনাই তারা শারীরিকভাবে মূর্ত করতো। বলাবাহুল্য সেই অর্ক পরে ইয়ার টেন ইলেভেনের ছাত্রদের ইংরেজি পড়িয়েছে, এখনও মূলধারার সিনেমা থিয়েটারের নামকরা এক অভিনেতা।
আমাদের নাতনি ইভা আর শাসা। ইভা স্কুল থেকে যা শিখে আসে তাই করে দেখায়। ওরা জানে হাঁস কেমন করে চলে, কীভাবে শব্দ করে। ওরা ওদের কুকুরকেও নকল করতে শেখে। ওরা শুধু নয়, সভ্য সমাজের ক্লাসরুমগুলোর সব বয়সীরাই হাতে কলমে শেখে। পড়াশোনা করা থেকে ব্যাংকের ট্রেনিং নানাবিধ সেমিনার সিম্পোজিয়ামেও এই অভিজ্ঞতা হয়েছে। বৃটিশ এক নামকরা প্রশিক্ষক আমাদের ক্লাস নিয়েছিলেন। ক্যামব্রিজের দুঁদে শিক্ষকটিকে দেখে মনে হতে পারে আমরা ব্যালে নৃত্যের কোন কোর্স করছিলাম। অতদূরে যাচ্ছি কেন আমরা? গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ তো ক্লাসরুমেই বিশ্বাসী ছিলেন না। এখনো ছাতিম তলায় পড়াশোনার পাশাপাশি সমাবর্তনের সনদ দেওয়া হয়। শান্তি নিকেতনে বহিরঙ্গের শিক্ষা মানেই শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার চর্চা। খামোখা প্যাঁচাল বন্ধ করেন। ত্রুটি কিছু থাকলে তা পাঠক্রমে সম্প্রদায়গত হিংসায় লেখক তালিকা ও লেখা বাদ দেওয়ায় আছে। আছে শিক্ষার রাজনীতিকীকরণও দলীয়করণে। বোর্ডের সামনে চক ডাস্টার হাতে শিক্ষক এবং রাগ হলেই ডাস্টার ছুঁড়ে মারার দিন শেষ। নতুন কিছু মেনে নিতে যারা ভয় পায় তাদেরও পরিবর্তন হয় তবে ধীরে। শিক্ষার মঙ্গল হোক।
লেখক : কলামিস্ট