আহসান হাবিব: [১] আমি যে কৃষ্ণত্বকের অধিকারী কথাটার মানে কি? মানে হচ্ছে আমার পূর্বপুরুষ জীবনধারণের জন্য যে কাজ করতো, তা করতো হতো রোদের ভেতর। এখন রোদ থেকে বাঁচতে প্রকৃতি তাদের যে শিল্ড বা প্রতিবন্ধক দিয়েছিল তার নাম মেলানিন। মেলানিন একটা রঙ, যা কালো। মেলানোসাইট নামে আমাদের একধরনের কোষ আছে, যা আমাদের ত্বকের এপিডার্মিসের নীচে থাকে। এখান থেকেই মেলানিন নামের রঙটা নিঃসৃত হয়। নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্কের পিটুইটারি গ্ল্যান্ড। রোদে কাজ করার সময় এই মেলানিন নিঃসৃত হয় যাতে রোদের ভেতরে থাকা আল্ট্রাভায়োলেট বা অতিবেগুণি রস্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচা যায়। মেলানিন যে তাকে রক্ষা করে, এই সুবিধা প্রকৃতি পিক করে তার জেনেটিক্সে যুক্ত করে নেয়। এটা বিবর্তনের একটি প্রক্রিয়া। বিবর্তন এভাবেই কাজ করে।
[২] অতিবেগুণী রশ্মি যখন আমাদের ত্বক ভেদ করে কোষের ভেতর ঢুকি ডিএনএকে আঘাত করে। ডিএনএ খুব দ্রুত এনার্জি তৈরি করে অতিবেগুণী রশ্মির প্রভাবকে নিষ্ক্রয় করে দেয়। কিন্তু যদি এটা করতে সময় লেগে যায়। অর্থাৎ বিক্রিয়ার কাল যদি লম্বা হয় তাহলে ডিএনএ তে কিছু পরিবর্তন ঘটে যায়। এখানে যে ক্ষারের জোড়া থাকে, বিশেষ করে থাইমিন এবং সাইটোসিন, তারা একে অপরের সঙ্গে জোড়া লেগে যায় এবং ডিএনএ’র পরের বিভাজনে ঠিকমতো বিভাজিত হতে পারে না, ফলে জোড়া লেগে থাকা ডিএনএ ভুল প্রোটিন তৈরি করে ফেলে যা অনেক ক্যান্সারের জন্য দায়ী। কিন্তু মেলানিন এই ক্যানসার হওয়া থেকে কালো রঙের মানুষদের রক্ষা করে।
কীভাবে? প্রক্রিয়াটি জটিল। সহজ করে বলছি: মেলানিন হচ্ছে এমন একটা রাসায়নিক যা টাইরোসিন নামের এমাইনোএসিড থেকে আসে এবং এরোম্যাটিক পলিমার হিসেবে কাজ করে। এর কাজ হলো অতিবেগুণী রশ্মির শক্তিকে দ্রুত শোষণ করে তার কার্যকারিতাকে হ্রাস বা না করতে দেয়া। এটা এই মেলানিন নামের রাসায়নিকটির বৈশিষ্ট্য। এটা সে পায় তার এরোম্যাটিক গঠনের জন্য। মেলানিন অতিবেগুণী রস্মির উপস্থিতিতে জারিত(ঙীরফরংবফ) হয় এবং মেলানোসাইট তখন আরো মেলানিন তৈরি করতে থাকে। এই অতিরিক্ত নিঃসৃত মেলানিন রস্মির বিরুদ্ধে একটা বস্তুগত শিল্ড বা বাধা হিসেবে কাজ করে। সংক্ষেপৈ, একটা কাজ হচ্ছে রস্মিকে দ্রুত শোষণ করে ফেলা আর একটা কাজ হচ্ছে বস্তুগত শিল্ড তৈরি করা। [৩] আমার ত্বকের দিকে তাকিয়ে আজ সকালে বলে উঠলাম: বাহ, মেলানিন, বাহ! লেখক: ঔপন্যাসিক