শিরোনাম
◈ আইপিএল আয়োজনের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে আরব আমিরাত ◈ ভারত আসবে না বাংলাদেশ সফরে, হবে না এশিয়া কাপও ◈ এপ্রিলে  ১০১ কোটি ৩৮ লাখ টাকার চোরাচালান পণ্যসামগ্রী জব্দ করেছে বিজিবি ◈ ঐক্যবদ্ধ শাহবাগ বিএনপির অপেক্ষায়: সারজিস আলম ◈ জনআকাঙ্খা ও রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে আওয়ামী লীগের বিষয়ে সুচিন্তিত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জনতা পার্টি বাংলাদেশের ◈ ভারত-পাকিস্তান তৃতীয় দিনের মতো সংঘর্ষে জড়ালো, যুদ্ধাবস্থা সীমান্তজুড়ে ◈ 'আপ বাংলাদেশ' নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ◈ দেশে অনলাইন জুয়া সর্বগ্রাসী হয়ে উঠেছে: অনলাইনে জুয়া বন্ধে কঠোর হচ্ছে সরকার ◈ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ (ভিডিও) ◈ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগ মোড় অবরোধের ডাক হাসনাতের (ভিডিও)

প্রকাশিত : ১১ জুন, ২০২৩, ০২:১৮ রাত
আপডেট : ১১ জুন, ২০২৩, ০২:১৮ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সাহিত্যের ধর্মই পরিবর্তনের সঙ্গে থাকা

মোজাফ্ফর হোসেন

মোজাফ্ফর হোসেন: সাহিত্যের ধর্মই পরিবর্তনের সঙ্গে থাকা; সেটা পৃথিবীর যে কোনো দেশের সাহিত্যের ক্ষেত্রে সমানভাবে খাটে। তবে বাংলাদেশের সাহিত্য যে রাজনৈতিক সংগ্রাম, ঘাত-প্রতিঘাত, উত্থান-পতন এবং সামাজিক বিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে, তার নজির সাম্প্রতিক বিশ্বে বিরল। ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ আমাদের সাহিত্যের 'ইউনিক কন্টেন্ট'। আমাদের বাউল ও লোকায়ত সংস্কৃতি এবং লোকজ সাহিত্যের ধারা পৃথিবীর আর কোনো দেশের সঙ্গে মেলে না। কিন্তু আফসোসের বিষয়, আমাদের সাহিত্য বিশ্বে কোনো পরিচিতি অর্জন করতে পারেনি। গত শতকের ষাটের দশক থেকেই লাতিন সাহিত্য বিশ্বে ব্যাপকভাবে চর্চিত হচ্ছে। আর্জেন্টিনা থেকে হোর্হে লুইস বোর্হেস ও কোর্তাসার, কিউবা থেকে আলেহো কার্পেন্তিয়ের, উরুগুয়ে থেকে হুয়ান কার্লোস ওনেত্তি, ব্রাজিল থেকে জর্জ আমাদো, মেক্সিকো থেকে হুয়ান রুলফো ও ফুয়েন্তেস, পেরু থেকে মারিও বার্গাস য়্যওসা, চিলি থেকে রবার্তো বোলান্ঞ এবং কলম্ব্বিয়া থেকে গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের মতো লেখককে বিশ্বসাহিত্য পেয়েছে। আফ্রিকাও পিছিয়ে নেই। নাইজেরিয়া থেকে চিনুয়া আচেবে-বেন ওকরি-চিমামান্দা আদিচি, ঘানা থেকে আমা আতা আইদু, কেনিয়া থেকে নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গো, সোমালিয়া থেকে নুরুদ্দিন ফারাহ প্রমুখ লেখক স্বজাতি ও স্বভূমিকে অতিক্রম করে বিশ্বের লেখক হয়ে উঠেছেন। সে তুলনায় বিশ্বসাহিত্যের ম্যাপিংয়ে বাংলাদেশের কোনো স্থান নেই।

গত দুই দশকে আমরা অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও নানা রকম সামাজিক উন্নয়নমূলক সূচকে বিশ্বের অনেক দেশকে ছাড়িয়ে গেছি। আমাদের দেশে উৎপন্ন পোশাক সারাবিশ্বে ছড়িয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এই সময়েও আমাদের সাহিত্যের পরিসর ও পরিধিগত উন্নয়ন তেমন ঘটেনি। বাংলাদেশের আজ যে বিশ্বে পরিচিতি, তার সঙ্গে আমাদের সাহিত্যের পরিচিতি যুক্ত হয়নি। সাংস্কৃতিক প্রভাব ছাড়া অর্থনৈতিক প্রভাব কখনও স্থায়ী হয় না। আমরা যদি আমাদের সাহিত্যকে আন্তর্জাতিক পণ্য হিসেবে তুলে ধরতে পারতাম তাহলে আমাদের সাংস্কৃতিক পণ্যের বাজার সৃষ্টি হতো ইউরোপ-আমেরিকায়।
আমাদের পর্যাপ্ত সংখ্যক প্রতিভাধর লেখক ও 'ইউনিক কন্টেন্ট' থাকা সত্ত্বেও আমাদের সাহিত্যের বাজার সৃষ্টি করতে কেন পারিনি- এ প্রশ্নের সরল কোনো উত্তর হয় না। আমরা সব সময় বলে থাকি, মানসম্পন্ন অনুবাদের অভাব। এটা একটা কারণ বটে; কিন্তু এটাই সব নয়। মানসম্মত অনুবাদ হলেও সেটি গ্রহণ করতে ইউরোপ বা আমেরিকার বাজার প্রস্তুত হয়ে ওঠেনি। প্রস্তুত করে তোলার দায়টাও আমাদের। সাম্প্রতিক একটি পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে, বিশ্বে প্রবাসীর সংখ্যায় পঞ্চম অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। এই প্রবাসীদের একটা বড় অংশ আছে ইউরোপ-আমেরিকায়। কিন্তু প্রথম প্রজন্মের প্রবাসীদের মধ্যে ইংরেজি মাধ্যমের পাঠকের সংখ্যা খুব কম। বাংলাদেশি সাহিত্যের বাজার সৃষ্টিতে প্রাথমিক অন্তরায় এটা। ভারত এবং চীন এ ক্ষেত্রে বিশ্বে সবচেয়ে এগিয়ে। নেটিভ ইউরোপীয় বা আমেরিকান পাঠকরা বাংলাদেশের সাহিত্যের প্রতি আগ্রহী হয়ে না ওঠার কারণ ইংরেজি ভাষায় আমাদের কোনো প্রতিনিধিত্বশীল ডায়াসপোরা লেখক নেই, যার মধ্য দিয়ে আমাদের নেটিভ সাহিত্যের ব্র্যান্ডিং হবে। ভারতের যেমন নাইপল, রুশদি থেকে শুরু করে ঝুম্পা লাহিড়ি, রহিনটন মিস্ত্রি, অরুন্ধতী রায়ের মতো অনেক লেখক আছেন। এমনকি পাকিস্তানও হানিফ কুরাইশি, মহসিন হাবিবের মতো লেখককে পেয়েছে। আফগানিস্তান থেকে উঠে এসেছেন খালেদ হোসাইনি। শ্রীলঙ্কার সাহিত্যের ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য একা মাইকেল ওন্ডাৎজেই যথেষ্ট। কানাডায় বসবাসরত এ লেখক দু'বার বুকার পুরস্কার অর্জন করেছেন। এ ক্ষেত্রে আমাদের ডায়াসপোরা সাহিত্য পিছিয়ে আছে। তৃতীয়ত, সাহিত্যের আন্তর্জাতিকীকরণে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ গ্রহণের দিক থেকেও আমরা পিছিয়ে। প্রথমত, মানসম্মত অনুবাদ নিশ্চিত করা; এবং দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক প্রকাশনা ও বিপণন কাজে আমাদের সরকারি কোনো পরিকল্পনার বাস্তবায়ন এখন পর্যন্ত আমরা দেখিনি। 
লক্ষ্য করার বিষয়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের যে বৈশ্বিক পরিচিতি; সেটা বাঙালি অনুবাদকদের হাত ধরে আসেনি। রবীন্দ্রনাথের নির্ভরযোগ্য অনুবাদকদের ভেতর আছেন ম্যারিনো রিগন, যিনি বাংলা থেকে সরাসরি ইতালি ভাষায় অনুবাদ করেছেন; ফরাসি ভাষায় অনুবাদ করেছেন আঁদ্রে জিদের মতো প্রখ্যাত লেখক, যিনি পরবর্তীকালে নিজেও সাহিত্যে নোবেল পান; স্পেনে আরেক নোবেলজয়ী লেখক হুয়ান রামোন হিমেনেস, আর্জেন্টিনায় ভিক্তোরিয়া ওকাম্পো, নেদারল্যান্ডসে ফ্রেদেরিক ভন ইডেন, চেক ভাষায় ভিনসেনস লেসনি এবং দুসান জাভিতেল, লাতভিয়াতে কার্লিস ইগল এবং রিচার্ডস রুডিটিস, আরবে মুহাম্মদ সুখরি আয়াদ এবং রুশ ভাষায় এপি নাতুক-ডানিল'চাক। জীবনানন্দ দাশও বিশ্বে পরিচিতি পেয়েছেন উইলিয়াম রাদিচে, ক্লিনটন বি. সিলি, জো উইন্টারের মতো অনুবাদকের মাধ্যমে। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশের কোনো সরকারই বাংলা ভাষা জানা বিদেশি অনুবাদকদের দিয়ে বাংলাদেশি সাহিত্য অনুবাদের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। এ রকম আরও কিছু কারণ আছে আমাদের সাহিত্যের আন্তর্জাতিক পরিচিতি তৈরি না হওয়ার পেছনে। কিন্তু বলার অপেক্ষা রাখে না, সম্ভাবনার দ্বার ক্রমেই উন্মোচিত হচ্ছে। এখন সরকারি-বেসরকারিভাবে কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারলে আমাদের কাজটা আরও সহজ হয়ে উঠবে। লেখক: কথাসাহিত্যিক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়