ব্যবসায়ীদের দাবি মেনে নিয়ে হিমাগারের গেইটে আলুর দাম কেজিপ্রতি ২২ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার।পাশাপাশি ৫০ হাজার মেট্রিক টন আলু সরকারি উদ্যোগে কিনে হিমাগারে সংরক্ষণ করা হবে এবং আগামী অক্টোবর-নভেম্বর মাসে তা বাজারে বিক্রি করা হবে বলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বুধবার মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে আলুর বিক্রয়মূল্য উৎপাদন খরচের সঙ্গে ‘সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়ায়’ কৃষকরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
“কৃষকের স্বার্থ সুরক্ষায় এবং উৎপাদিত আলুর ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনায় একটি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা হয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিবকে সভাপতি করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয় ও অর্থ বিভাগের সচিবদের সদস্য করে এই চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।
“কমিটির সুপারিশ পর্যালোচনার পর সরকার তিনটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেগুলো হল- হিমাগারের গেইটে আলুর ন্যূনতম মূল্য কেজিপ্রতি ২২ টাকা নির্ধারণ; সরকারি উদ্যোগে ৫০ হাজার মেট্রিক টন আলু ক্রয় ও হিমাগারে সংরক্ষণ করে ২০২৫ সালের অক্টোবর-নভেম্বর মাসে বাজারে বিক্রি; আগামী মৌসুমে আলু চাষিদের প্রণোদনা প্রদান।”
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সমূহ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম নেবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
নতুন আলু বাজারে আসে শীতের শেষ দিকে। মোটামুটি ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আলুর দাম কম থাকে। মার্চ-এপ্রিল মাস থেকে হিমাগারে আলু মজুদ করেন কৃষক ও আড়তদারেরা। এরপর সারা বছর হিমাগার গেইট থেকে পাইকারি দরে আলু বিক্রি হয়। সেই দরই ২২টাকা নির্ধারণ করা হল।
অর্থাৎ, হিমাগার থেকে পাইকারের হাত ঘুরে খুচরো দোকানে আসতে আসতে সেই আলুর দাম বেশ খানিকটা বাড়বে। গত বছর আলুর ভালো দাম পাওয়ায় চলতি বছর রেকর্ড পরিমাণে আলু উৎপাদন করেছেন কৃষকরা। প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ টন আলু উৎপাদিত হয়েছে এ বছর।
চাহিদার তুলনায় প্রায় ৪০ লাখ টন বেশি আলু উৎপাদিত হওয়ায় মৌসুমের শুরুতে বাজারমূল্য কমে যায়। কৃষকরা উৎপাদন খরচই তুলতে পারছেন না বলে সংবাদমাধ্যমে খবর আসে।
ওই অবস্থায় হিমাগার পর্যায়ে আলুর দাম বাড়ানোর দাবি জানিয়ে জুলাই মাসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় বাংলাদেশ হিমাগার সমিতি।
সংগঠনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী সে সময় বলেছিলেন, চলতি বছর প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে কৃষকের খরচ হয়েছে গড়ে ১৭ টাকা করে। এর সঙ্গে হিমাগারের ভাড়া ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে ব্যয় দাঁড়ায় প্রায় ২৫ টাকা। কিন্তু হিমাগার গেইটে তখন আলু বিক্রি হচ্ছিল ১৩ থেকে ১৫ টাকা কেজি দরে। তাতে কৃষক লোকসানে পড়ছে।
এ অবস্থায় আলু চাষীদের বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষার হিমাগার গেটে প্রতি কেজি আলুর ন্যূনতম বিক্রয় মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করার অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে।
সেই দাবি পুরেটা না মানলেও সরকার এখন হিমাগারের গেইটে আলুর দাম ২২ টাকা নির্ধারণ করে দিল।