শিরোনাম
◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ বিশ্ববাজারে সোনার সর্বোচ্চ দামের নতুন রেকর্ড ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ চেক প্রতারণার মামলায় ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিচার শুরু ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ প্রফেসর ইউনূসকে প্রদত্ত "ট্রি অব পিস" প্রধানমন্ত্রীকে প্রদত্ত একই ভাস্করের একই ভাস্কর্য: ইউনূস সেন্টার ◈ নির্বাচনী বন্ড কেবল ভারত নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি: অর্থমন্ত্রীর স্বামী ◈ কুড়িগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান পরিদর্শন করে দেশে ফিরলেন ভুটানের রাজা ◈ জনগণকে সংগঠিত করে চূড়ান্তভাবে বিজয় অর্জন করতে হবে: মির্জা ফখরুল

প্রকাশিত : ১১ জুন, ২০২৩, ০১:৫৫ রাত
আপডেট : ১১ জুন, ২০২৩, ০১:৫৫ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অর্থনীতিতে সংকটের দৃশ্যমানতা আর শঙ্কিত ভবিষ্যতের দিন

কাকন রেজা 

কাকন রেজা : ‘সরকারের হাতে খরচ করার মতো টাকাও নেই, ডলারও নেই’Ñ এটা দৈনিক মানবজমিনের ৮ জুনের একটি খবরের শিরোনাম। বিবিসিও এ নিয়ে খবর করেছে। শিরোনামটি উদ্ধৃত করা হয়েছে সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের বক্তব্য থেকে। জাতীয় বাজেট নিয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ের এ কথা বলেছেন তিনি। সাথে আরেকটি শিরোনাম উদ্ধৃত করতে চাই মানবজমিন থেকেই। একই দিনের শিরোনাম, ‘দেশের অর্থনীতিতে ৪০ বছরেও এমন সংকট দেখিনি।’ শিরোনামটি উদ্ধৃত করা হয়েছে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিনের বক্তব্য থেকে। তিনি ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত বাজেট বিষয়ে এক আলোচনা সভার প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমনটা বলেন। গ্যাস ও বিদ্যুৎ নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি জানান, গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন তারাই, অর্থাৎ ব্যবসায়ীরা। কিন্তু শর্ত ছিলো নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের। তাদের প্রস্তাব ছিলো ১৬ থেকে ২৫ টাকা করার। কিন্তু করা হলো ৩০ টাকা, কিন্তু সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন হলো না। বিদ্যুতের কথা বলতে গিয়ে তার বক্তব্যে ছিলো, অন্ধকার তাদের জন্য ব্যয়বহুল। যেহেতু তাদের জেনারেটর ব্যবহার করতে হয়। 

এই দু’জনের কথার সাথে সংকটের সম্পর্ক খুঁজি। ডলারের কথায় আসি। কয়লার টাকা বাকি পড়ার ফলে কয়লা দিচ্ছে না রপ্তানিকারকরা। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে দেশের বৃহত্তম বিদ্যুৎ প্রকল্প ‘পায়রা’। পায়রা’র ডানা কাটা পড়েছে, এ বিষয়টা সবার জানা। আগামী একমাসের মধ্যে উৎপাদনে ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে কেন্দ্রটির, এমন কথাই বলেছেন দায়িত্বশীলরা। ডলার সংকট নিয়ে মানবজমিনের আরেকটা খবরের শিরোনাম করা হয়েছে, ‘ডলার রক্ষায় মরিয়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক’। সে খবরেই বলা হয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বকেয়া পরিশোধে এ মুহূর্তে দরকার অন্তত ১শ কোটি ডলার। কিন্তু ডলার নেই। এ অবস্থার সত্যতা নিয়ে কথা বলেছে বিশ্বব্যাংকও। তাদের প্রতিবেদনেও ওঠে এসেছে জ্বালানি সংকটের কথা। ডলার বাঁচাতে আমদানি নিয়ন্ত্রণের কথাও বাদ যায়নি বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে। আর এতে চাপে আছে বাংলাদেশ তাও জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সুতরাং সংকটকে অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। কথাটি মিছে নয় যে, আমাদের অর্থনীতি সত্যিকার অর্থেই গত ৪০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে চাপের মুখে রয়েছে। 

বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র পরিচালনার সঙ্গে যুক্তরা জানাচ্ছেন, সরকারের কাছে তাদের বকেয়া রয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। একদিকে বকেয়া টাকা অন্যদিকে ডলার সংকট, ফলে তাদের প্রয়োজনীয় জ্বালানির পরিমাণ সঙ্গতই অপর্যাপ্ত। উপরন্তু বিপিসি ফার্নেস অয়েল সরবরাহে হিমশিম খাচ্ছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর চাহিদার বিপরীতে ফার্নেস অয়েল সরবরাহ করতে পারছে না তারা। বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে পিডিবির চুক্তি রয়েছে আমদানির পাশাপাশি ১০ থেকে ২০ শতাংশ ফার্নেস অয়েল দেবে বিপিসি। গত মার্চে সে অনুযায়ী পিডিবি চাহিদাপত্র দিলেও বিপিসি পর্যাপ্ত ফার্নেস অয়েল সরবরাহ করতে পারেনি। 

এই যে সংকট তা উত্তরণে যেসব প্রচেষ্টার কথা বলা হচ্ছে তা কতটা যুক্তিসঙ্গত সে নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। সাথে সামাজিকমাধ্যমে ছড়াচ্ছে গুজব। এমন এক গুজবে বলা হলো, পায়রা বন্দরের জন্য ৭৭টি জাহাজ ওমান থেকে কয়লা ভর্তি করে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। মানুষ সামাজিকমাধ্যমে পোস্ট দিতে থাকলো এমন মিথ্যে তথ্যকে। পরে অবশ্য দায়িত্বশীলদের পক্ষ থেকে জানানো হলো এটা গুজব। ওমানে কোনো কয়লা নেই, ওমান কয়লা উৎপাদনকারী দেশ নয়। এসব গুজব যারা বানান তারা দুনিয়াদারি সম্পর্কে কোনো খবর রাখেন বলে মনে হয় না। এদের মতন ডগমাটিকদের জন্য বিপদের মুখে পড়তে হয় সরকারকে। কিন্তু এটা না হয় গুজব। কিন্তু দুই সপ্তাহের মতন একটা সময় নির্ধারণ করে দেয়া হলো, বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানের, হালের পরিস্থিতিতে এটা কি মোটেই সম্ভব? আমাদের বোধগম্য নয় এটা কোন ম্যাজিকে সম্ভব হতে পারে! যেটা হতে পারে তা হলো সাময়িক একটা ব্যবস্থা। কিন্তু সাময়িক তো সাময়িকই। মূলকথা হলো সংকটটা ডলারের, যা সহসাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে না। সেপ্টেম্বরে আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড় হলে হয়তো কিছুটা স্বস্তি দেখা দিতে পারে। এখানে এফবিসিসিআইর সভাপতি মো. জসিম উদ্দিনের ডলার নিয়ে আরেকটা কথা উদ্ধৃত করি। তার মতে, লুটের মালের মতো যেভাবে পারছে ব্যাংক সেভাবে ডলারের দাম নিচ্ছে। অর্থাৎ ডলারের মূল্যমানের উপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। মো. জসিম বলছেন, এক ডলারের বিপরীতে ১১৪ থেকে ১১৫ টাকা করে নিচ্ছে ব্যাংকগুলো। 

ডলার সংকটের সাথে আরেকটা কথা বলি বিমান নিয়ে। এখানেও সেই ডলারের খেলা। বিশ্বের বিভিন্ন বিমান সংস্থা বাংলাদেশের কাছে পায় ২১ কোটি ৪১ লাখ মার্কিন ডলার। অর্থাৎ ২ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এটিও গণমাধ্যম আরটিভি অনলাইনের খবর। খবরটি করা হয়েছে দ্য ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনকে উদ্ধৃত করে। সুতরাং ডানাকাটা ‘পায়রা’র মতন বিমানের অবস্থাও হতে পারে যেকোনো সময়। 

বিমানের কথাটা উল্লেখ করলাম এ কারণে, ‘ছোট হয়ে আসছে পৃথিবী’ স্লোগানটি সংকটকালীন অবস্থায় অনেকটা নেতিবাচক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষেই আমাদের পৃথিবী ছোট হয়ে আসছে। আমরা ক্রমশ বন্ধু হারাচ্ছি। এমনসব বন্ধুদের সাথে আমাদের দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে, যাদের ওপর নির্ভর করে আমাদের রপ্তানি খাত এবং রেমিট্যান্স। যা দিয়ে আমাদের অনেকের ফুটানি চলে। জোর আওয়াজ বের হয় গলা দিয়ে। 

ফুটনোট : বাজেট নিয়ে লেখার কথা অনেকে বলেছেন। বাজেট নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। আমার মতন ব্রাত্যজনের কথা বাড়িয়ে আর লাভ কী। যে বাজেটে আয়কর মুক্তদেরও দুই হাজার টাকা কর দেয়ার কথা বলা হয়, সেই বাজেট নিয়ে কথা না বলাই ভালো। যারা আয়করমুক্ত তারা কি ভিন্ন নামে কর দেন না? কাপড় থেকে জুতা, মশলা থেকে টুথপেস্ট, এমনকি কন্ডম কিনতেও ভ্যাট দিতে হয়। তাদের দেওয়া এই টাকাগুলো কি টাকা নয়? তাহলে সেবা পেতে গেলে দরিদ্র মানুষগুলোকে কেন বাড়তি দুই হাজার গুণতে হবে? দরিদ্র মানুষের ছেঁড়া পকেটে হাত দিয়ে টাকা বের করে নেওয়ার এমন চেষ্টাকে আপনারা কী বলবেন, জবরদস্তি না অন্য কিছু? 

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়