শিরোনাম
◈ আলোচনা চালাতে চান ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা, 'আগ্রাসন' বন্ধের শর্ত ইরানের ◈ সৌদি আরবকে হজের কোটা নিয়ে যে অনুরোধ করলেন ধর্ম উপদেষ্টার ◈ সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি আমানতের রেকর্ড: কারা পাচার করল, কীভাবে করল? ◈ যুদ্ধের মুখে ইসরায়েলের নাগরিকদের সুরক্ষা রাখে ‘মামাদ’ কৌশল ◈ গাজায় ‘মানবসৃষ্ট খরা’তে শিশুরা তৃষ্ণায় মৃত্যুর ঝুঁকিতে: ইউনিসেফের সতর্কবার্তা ◈ বাংলাদেশের এক বিভাগের চেয়েও ছোট আয়তনের ইসরায়েলের জনসংখ্যা কত? ◈ সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি ইকবাল বাহার ডিবি হেফাজতে, বেইলি রোড থেকে আটক ◈ এই ইসরায়েল হাসপাতালে ক্ষতির অভিযোগ করেছে, অথচ তারা গাজায় ৭০০ হাসপাতালে হামলা করেছে: এরদোয়ান ◈ তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে প্রস্তুতি চলছে, শিগগিরই ফিরবেন: আমীর খসরু ◈ জাতিসংঘ মহাসচিবের হুঁশিয়ারি: সংঘাত ছড়িয়ে পড়লে এমন আগুন জ্বলবে, যা কেউ থামাতে পারবে না

প্রকাশিত : ২১ জুন, ২০২৫, ০৩:০৯ রাত
আপডেট : ২১ জুন, ২০২৫, ০৭:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

যুদ্ধ নিয়ে ট্রাম্পের ইচ্ছেমতো সিদ্ধান্ত কি বৈধ? যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান ও আইন যা বলে

হোয়াইট হাউস লনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। তাকে প্রশ্ন করা হল, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র যুক্ত হবে? তিনি উত্তর দিলেন হেয়ালির সুরে।

ট্রাম্প বললেন, “আমি করতে পারি, আবার নাও করতে পারি।”

যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা ও ট্রাম্পের মিত্ররা বলছেন, যুদ্ধে জড়ানো বা না জড়ানোর সিদ্ধান্ত একান্তই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের; আর তারা তার ‘অনুভূতির ওপর’ আস্থা রাখেন।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুসের ভাষায়, এরপর কী হবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পই তার ‘একমাত্র নির্ধারক’।

তবে যুদ্ধবিরোধীরা বলছেন, বিষয়টি শুধু ট্রাম্পের উপর ছেড়ে দেওয়া ঠিক হবে না, বরং যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী যুদ্ধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার চূড়ান্ত ক্ষমতা কংগ্রেসের।

ট্রাম্প যখন ঘুরেফিরে যুদ্ধ জড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কিছু আইনপ্রণেতা তখন ‘ওয়ার পাওয়ারস অ্যাক্ট’ অনুযায়ী কংগ্রেসের ভূমিকার কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের এই আইনে কী বলা আছে? কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়া ট্রাম্প কী যুদ্ধ শুরু করতে পারেন? এক বিশ্লেষণী প্রতিবেদনে এসব বিষয়ে আলো ফেলেছে আল জাজিরা।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান কী বলে?

যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘যুদ্ধ ঘোষণা করার’ ক্ষমতা মার্কিন কংগ্রেসের থাকবে।

অনেকে মনে করেন, এই বিধান অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সামরিক অভিযানে জড়ানোর বিষয়ে কেবল কংগ্রেসই সিদ্ধান্ত নিতে পারে, প্রেসিডেন্ট নন।

শেষ কবে আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র?

সেটা ১৯৪২ সালের কথা, তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে।

এরপর কোরিয়া, ভিয়েতনাম, উপসাগরীয় অঞ্চল, আফগানিস্তান ও ইরাকে যুদ্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, এছাড়া সার্বিয়া, লিবিয়া, সোমালিয়া, ইয়েমেনসহ বিভিন্ন দেশে সামরিক অভিযান চালিয়েছে।

যুদ্ধে প্রেসিডেন্টকে কী ক্ষমতা দিয়েছে সংবিধান?

সংবিধানের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে সশস্ত্র বাহিনীর ‘কমান্ডার ইন চিফ’ হিসেবে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

তিনি তাৎক্ষণিক হুমকি প্রতিরোধের জন্য সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দিতে পারেন। তবে যুদ্ধ পরিচালনার অধিকাংশ ক্ষমতা কংগ্রেস নির্ধারিত। কংগ্রেস কোনো যুদ্ধে জড়ানোর সিদ্ধান্ত অনুমোদন করলে প্রেসিডেন্ট সেই যুদ্ধ পরিচালনা করতে পারেন।

নিয়ম অনুযায়ী, আইনপ্রণেতাদের বেঁধে দেওয়া সিদ্ধান্ত মেনেই তার সামরিক বাহিনীকে যুদ্ধে পরিচালনা করার কথা।

তবে অনেক প্রেসিডেন্টই ‘সরাসরি হুমকি’ প্রতিরোধের যুক্তিতে কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে সামরিক অভিযান চালিয়েছেন।

আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ করেছে?

‘অথোরাইজেশন ফর ইউজ অব মিলিটারি ফোর্স’ (এইউএমএফ) নামে একটি আইন পাস করে কংগ্রেস প্রেসিডেন্টকে নির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণের জন্য সামরিক বাহিনীকে ব্যবহারের অনুমতি দিতে পারে।

যেমন ২০০১ সালে টুইন টাওয়ারে হামলার পর প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশকে ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’ চালাতে এমন অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।

২০০২ সালে আরেকটি এইউএমএফ কংগ্রেসের অনুমোদন পায়। এর ভিত্তিতে ২০০৩ সালে ইরাকে আক্রমণ করে মার্কিন বাহিনী।

এ দুটি আইন এখনো কার্যকর, এবং মার্কিন প্রেসিডেন্টরা কংগ্রেসের অনুমতি না নিয়েই এসব আইনের আওতায় বিভিন্ন দেশে সামরিক অভিযান চালিয়ে আসছেন। যেমন ২০২০ সালে ইরানি জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার ক্ষেত্রে ট্রাম্প ২০০২ সালের এইউএমএফ এর কথা বলেছিলেন।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে অনেকেই ভেবেছিলেন, তিনি হয়ত ২০০২ সালের এইউএমএফ এর ক্ষমতা ব্যবহার করে ইরানে হামলা চালিয়ে বসতে পারেন এই যুক্তি দেখিয়ে যে, ইরান আল-কায়েদাকে সমর্থন দিচ্ছে।

কখন পাস হয়েছিল ‘ওয়ার পাওয়ারস অ্যাক্ট’?

সংবিধানের ‘যুদ্ধ ঘোষণা করার’ ক্ষমতা কংগ্রেসের হাতে দেওয়া থাকলেও অনেক মার্কিন প্রেসিডেন্টই কংগ্রেসকে এড়িয়ে যুদ্ধে জড়িয়েছেন। সে কারণে ভিয়েতনাম ও এশিয়ার কয়েকটি দেশে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘ সময় ধরে চলা যুদ্ধের মধ্যে ১৯৭৩ সালে ‘ওয়ার পাওয়ারস রেজুলিউশন’ পাস হয়।

এর উদ্দেশ্য ছিল যুদ্ধ নিয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা কংগ্রেসের হাতে রাখা। সে কারণে ‘ওয়ার পাওয়ারস অ্যাক্ট’–এ যুদ্ধের বিষয়ে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা সীমিত করার কথা বলা হয়।

প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন কম্বোডিয়ায় গোপনে বোমা ফেলার পর বহু বেসামরিক মানুষের মৃত্যু হলে ব্যাপক বিক্ষোভের মধ্যে এ আইন প্রণীত হয়।

এ আইনের মূল বিষয় কী?

এ আইনে বলা হয়েছে, যুদ্ধ ঘোষণা ছাড়া কোনো সামরিক পদক্ষেপ নিলে প্রেসিডেন্টকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তা কংগ্রেসকে অবহিত করতে হবে।

এছাড়া ৬০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে কংগ্রেস অনুমোদন না পেলে সে অভিযান বন্ধ করতে হবে।

বিদেশে সেনা মোতায়েনের আগে সম্ভাব্য প্রতিটি ক্ষেত্রে কংগ্রেসের সঙ্গে পরামর্শ করা বাধ্যতামূলক।

এ আইন এখন কেন গুরুত্বপূর্ণ?

ইরানে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের যোগ দেওয়ার সম্ভাবনার প্রেক্ষাপটে মার্কিন আইনপ্রণেতারা পাঁচ দশকের পুরনো এ আইনকে সামনে নিয়ে আসছেন।

ডেমোক্র্যাট সেনেটর টিম কেইন সোমবার একটি বিল উত্থাপন করেন, যেখানে ট্রাম্পকে কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়া ইরানে সামরিক হামলা চালানো থেকে বিরত রাখার কথা বলা হয়। পরদিন প্রতিনিধি পরিষদেও অনুরূপ প্রস্তাব আনেন রিপাবলিকান টমাস ম্যাসি ও ডেমোক্র্যাট রো খান্না।

ডেমোক্র্যাট সেনেটর বার্নি স্যান্ডার্স ‘নো ওয়ার এগেইনস্ট ইরান অ্যাক্ট’ নামে আরেকটি বিল উত্থাপন করেছেন, যেখানে ইরানে সামরিক অভিযান চালাতে অর্থায়ন বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে।

তবে রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেসে এসব বিল পাসের সম্ভাবনা ক্ষীণ।

সংবিধানে থাকলে নতুন আইন দরকার কেন?

যুদ্ধ ক্ষমতা নিয়ে এক্সিকিউটিভ ও লেজিসলেটিভ শাখার মধ্যে টানাপোড়েন দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসজুড়েই।

১৮৬১ সালে গৃহযুদ্ধের সময় প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়াই দক্ষিণাঞ্চলের বন্দরগুলো অবরোধ করেন। পরে সুপ্রিম কোর্ট বলে, হঠাৎ হামলা প্রতিহত করতে প্রেসিডেন্ট এমন পদক্ষেপ নিতে পারেন।

আজ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের মাধ্যমে মাত্র ১১টি আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।

এ আইনের কোনো কার্যকরিতা আছে?

অনেকে মনে করেন, ১৯৭৩ সালের আইনটি কার্যকর কিছু নয়; বরং এটি রাজনৈতিক প্রতীকী পদক্ষেপ মাত্র। আশির দশকে তখনকার সেনেটর জো বাইডেনের নেতৃত্বে একটি উপকমিটি এই আইনকে ‘ব্যর্থ’ তকমা দেয়।

কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়া প্রেসিডেন্ট কোনো যুদ্ধ শুরু করলে এবং সেই যুদ্ধ থামানোর জন্য কংগ্রেসে কোনো প্রস্তাব আনা হলে প্রেসিডেন্ট তাতে ভিটো দিতে পারেন। সেই ভিটো বাতিল করতে হলে প্রস্তাবের পক্ষে প্রতিনিধি পরিষদ ও সেনেটে দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন পেতে হয়।

অর্থাৎ, কংগ্রেসকে এড়িয়ে প্রেসিডেন্ট কোনো যুদ্ধ শুরু করলে আইনসভার মাধ্যমে তা থামানো কঠিন।

তবে অনেকে বলেন, যুদ্ধ বা সামরিক অভিযান নিয়ে প্রেসিডেন্টকে কংগ্রেসের কাজে জবাবদিহি করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে এ আইনের মাধ্যমেই। এ আইনের বিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্টকে যে কোনো সামরিক অভিযান নিয়ে কংগ্রেসে প্রতিবেদন দিতে হয়। ১৯৭৩ সালের পর থেকে এরকম শতাধিক প্রতিবেদন জমা পড়েছে, যা স্বচ্ছতা বাড়িয়েছে।

প্রেসিডেন্টরা এই আইনকে কীভাবে দেখেন?

নিক্সন ছাড়াও, অনেক প্রেসিডেন্ট এ আইনের সমালোচক। বিশেষ করে ২০০১ সালের পর প্রেসিডেন্টদের নির্বাহী ক্ষমতা ব্যবহারের প্রবণতা ব্যাপক হারে বেড়েছে।

২০০১ ও ২০০২ সালের এইউএমএফ এর আওতায় অন্তত ১৯টি দেশে সামরিক অভিযান চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের’ নামে এসব অভিযানকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে।

অলাভজনক সংস্থা ‘ফ্রেন্ডস কমিটি অন ন্যাশনাল লেজিসলেশন’ এর বিশ্লেষক হিদার ব্র্যান্ডন-স্মিথ বলেন, এই অনুমোদনের আওতায় এমনসব গোষ্ঠীর ওপরও হামলা চালানো হয়েছে, যাদের নাইন-ইলেভেনের সঙ্গে কোনো সম্পর্কই নেই।

২০০১ সালের এইউএমএফ বাতিল করার জন্য ২০২৩ সালে সেনেটে একবার ভোটাভুটি হয়। আর ২০০২ সালের এইউএমএফ বাতিল করার জন্য ২০২১ সালে ভোটাভুটি হয় প্রতিনিধি পরিষদে। কিন্তু দুটো আইন এখনও বলবৎ আছে।

ট্রাম্পকে ইরানে হামলা থেকে আটকাতে পারবে এ আইন?

বিষয়টি এখনও অনিশ্চিত। তবে সম্ভাবনা কম।

২০১৯ সালে ইয়েমেন যুদ্ধে মার্কিন সমর্থন বন্ধ করতে কংগ্রেস বিল পাস করলেও ট্রাম্প ভিটো দেন। ২০২০ সালে সোলাইমানিকে হত্যার পর কংগ্রেস প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা সীমিত করতে চেয়েও সফল হয়নি।

এর জবাবে প্রেসিডেন্টের যুদ্ধ পরিচালনার ক্ষমতা কমাতে কংগ্রেসের দুই কক্ষেই বিল তোলা হয়। তাতেও ভিটো দেন ট্রাম্প। সেই ভিটো বাতিলের জন্য দরকার ছিল দুই তৃতীয়াংশ ভোট। কিন্তু ডেমোক্র্যাটরা তখন তত বেশি রিপাবলিকানকে দলে টানতে পারেনি।

ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর দুই হাউজেই রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। ফলে প্রেসিডেন্টের যুদ্ধ ক্ষমতা কমাতে নতুন কোনো আইন করার চেষ্টা এখন আরো বেশি কঠিন।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়