ইমতিয়াজ মাহমুদ: আঞ্জুয়ারা আর ওর স্বামী জামাল দু’জনেই পোশাক কারখানায় কাজ করতো। দু’জনের বেতন মিলিয়েও ওরা ওদের দুইটা সন্তানকে ওদের সঙ্গে রাখতে পারতো না। আরিফ আর জয়া, আঞ্জুয়ারার বাচ্চা দুইটা, ওরা থাকে ওদের দাদুর সঙ্গে গ্রামে সেখানে থেকেই স্কুলে যায়। নতুন ঘোষিত ন্যূনতম বেতনে যে জীবন চলবে না সেকথা আরিফ আর জয়ার মা আঞ্জুয়ারার চেয়ে বেশি আর কে বুঝবে। ন্যূনতম বেতন বৃদ্ধির দাবিতে যে আন্দোলন, সেই আন্দোলনে গিয়েছিল আঞ্জুয়ারা। পুলিশের গুলিতে প্রাণ দিয়েছে। আমার প্রিয় যেসব উপন্যাস আছে সেইসবের মধ্যে একটা কিশোর উপন্যাস আছেÑ মাঠপারের গল্প। এখলাসউদ্দিন আহমেদের লেখা ছোট একটা উপন্যাস, আকৃতিতে ছোট গল্পর মতো, কিন্তু এটা একটা উপন্যাস। আপনারা কে এটা পড়েছেন আমি জানি না, আমি এটা পড়েছি, বারবার পড়েছি। এই সপ্তাহান্তে আরও একবার পড়বো। মূল প্রটাগনিস্ট যে বাচ্চাটা সে ছাড়াও এই উপন্যাসে একটা কিশোর ক্যারেক্টার আছে মংলু। মংলুর মা ভাতের জন্যে মিছিল করতে গিয়ে আর ফিরে আসেনি।
এরকম একটা ভাতের জন্য মিছিলে গিয়ে আরিফের মা প্রাণ দিয়েছে। আরিফের মা আর ফিরবে না। প্রথম আলোতে খবরটার শিরোনাম দিয়েছে এভাবে ‘মায়ের কাছে বেড়াতে এসেছিল দুই শিশু, ফিরলো তাঁর লাশ নিয়ে’। আমি হলে শিরোনামটা করতাম ভাতের জন্যে মিছিলে গিয়েছিল আরিফ আর জয়ার মাÑ ওদের মা আর ফিরবে না। আপনি কি জানেন, আরিফ আর জয়ার মায়ের হত্যার জন্যে আপনারও খানিকটা দায় আছে! জানা না থাকলে জেনেন রাখুন, আপনারা ভদ্রলোকের ছেলেমেয়েরা, আঞ্জুয়ারার রক্তের দাগ আপনাদের হাতেও লেগে আছে।
আপনারা পড়তে লিখতে জানেন, অঙ্ক কষতে জানেন। পৃথিবীর কতো বিষয়ে জ্ঞান আপনাদের। বাংলা ভাষায় পরতে জানেন, ইংরেজি ফরাসি কেউ কেউ দেখেছি উর্দুতেও কবিতা লিখতে জানেন। রাজনীতি নিয়ে হায় সে কি বক্তৃতা লেখেন আপনারা ফেসবুকে। ক্রিকেট সে তো বলাই বাহুল্য। আপনারা জানেন না তৈরি পোশাকশিল্প ও বাণিজ্যের হিসাব? আপনারা জানেন না পোশাক শিল্প জাতীয় অর্থনীতিতে কতো টাকা অবদান রাখে? তাইলে তার একটা ছোট্ট হিস্যা শ্রমিকদের দিতে এতো কঠিন লাগে আপনাদের কাছে? গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন যদি আজকের বাজারে পঁচিশ হাজার টাকা করেন, তবুও মালিকপক্ষের মুনাফার দেড় বা দুই আনাও কমবে না। সেটা দিতে আপনাদের কলজে শুকিয়ে যায়। ছিঃ। কথাও বলতে ইচ্ছে করে না এসব ভদ্রলোকের বেটাবেটিদের সঙ্গে। শ্রমিকের রক্ত ঘামে অর্জিত টাকার উচ্ছিষ্ট খায়, আর শ্রমিকের ন্যায্য দাবির বিরোধিতা করে। তারা নাকি আবার শিক্ষিত! লেখক: আইনজীবী। ফেসবুকে ৯-১১-২৩ প্রকাশিত হয়েছে।