জাকির তালুকদার: বাংলাদেশের কোনো বাম দল বা গ্রুপ কি আমেরিকার ভিসানীতির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে? কোনো দায়িশীল বামপন্থী ব্যক্তিগতভাবে কি কোথাও মার্কিন ভিসানীতি বা বাংলাদেশকে চাপ প্রয়োগের পক্ষে কথা বলেছেন? আমার চোখে পড়েনি। কানেও শুনিনি। বরং সিপিবির বিবৃতি দেখেছি ফেসবুকে বাংলাদেশে মার্কিনসহ সকল দেশের হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করে দেওয়া। বাসদও দিয়েছে। তাহলে ফেসবুকে আওয়ামী লীগপন্থী কিছু ব্যক্তি বামদের বিরুদ্ধে এমন জঘন্য মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছেন কেন? কারণটা কি এই যে আওয়ামী লীগের সঙ্গে একসুরে কথা বলছে না বামেরা?
এক সুরে কথা বলার সুযোগই তো নেই। আওয়ামী লীগ এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতা করছে বটে, তবে ভারতের আরো বেশি বেশি হস্তক্ষেপ কামনা করছে। আর বামেরা সকলের হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করছে। দ্বিতীয় কারণ, আওয়ামী লীগ কস্মিনকালেও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দল ছিল না। মুক্তিযুদ্ধের সময় আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির কারণে ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়নের বলয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল। স্বাধীনতার পরপরই যত দ্রুত সম্ভব আমেরিকা ও বিশ্বব্যাংকের সাথে সম্পর্ক তৈরি করেছিল। বিশ্বব্যাংকের বিরোধিতা করায় তাজউদ্দীন আহমদকে মন্ত্রীত্বসহ দলের সকল পদ থেকে বহিষ্কৃত হতে হয়েছে। বাকশাল গঠনের সময়েও মার্কিন দূতাবাসকে এই আশ্বাস দিতে হয়েছে যে এটি সাময়িক, বাংলাদেশ সমাজতন্ত্রের পথে হাঁটবে না।
মার্কিন সমর্থনের জন্য বিএনপি, জামায়াত যেমন লবিস্ট নিয়োগ করেছে, সরকার এবং আওয়ামী লীগও লবিস্ট নিয়োগ করেছে। তাদের লবি আপাতত ফেইল করেছে। কিন্তু লবিং বাতিল হয়নি। চলছে। ভারতের মোদী আগামী সেপ্টেম্বরে বাইডেনের সাথে দেখা করে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি সমর্থন আদায় করে দেবেন, এমন আশাও করছে লীগাররা। অর্থাৎ যেকোনো সময় মার্কিন ইস্যুতে আওয়ামী লীগের ভাষা বদলে যেতেই পারে। তবে বামেদের ভাষা বদলাবে না।
লেখক: কথাসাহিত্যিক। ফেসবুক থেকে