শিরোনাম
◈ আলোচনা চালাতে চান ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা, 'আগ্রাসন' বন্ধের শর্ত ইরানের ◈ সৌদি আরবকে হজের কোটা নিয়ে যে অনুরোধ করলেন ধর্ম উপদেষ্টার ◈ সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি আমানতের রেকর্ড: কারা পাচার করল, কীভাবে করল? ◈ যুদ্ধের মুখে ইসরায়েলের নাগরিকদের সুরক্ষা রাখে ‘মামাদ’ কৌশল ◈ গাজায় ‘মানবসৃষ্ট খরা’তে শিশুরা তৃষ্ণায় মৃত্যুর ঝুঁকিতে: ইউনিসেফের সতর্কবার্তা ◈ বাংলাদেশের এক বিভাগের চেয়েও ছোট আয়তনের ইসরায়েলের জনসংখ্যা কত? ◈ সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি ইকবাল বাহার ডিবি হেফাজতে, বেইলি রোড থেকে আটক ◈ এই ইসরায়েল হাসপাতালে ক্ষতির অভিযোগ করেছে, অথচ তারা গাজায় ৭০০ হাসপাতালে হামলা করেছে: এরদোয়ান ◈ তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে প্রস্তুতি চলছে, শিগগিরই ফিরবেন: আমীর খসরু ◈ জাতিসংঘ মহাসচিবের হুঁশিয়ারি: সংঘাত ছড়িয়ে পড়লে এমন আগুন জ্বলবে, যা কেউ থামাতে পারবে না

প্রকাশিত : ১০ জুন, ২০২২, ১২:১১ রাত
আপডেট : ১০ জুন, ২০২২, ১২:১১ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

নূপুর আসলে ছিদ্রান্বেষী ধর্মের লোক!

মাসকাওয়াথ আহসান

মাসকাওয়াথ আহসান: ইতিহাসের যেকোনো খ্যাতিমান ব্যক্তির দর্শন সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে যারা তার বেডরুমের গল্প নিয়ে আসে, এরা হচ্ছে সভ্যতায় পিছিয়ে থাকা সবচেয়ে অনগ্রসর মানুষ। চারটে ডিগ্রি, দুটি সুন্দর পরিধেয়, সুন্দর করে সাজানো ড্রইং রুম, তিনটি ইংরেজি শব্দ ব্যবহার, দেশ-বিদেশ ঘোরার ফিরিস্তি, এসব ফ্রন্ট ডেস্ক ম্যানেজমেন্টের ভিড়ে যখনই কেউ ইতিহাসের কোনো ব্যক্তির চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করবে; তখনই বুঝতে হবে অনগ্রসরতা অস্তিত্বের ভেতর থেকে শেকড়ের টান দিচ্ছে। ভারতের নুপুর শর্মা দেখবেন ঠিক এই গোত্রের মানুষ। তিনি ধর্ম-দর্শন বা পৃথিবীর যেকোনো বিষয় আলোচনায় বেডরুমের গল্প নিয়ে আসবেন। বাংলাদেশের আবদুল খালেকও দেখবেন কোনো কৃতি মানুষকে অসম্মান দেখাতে তার বেডরুমের গল্প হাজির করবে। এ কারণেই সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাবার পর শান্তি নিকেতনে এরকম কিছু বেডরুমবিদ ফুল নিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে হাজির হলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের চলে যেতে বলেছিলেন। নুপুর শর্মা যে অশ্লীল আচরণ করেছেন, এর কোনো ধর্মীয় পরিচয় এই, এ আসলে দক্ষিণ এশিয়ার ডিএনএর এক্সরে রিপোর্ট।

নুপুর সে হিন্দুই হোক বা মুসলমান হোক কিংবা নাস্তিক হোক, মা-নানী-দাদী তাদের দুপুর বেলা উকুন তোলার আসরে অন্যের বাড়ির পরচর্চা করতো। পুরো গ্রামের মধ্যে নুপুরের মা-ই যেন ছিলেন সাধু। আর সবার ছিদ্র খুঁজে বের করতেন তিনি। নুপুর আসলে ছিদ্রান্বেষী ধর্মের লোক। নুপুরের মায়ের ছিদ্রান্বেষণ সীমাবদ্ধ ছিলো তার গ্রামে। মুখে যা আসবে সেটা ফটাশ করে বলে দেবার জন্য, নুপুরের খালারা তার মাকে মুখফোঁড় উপাধি দিয়ে ভীষণ গর্ব অনুভব করেছিলো। কিন্তু নুপুরেরা মাথার মধ্যে গ্রাম নিয়ে এখন শহরে বাস করে।

কাজেই নুপুরের বক্তব্যের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য যাদের খোঁজা সাজে তারাই খুঁজুক। আরববিশ্ব- মধ্যপ্রাচ্য কল্যাণ রাষ্ট্র গড়ে যারা জ্ঞান- বিজ্ঞানের দিকে আকৃষ্ট হয়ে, প্রয়োজনীয় সামাজিক সংস্কারের মাঝ দিয়ে যাচ্ছে। এই সমাজে হজরত মুহম্মদ (তাঁর ওপর শান্তি বর্ষিত হোক) এর দর্শন চর্চা হয় কখনো জালালউদ্দীন রুমীর কবিতা, কখনো বা ওমর খৈয়ামের কবিতা আশ্রয় করে। কল্যাণরাষ্ট্র হওয়ায় কবিতার প্রতি আগ্রহ ফিরে এসেছে সে সমাজে। সেখানে আপনি কখনো দেখবেন না মুসা (তাঁর ওপর শান্তি বর্ষিত হোক), যীশু (তাঁর ওপর শান্তি বর্ষিত হোক), শ্রীকৃষ্ণ (তাঁর ওপর শান্তি বর্ষিত হোক), গৌতম বুদ্ধের (তাঁর ওপর শান্তি বর্ষিত হোক) বিরুদ্ধে কোন তিক্ত কথা বার্তা হচ্ছে। বরং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের এক সংস্কৃতি সেখানে জনজীবনে চর্চার বিষয়। সে সমাজে নাস্তিকেরাও আছে, তারা ধর্মকে ফিকশন মনে করেন। সুতরাং বিজ্ঞান সাধনার মাঝ দিয়ে জীবনের অর্থ খুঁজতে চেষ্টা করেন। ঠিক এরকম চিন্তার সভ্যতা আপনি ইউরোপীয় সমাজে খুঁজে পাবেন।

কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ায় ঢুকলেই শুরু হয়ে যাবে উকুন তোলার আসর। শুধু ধর্মীয় মহাপুরুষ নয়, রাজনীতির মহানায়কদের নিয়ে মুখে যা আসে তাই বলে আনন্দে কুলুকুলু করার অভ্যাস এই বিজন অঞ্চলে কেন এতো হীন মানুষের বাস দক্ষিণ এশিয়ায় এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন। দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ সাম্যের সমাজ একেবারেই পছন্দ করেনা। এরা বিশেষ বা বিখ্যাত হতে চায়। কিন্তু সেটা হবার মতো ধীশক্তি- সাধনা কিছুই যখন নেই, তখন গালি দিয়ে বিখ্যাত হওয়াটাই যে একমাত্র পথ। দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ যেহেতু ইনফেরিয়র, সুপিরিয়র হবার বাসনা তাদের পাগলের মতো। কাউকে কোন ক্ষেত্রে একটু ভালো করতে দেখলেই, তাকে মাপামাপি শুরু করে। হীনমানুষের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে জাজমেন্টল হওয়া। একজন মানুষ সম্পর্কে কিছুই না জেনে তাকে একটা তকমা দেয়া। পাকিস্তানে কাফের তকমা দেয়া, ভারতে আরবান নকশাল তকমা দেয়া আর বাংলাদেশে পাকিস্তানপন্থী বা ভারতপন্থী তকমা দেয়া হীন মানুষের নিয়মিত কাজ। আসলে ক্ষুদ্র তুচ্ছ মানুষের ইনফেরিয়রিটির বোধ তাকে সুপিরিয়র সাজার আকাংক্ষা দেয়। সেই সুপিরিয়র সাজতেই সে আরেকজন মানুষকে ছোট করে। গত পাঁচটি বছরে দক্ষিণ এশিয়ার লব্ধ প্রতিষ্ঠিত ছেলে- মেয়েরা অবিকল নুপুর শর্মা কিংবা জিন্দালের মতো দেখতে ভীষণ আধুনিক হয়ে, সমাজে একটা উচ্চতর আসন দাবী করছে। ঐ যে দক্ষিণ এশিয়ায় সম আসনে বসার কোন কালচার নাই। কী এক ‘কল্পিত অভিজাত’ হবার চেষ্টায় কী করবে ঠিক পাচ্ছে না এরা।

কাজেই নুপুর শর্মা দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিনিধিত্বশীল একটি চরিত্র। যে কখনো হিন্দু হিসেবে কপালে তিলক এঁকে শ্রেষ্ঠত্ব দাবী করছে, কখনো ফ্যাশানেবল স্কার্ফ মাথায় দিয়ে মুসলমান হিসেবে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব দাবী করছে। কখনো ওয়েস্টার্ন আউটফিট পরে এথিস্ট সেজে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব দাবী করছে। আর গোলমালটা সেখানেই ঘটছে, শেষ পর্যন্ত এদের সবার গল্প বেডরুমের পাচালি, মানুষকে চট করে জাজ করার পাচালি আর কিব্বা হনুরে একটা অবস্থা। দক্ষিণ এশীয় কট্টর চরিত্রগুলোকে হিন্দু- মুসলমান- নাস্তিক হিসেবে দেখা অপ্রয়োজনীয়। এরা আসলে আন্ডার কনফিডেন্ড সাব হিউম্যান।
 লেখক: সাংবাদিক। ফেসবুক থেকে 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়