শিরোনাম
◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু, মানতে হবে কিছু নির্দেশনা ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ বিশ্ববাজারে সোনার সর্বোচ্চ দামের নতুন রেকর্ড ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ চেক প্রতারণার মামলায় ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিচার শুরু ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ প্রফেসর ইউনূসকে প্রদত্ত "ট্রি অব পিস" প্রধানমন্ত্রীকে প্রদত্ত একই ভাস্করের একই ভাস্কর্য: ইউনূস সেন্টার ◈ নির্বাচনী বন্ড কেবল ভারত নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি: অর্থমন্ত্রীর স্বামী ◈ কুড়িগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান পরিদর্শন করে দেশে ফিরলেন ভুটানের রাজা

প্রকাশিত : ১১ জুন, ২০২৩, ০২:২৪ রাত
আপডেট : ১১ জুন, ২০২৩, ০২:২৪ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বাংলাদেশ এবং পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থা

সুব্রত বিশ্বাস

সুব্রত বিশ্বাস: বাংলাদেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, প্রশাসন তথা সামগ্রিক অর্থে রাষ্ট্র ব্যবস্থা, সাম্প্রতিক বিশ্বের রাজনৈতিক অর্থনীতি ও জনগণের মুক্তি পুঁজিবাদি বিশ^ ব্যবস্থার অংশ ও অধীন। আজ বিশ্বে অর্থনৈতিক ধস মন্দা থেকে মহা মন্দার দিকে ধাবিত হচ্ছে। ক্রমান্বয়ে তা মার্কিন ব্যাংকিং বাণিজ্য ও শিল্প ক্ষেত্রে সংকট তৈরি করে গোটা অর্থনীতিকে মন্দার দিকে নিয়ে যায়। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের রাশিয়ার ওপর সার্বিক নিষেধাজ্ঞা এবং রাশিয়ার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আটকিয়ে দেয়ায় ডলারের আধিপত্যকে দুর্বল করার জন্য ডি-ডলারাইজেশন ক্যাম্পেইন (ডিডিসি) প্রচেষ্টার পুনরুত্থান শুরু হয়েছে আগের চেয়ে আরো বেশি ক্ষোভের সাথে।

ইউরোর আবির্ভাব হয় ১৯৯৯ সালে। ইউরোজোনের ২০টি দেশ নিয়ে গঠিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি একক মুদ্রা, দীর্ঘ প্রায় ২৩ বছরের প্রবল যুদ্ধের পর ডলারাইজড গ্লোবাল রিজার্ভ কারেন্সির (জিআরসি) ২০ শতাংশ শেয়ার লাভ করতে পেরেছে। চীনের ইউয়ান, কয়েক দশক ধরে ডলারের বিরুদ্ধে অবিরাম বিতর্কিত প্রচারণার পরে, ইয়েন (৫.২ শতাংশ) এবং পাউন্ড স্টার্লিং (৪.৯ শতাংশ) এবং জিআরসি মাত্র ৩ শতাংশ শেয়ার লাভ করতে সক্ষম হয়েছে।

চীন ও ভারতের বর্ডার নিয়ে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব চিরস্থায়ী এবং বর্তমানে তা বহুগুণে বাড়ছে। রাশিয়া অর্থনৈতিক ও আর্থিকভাবে স্ব-ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ব্রাজিল এক দশক পিছিয়ে পড়েছে; দক্ষিণ আফ্রিকা করোনা মহামারীর আগেও মন্দার খাদে আটকে গিয়েছিল। এ ছাড়াও ডলারাইজড গ্লোবাল রিজার্ভ কারেন্সি (জিআরসি) হিসেবে কাজ করার জন্য যথেষ্ট কার্যকর মুদ্রা তৈরি করার জন্য ব্রিকস দেশগুলোতে প্রয়োজনীয় স্তরের আস্থা ও প্রতিষ্ঠানের অভাব রয়েছে। এমনকি চীনের রয়েছে অনেক ঘাটতি, যেমন- তাদের অর্থনীতি অত্যন্ত কেন্দ্রীভূত এবং মার্কিন ডলারকে চ্যালেঞ্জ করার মতো মুক্ত, লিক্যুইড ও নিয়ন্ত্রণমুক্ত পুঁজিবাজার নেই।

পৃথিবীর একক পরাশক্তি মার্কিন প্রধান পুঁজিবাদি  দেশে একের পর এক উদ্ধার ও উদ্দীপক কর্মসূচি ঘোষণা করলেও মন্দা থেকে সত্যিকার অর্থে পরিত্রাণের কোন বাস্তবতা সৃষ্টি হচ্ছে না। মন্দা ও মন্দাজনিত পরিস্থিতির কারণে বাজার দখলের প্রতিযোগিতা ও আন্ত-সাম্রাজ্যবাদী দ্বন্ধের তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আন্ত-সাম্রাজ্যবাদি প্রতিযোগীতায় নিজেদের সুবিধাজনক অবস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ইউরোপের প্রধান প্রধান পুঁজিবাদি সাম্রাজ্যবাদি দেশ সমূহের নেতৃত্বে ইউরোপীয় ইউনিয়ন গঠন করে অগ্রসর হয়েছে। 

২০০১ সালে বৈশ্বিক রিজার্ভে ডলারের অংশ ছিল ৭৩ শতাংশ। ২০২১ সালে তা ৫৩ শতাংশে নেমে এসেছে। ২০২২ সালে তা ছিল ৪৭ শতাংশ। বৈশ্বিক লেনদেনেও ডলারের ভূমিকা দ্রুত কমে আসছে। ফলে ২০২৪ সালের শেষের দিকে ডলারের অংশ ৩০ শতাংশে নেমে আসা অবিশ্বাস্য নয়।

মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ একক পরাশক্তি হিসেবে বিশ্বব্যাপী নিজ অবস্থান ধরে রাখার লক্ষ্যে তার মিত্রদেরকে নিয়ে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে পুঁজিবাদী চীন ও সাম্রাজ্যবাদী রাশিয়ার বিরুদ্ধে ঘোষণা দিয়ে মাঠে নেমেছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের এই কৌশলের লক্ষ্য হচ্ছে বিশ্বব্যাপী বাজার ও প্রভাব বলয় ধরে রাখা ও নিশ্চিত করা, বিশ্বব্যাপী তার বাজার ও প্রভাব বলয়ে কাঁচামাল ও জ্বালানির উৎসসমূহের উপর নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণকে স্থায়ী করা, পুঁজিবাদি ব্যবস্থার অসম বিকাশের নিয়মের কারণে নতুনরূপে উদীয়মান প্রতিযোগীতার হাত থেকে নিজের বাজার ও প্রভাব বলয় রক্ষার নিশ্চয়তা বিধান করা। আন্ত-সাম্রাজ্যবাদি দ্বন্ধে বাজার ও প্রভাব বলয় বিস্তারের প্রতিযোগিতায় পুঁজিবাদী চীন ও সাম্রাজ্যবাদী রাশিয়া তাদের মিত্রদের নিয়ে সাংহাই-৬ গঠন করে অগ্রসর হয়েছে অনেক আগে থেকেই,। তাদের এই কৌশলের লক্ষ্য হচ্ছে পূর্ব ইউরোপ, মধ্য এশিয়া ও পূর্ব এশিয়ায় তাদের নিয়ন্ত্রণ জোরদার করা, এশিয়া আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার নয়া উপনিবেশিক দেশ সমূহে তাদের বাজার ও প্রভাব বলয় বিস্তৃত করা। 

বিশ্বব্যাপী একক পরাশক্তি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করে নিজেদের অবস্থানকে অগ্রসর করা ইত্যাদি। সম্পত্তি জাপান আবার নিজেদের সামরিক শক্তি দাঁড় করানোর জন্য তৎপরতা শুরু করেছে। জাপান পৃথিবীর ২য় বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তি হলেও সামরিক শক্তির দুর্বলতার কারণে বাজার ও প্রভাব বলয় বিস্তারের প্রতিযোগীতায় টিকতে না পেরে অব্যাহত অর্থনৈতিক সংকট ও মন্দার ভিতর দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। এই সময়ে জাপানের সেনাবাহিনী গঠন, বিমান বাহিনীর জন্য সর্বাধুনিক উচ্চ প্রযুক্তির যুদ্ধ বিমান তৈরির উদ্যোগ, আধুনিক নৌ বাহিনী শক্তিশালী করে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। জাপানকে ছাড়িয়ে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতি হিসেবে সামনে এসে আত্মপ্রকাশ করেছে চীনা অর্থনীতি। ২০২১ সালের হিসাবে প্রায় ১৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার মাথাপিছু আয়  হিসাবে প্রায় ১২ হাজার মার্কিন ডলার। আর যদি অর্থনীতির তুলনামূলক ক্রয়ক্ষমতা দিয়ে বিচার করা যায়, তাহলে দেখা যাবে চীন যুক্তরাষ্ট্রকে অতিক্রম করে এখন বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি। এর আকার সেই হিসেবে প্রায় ২৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার, মাথাপিছু আয় প্রায় ১৯ হাজার মার্কিন ডলার। এগুলো সবই চীনা সরকার ও আইএমএফের হিসাব।

পুঁজিবাদি চীনের দ্রুত বিকাশ এবং তার আনুসাঙ্গিক বিভিন্ন তথ্যাবলী বিশ্লেষণ করলে যে বিষয়টি সামনে আসে তা হল চীন অচিরেই এক বৃহৎ সাম্রাজ্যবাদি শক্তি হিসেবে বিশ্বমঞ্চে আবির্ভূত এবং যা একক পরাশক্তি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের প্রবল প্রতিদ্বন্ধী প্রতিপক্ষ। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ তাই পাল্টা কৌশল সাজিয়ে অগ্রসর হবার চেষ্টা করছে। চীন রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন সাংহাই-৬ কে মোকাবেলা করার লক্ষ্যে নয়া উপনিবেশিক ভারতকে সামনে দিয়ে এ অঞ্চলে তার অবস্থান সাজাচ্ছে। ভারত হচ্ছে চীনের সীমান্তবর্তী দেশ। ভারতের সাথে চীনের বিশাল স্থল সীমান্ত রয়েছে। তাই চীনের পাল্টা ভারসাম্য হিসেবে ভারতকে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে।

লেখক: ব্যবসায়ী

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়