ফরিদ আহমেদ: চট্টগ্রামের ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করে ফেরার পথে সায়ানাইড বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন বিপ্লবী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। সেটা ছিলো ২৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৩২ সাল। তাঁর সমকক্ষ সাহসী নারী বাংলার ইতিহাসে আর নেই। প্রীতিলতার আত্মাহুতি দেবার পনেরো দিন পরে ‘বিজয়া’ নামে একটা প্রবন্ধ লিখেছিলেন সূর্যসেন। সেটাতে তিনি লিখেছিলেন, ‘পনের দিন আগে যে নিখুঁত পবিত্র, সুন্দর প্রতিমাটিকে এক হাতে আয়ুধ, অন্য হাতে অমৃত দিয়ে বিসর্জ্জন দিয়ে এসেছিলাম, তার কথাই আজ সবচেয়ে বেশী মনে পড়ছে। তার স্মৃতি আজ সবকে ছাপিয়ে উঠেছে। যাকে নিজ হাতে বীর সাজে সাজিয়ে সমরাঙ্গনে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম, নিশ্চিত মৃত্যুর কোলে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুমতি দিয়ে এসেছিলাম, তার স্মৃতি যে আজ পনেরো দিনের মধ্যে এক মুহুর্ত ভুলতে পারলাম না। সাজিয়ে দিয়ে যখন করুণভাবে বললাম, ‘তোকে এই শেষ সাজিয়ে দিলাম। তোর দাদা তো জীবনে আর কোনোদিন সাজাবে না,’ তখন প্রতিমা একটু হেসেছিল। কী করুণ সে হাসিটুকু। কতো আনন্দের, কতো বিষাদের, কতো অভিমানের কথাই তার মধ্যে ছিল।
সে নীরব হাসিটুকুর ভিতরে অফুরন্ত কথা আমার সারা জীবন ভাবলেও শেষ করতে পারব না- শেষ করতে চাইও না। তা যেন আমার জীবনে নিত্য নতুন চিন্তার উপকরণ যুগিয়ে আমার জীবনকে ঐশ্বর্য্যময় করে তোলে, দিন দিন উন্মত্ত করে তোলে।
সে তো নিজ হাতে অমৃত পান করে অমর হয়ে গেছে। কিন্তু মরজগতে আমরা তার বিসর্জ্জনের ব্যথা যে কিছুতেই ভুলতে পারছি না। ব্যথা ভোলার জন্য সময় একটা বড় উপাদান। প্রীতিলতার জন্য যে ব্যথা তাঁর মৃত্যুর মাত্র পনের দিন পরে সূর্যসেন বোধ করেছেন, সেই ব্যথা এখনকার মানুষের বোধ করার কথা না। ব্যথা বোধ না করলেও ইতিহাসের এই সাহসী নারীকে মনে রাখার অন্তত দরকার ছিলো। এরা মুক্তির মন্দিরে নিজেদের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলো হাতে অমৃত নিয়ে। সেই বিসর্জনে নিজেদের কোনো স্বার্থ ছিলো না। দেশ মাতৃকা যাতে স্বাধীনতা পায়, দেশের মানুষ যেনো বিদেশি অধীনে না থাকে, সেটার জন্যই এতো আয়োজন ছিলো তাদের। সেই আয়োজন সফল হয়েছে। আমরা শুধু ভুলে গিয়েছি সেই আয়োজনের আগুনে আত্মাহুতি দেওয়া মানুষগুলোকে। ফেসবুকে ২৪-৯-২৩ প্রকাশিত হয়েছে।