গোলাম মোর্তোজা: দল ভাঙার দায়িত্বপ্রাপ্তরা যে এতোটা অদক্ষ হবেন বা এতোটা আনাড়িভাবে কাজ করবেনÑ এটা আমরা ভাবতে পারিনি। প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনের আগে দল ভাঙার একটি আলোচনা সামনে থাকে। বিএনপি ভাঙার আলোচনা ২০১৪, ১৮ ছিলো এবং আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি ভাঙার আলোচনা এখনো আছে। ২০১৪ বা ২০১৮ সালে যা দৃশ্যমান হয়নি ২০২৩ বা ২৪ সালের আসন্ন নির্বাচনে তা দৃশ্যমান হলো এবং বলা হচ্ছে, যারা বিএনপি নিয়ে হতাশ, যাদের বিএনপি থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে, যারা বিএনপি থেকে পদবঞ্চিত তারা গিয়ে এই দলটিতে স্থান নেবে। অর্থাৎ তৃণমূল বিএনপিতে। তৃণমূল বিএনপি হলো বিএনপির সাবেক নেতা এবং কর্মী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেছিলেন। তিনি বিভিন্ন সময় উল্টা-পাল্টা কথা বলতেন। ফলে তাকে দল থেকে বের করে দেওয়া হতো কিছুদিন পর তিনি আবার দলে ফিরে আসতেন। একদিন তিনি এরকম একটি আলোচনা করলেন যে ‘ফাউল করেছিলোম ম্যাডাম দল থেকে বের করে দিয়েছিলো, ম্যাডামের কাছে এসে ক্ষমা চেয়েছি ম্যাডাম ক্ষমা করে দিয়ে দলে ফিরিয়ে নিয়েছেন। আবার ফাউল করবো আবারো দল থেকে বের করে দিবে আবারো ক্ষমা চেয়ে দলে ফিরে যাবো।’ বিএনপি ছাড়া কোনো উপায় নেই। তৃণমূল বিএনপির হাল এখন তার মেয়ে ধরেছে।
নতুন এখন যারা তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন তাদের মধ্যে দু’জন অন্যতম হলো শমসের মবিন চৌধুরী এবং তৈমুর আলম খন্দকার। এই দুজনের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ শুধু অনুজ্জ্বলই নয়; রাজনীতিতে তাদের কোনো সম্ভাবনা নেই। শূন্য শতাংশ সম্ভাবনাও তাদের রাজনীতিতে নেই। রাজনীতিতে তাদের কোনো অবস্থান নেই। তৈমুর আলম খন্দকারের কিছুটা থাকলেও শমসের মবিন চৌধুরীর একেবারেই নেই। কিন্তু তারা দুজনই অত্যন্ত ভালো মানুষ। দেশে ৫০ শতাংশও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে দুজনেরই জামানত বাজেয়াপ্ত হবে। তৈমুর আলম খন্দকার কিছু ভোট পেলেও শমসের মবিন চৌধুরীর ভোট পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এদেরকে যখন তৃণমূলে নিয়ে যাওয়া হয় তখন ধরে নেয়া হয় নির্বাচন নিয়ে নানা রকম পরিকল্পনা আছে। এতে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। কারণ সরকার সংশ্লিষ্টরা যখন এরকম একটি দল গঠন করান তখন তাদের সঙ্গে একধরনের আপোস সভা বা প্রতিশ্রুতির ব্যাপার থাকে। যদি সেরকম কোনো প্রতিশ্রুতি থাকে তাহলে এই দল থেকে এই দুজন সহ আরও কয়েকজন হয়তো এমপি হয়ে আসবেন। আর জনগণের ভোট হলে এই দুজন সহ এদের সবার জামানত বাজেয়াপ্ত হবে নিঃসন্দেহে বলে দেয়া যায়।
বিএনপিকে ভাঙা হচ্ছে তৃণমূল বিএনপিকে দিয়ে এই কথাটি একেবরেই বলা যায় না। কারণ বিএনপির বর্তমান সময়ের কোনো নেতাকর্মী সেখানে যোগ দেননি। তৈমুর আলম খন্দকারকে দল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে, শমসের মবিন চৌধুরী ২০১৫ সালে ঘোষণা দিয়ে রাজনীতি থেকে সরে গিয়েছেন। তিনি বিকল্প ধারায় যোগ দিয়েছেন, সেখানেও সফল হতে পারেননি এতোদিন তিনি চুপচাপ ছিলেন এখন আবার তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। বিএনপি থেকে গেলে বিএনপি ভাঙলো এটি বলার কোনো সুযোগ নেই। যারা দল ভাঙে, দল ভাঙার পরিকল্পনা করে, যাদের দল ভাঙার দায়িত্ব দেওয়া হয় তারা মূল দল থেকে দু’একজন নেতাকর্মীদের নিয়ে আরেকটি দল তৈরি করেন ইতিপূর্বে এরকম ঘটনা অনেক দেখা গিয়েছে। কিন্তু এবারের দল ভাঙাটা অত্যন্ত দুর্বল, অদক্ষ, অযোগ্যভাবে করা হয়েছে বলে মনে হয়। একে কোনোভাবেই বিএনপি ভাঙা হলো বলা যায় না। বিএনপি রাজনীতিতে, নির্বাচনে অংশ নিবে কী নিবে না সেটা অন্য ব্যাপার আর তৃণমূল গড়ে ওঠার মধ্য দিয়ে বিএনপির সামন্যতম কোনো ক্ষতি হলো বলে মনে হয় না।
বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ না নেয়, যদি সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পরে বা না নেয় তাহলে সেটা পরবর্তী আলোচনার বিষয়। শমসের মবিন চৌধুরী বা তৈমুর আলম খন্দকারকে দিয়ে বিএনপি ভেঙে তৃণমূল বিএনপি তৈরি করে বিএনপির ক্ষতি করা গেলো কিংবা বিএনপির একটি অংশ নির্বাচনে অংশ নিলো এই কথা বলার কোনো সুযোগ থাকবে না। অর্থাৎ নির্বাচনটি আন্তর্জাতিক চাপের কাছে এখন যে অবস্থাতে আছে সেই চাপকে কোনোভাবেই নিরসন করা যাবে না এই তৃণমূল বিএনপিকে সামনে এনে। ভিসা নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি সম্ভবত এখন আমাদের জন্য অনিবার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুস্থ একটি নির্বাচন করার জন্য যেই পরিবেশ থাকার দরকার সেদিকে আমরা যাচ্ছি না। তৃণমূল বিএনপির রাজনীতিতে কোনো ভবিষ্যৎ নেই। তারা রাজনীতিতে কখনোই কোনোভাবেই সফল হতে পারবে না। সরকার তাদের কিছু পদ দিলেও এটি দিয়ে বিএনপি ভাঙলাম এটি বলা যায় না। উল্টো এতে বিএনপি আরও শক্তিশালী হতে পারে। সূত্র: ‘গোলাম মোর্তোজা’ ফেসবুক পেইজ। শ্রুতিলিখন: জান্নাতুল ফেরদৌস