আবুল কাইয়ুম: ‘কি’ ও ‘কী’ শব্দের প্রয়োগের বেলায় আমাদের বিভ্রম একটু বেশি। এর আগে কয়েকবার এ-বিষয়ে বিশদে আলোচনা হয়েছে; এবার সংক্ষেপে কিছু বলি। উৎপত্তি, গঠন ও অর্থের দিক দিয়ে দুটো একেবারেই পৃথক শব্দ। আমাদের এই সারকথা মনে রাখতে হবে-প্রশ্নের জবাব যদি ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ দিয়ে হয়, সে-ক্ষেত্রে ‘কি’ এবং তা না হলে ‘কী’ বসে। অন্য কথায়, প্রশ্নকর্তা যদি কোনো বিষয়ে সোজা ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ জবাব জানতে চান তবে ‘কি’ এবং যদি তিনি প্রশ্নের জবাবে উত্তরদাতার বক্তব্য জানতে চান সে-ক্ষেত্রে ‘কী’ লিখতে হয়।
উদাহরণ
[১] ‘আপনি বইটি পড়েছেন কি?’ -এর উত্তর হ্যাঁ বা না দিয়ে দিতে হবে বলে এখানে ‘কি’ হয়েছে।
[২] ‘আপনি বইটি পড়ে কী বুঝলেন?’এর উত্তর হ্যাঁ বা না দিয়ে দেওয়া যাবে না এবং বক্তব্যে বা বর্ণনায় দিতে হবে বলে এ-ক্ষেত্রে ‘কী’ বসেছে। এভাবে কীজন্য, কীভাবে, কীরকম, কীরূপ, কীসব, কীসে, কীসের প্রভৃতি দিয়ে প্রশ্নের জবাবও বর্ণনায় দিতে হয়, তাই এসব শব্দ ‘কী’ দিয়ে। বিস্ময়সূচক পদ হিসেবেও ‘কী’ বসে।
[৩] আর ‘এমনকি’, ‘তেমনকি’, কিরূপে (যখন প্রশ্ন হিসেবে ব্যবহার করা হয় না), ‘কি যে’. ‘কত কি’, ‘আসল কি নকল’, কি গরিব কি ধনী’ প্রভৃতি অব্যয়যুক্ত প্রয়োগ আমরা ই-কার দিয়ে লিখব। কারণ প্রশ্নবোধক নয় বলে এসব হ্যাঁ-না বা বর্ণনা দিয়ে প্রত্যত্তরের উপযুক্ত নয় ।
আমাদের প্রতিজ্ঞা, আমরা ই-কার ও ঈ-কার ওলট-পালট করব না। আমরা যদি ‘কী’ স্থলে ‘কি’ এবং কিজন্য, কিভাবে, কিরকম, কিসব, কিসে ইত্যাদি লিখি তবে, নিজেদের যত বড়ো বা ছোটো লেখক ভাবি না কেন, বোদ্ধা পাঠকের কাছে হাস্যাস্পদ হবো। এসব ভুল বানান অভিধানেও নেই। সবাই ভালো থাকবেন। ফেসবুক থেকে