শিরোনাম
◈ আইপিএল আয়োজনের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে আরব আমিরাত ◈ ভারত আসবে না বাংলাদেশ সফরে, হবে না এশিয়া কাপও ◈ এপ্রিলে  ১০১ কোটি ৩৮ লাখ টাকার চোরাচালান পণ্যসামগ্রী জব্দ করেছে বিজিবি ◈ ঐক্যবদ্ধ শাহবাগ বিএনপির অপেক্ষায়: সারজিস আলম ◈ জনআকাঙ্খা ও রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে আওয়ামী লীগের বিষয়ে সুচিন্তিত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জনতা পার্টি বাংলাদেশের ◈ ভারত-পাকিস্তান তৃতীয় দিনের মতো সংঘর্ষে জড়ালো, যুদ্ধাবস্থা সীমান্তজুড়ে ◈ 'আপ বাংলাদেশ' নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ◈ দেশে অনলাইন জুয়া সর্বগ্রাসী হয়ে উঠেছে: অনলাইনে জুয়া বন্ধে কঠোর হচ্ছে সরকার ◈ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ (ভিডিও) ◈ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগ মোড় অবরোধের ডাক হাসনাতের (ভিডিও)

প্রকাশিত : ১১ জুন, ২০২৩, ০১:০৯ রাত
আপডেট : ১১ জুন, ২০২৩, ০১:০৯ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বাঙালি কে?

গরীব নেওয়াজ

গরীব নেওয়াজ: আমাদের দেশের খুবই নামকরা এক পণ্ডিত ব্যক্তি একদিন এক সেমিনারে বললেন, বাঙালি কোনোদিনই নিজেদেরকে শাসন করেনি, বাঙালি চিরদিনই বহিরাগতদের দ্বারা শাসিত হয়েছে। অন্য আর একজন ভিন্ন এক আলোচনায় বললেন, সিরাজদৌলা বাঙালি ছিলেন না। প্রথমোক্ত পণ্ডিতকে এরপর একদিন এক ঘরোয়া পরিবেশে পেয়ে বললাম, আপনি যে বলেছিলেন বাঙালি কোনোদিন শাসন ক্ষমতায় ছিল না, তারা চিরকাল বহিরাগতদের দ্বারা শাসিত হয়েছে, এ কথার ব্যাখ্যা কী। তিনি বললেন, এটা তো অতি সাধারণ কথা, বহিরাগত গুপ্ত বংশ, পালবংশ, সেনবংশ, তারপর তুর্কি, পাঠান, মুঘল, ইংরেজ ইত্যাদিরা একের পর এক বাঙালিদের শাসন করেছে। 

আমি সবিনয়ে জানতে চাইলাম, একটু বলবেন বাঙালি কে। তিনি বললেন, কেন আপনি আমি আমরা সবাই বাঙালি। আমি বললাম, দেখুন গুপ্ত, পাল, সেন, তুর্কি, পাঠান, মুঘলরা যদি বাঙালি না হয়, সিরাজদৌলা যদি বাঙালি না হয়, তাহলে আপনি আমি কেউই বাঙালি নই। এবার তিনি একটু নড়েচড়ে বসলেন। আমি বললাম, দেখুন আমরা কেউই এখানকার আদি অধিবাসী নই। প্রথমে এখানে আসে জাভা অঞ্চলে উদ্ভূত অস্ট্রিক জাতি, তারপর আসে দ্রাবিড়রা। অস্ট্রিক-দ্রাবিড়ের সংমিশ্রণে গড়ে উঠে এক নতুন জাতি। আমাদের দেশে কোল, ভীল, সাঁওতাল, শবর, হাড়ি, ডোম, গারো, চণ্ডাল ইত্যাদি যেসব অন্ত্যজ জাতি বাস করে তাদেরকেই বলা যায় এদেশের আদিম অধিবাসীদের বংশধর। 
এরপর উত্তর-পূর্ব অঞ্চল দিয়ে মঙ্গোলীয়রা এবং আফগানিস্তানের পথ ধরে আর্যরা এখানে আসে। আর্যদের পরপরই পারসিক ও শক জাতিরা এখানে আসে। ক্রমে-ক্রমে তুর্কি, ইরানি, আফগান, মুঘল, আরবি-সহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের এবং পর্তুগিজ-সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মানুষ এখানে এসে বসবাস শুরু করে। এক ইংরেজ ছাড়া যারাই এখানে এসেছে, তারাই এ মাটিকে নিজের করে নিয়েছে, মিশে গিয়েছে এদেশের জনগোষ্ঠীর সঙ্গে। স্ব-স্ব বৈশিষ্ট্য বজায় রাখতে চেয়েও শেষ পর্যন্ত কেউই তা পারেনি। বিভিন্ন নরগোষ্ঠীর রক্তের ধারা এমনভাবে আমাদের মধ্যে  সংমিশ্রিত হয়েছে যে, একই বাঙালির দেহের বিভিন্ন অংশ ভিন্ন-ভিন্ন জাতের মানুষের তথা রেসের পরিচয় বহন করছে। হয়তো তার হাতে আছে দ্রাবিড়ের ছাপ, আর কপালে মঙ্গোল, মুখে আর্য, মাথায় পারসিক, কোমরে অস্ট্রিকের ছাপ রয়েছে। 

এত বেশি সংকর জাতি পৃথিবীতে আর নেই। ইউরোপ-আমেরিকা বা মধ্য-এশিয়ায় একই ধরনের (ককেশাস) মানুষ, চীন-জাপান, কোরিয়া সহ পূর্বের দেশগুলোতে একই রেসের (মঙ্গোল) মানুষ, আফ্রিকার অধিকাংশ এলাকায় একই জাতের (নিগ্রো) মানুষ, এমনকি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলেও একই ধরনের মানুষ বাস করে। শুধু আমরাই পৃথক, নির্দিষ্ট কোনো এক জাতের মানুষ নই আমরা। যত দূরের ও যত বেশি সংখ্যক রক্তের সংমিশ্রণ ঘটে, ততো উৎকর্ষ মানুষ সৃষ্টি হয়। এর বিজ্ঞান ভিত্তিক ব্যাখ্যা পরে একসময় আলোচনা করবো।

ফল কথা হচ্ছে, বাইরের থেকে এসে যারাই এ মাটিকে আপন করে এখানকার মানুষের সঙ্গে মিশে গিয়ে বাঙালি জাতি গঠনে অবদান রেখেছে তারাই বাঙালি হয়েছে। গুপ্ত, পাল, সেন, তুর্কি, আফগান, মুঘল ইত্যাদি সবাই এখানে এসে যেহেতু মিশে গিয়েছে কাজেই তাদের কারও শাসনকেই বিদেশীদের শাসন বলা যাবে না। ওইসময় বাঙালি জাতির গঠন প্রক্রিয়া ওই পর্যায়েই ছিলো। এবং এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় বহু বিহারী ও রোহিঙ্গা বাঙালি হয়ে যাচ্ছে। আবার ইংল্যান্ড, আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং করাচি, দিল্লি-সহ বিভিন্ন স্থানে বসবাসকারী অনেক বাঙালির বাঙালিত্ব খারিজ হয়ে যাবে। পাঁচ শ’ বছর পরে বাঙালি জাতির আজকের এই গঠন থাকবে না। 

আপনি আমিও একদিন কোনো এক জায়গা হতে এখানে এসেছি। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের চেয়ে বড়ো বাঙালি আর কে হতে পারে। শোনা যায়, কবিগুরুর পূর্ব পুরুষ কাশ্মীর হতে এবং বঙ্গবন্ধুর পূর্ব পুরুষ ইরাক হতে এসেছিলেন। সিরাজদৌলা ছিলেন আজ থেকে ১১/১২ পুরুষ পূর্বে। তাঁর কবর এ মাটিতে, তাঁর বংশধররাও এখানেই মিশে গিয়েছে। ১১/১২ পুরুষ পূর্বে আপনি নিজে বাঙালি ছিলেন তা কি বলতে পারবেন। আপনি আমিও তো এই প্রক্রিয়ায় এখানকার মাটিকে আপন করে এখানকার বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিশে বাঙালি হয়েছি। কাজেই সিরাজদৌলা বাঙালি ছিলেন না বা বাঙালি চিরকাল বহিরাগতদের দ্বারা শাসিত হয়েছে, এধরনের আত্মঘাতী কথা বলা ঠিক নয়, তাতে নিজের অস্তিত্বই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে পড়ে। ফেসবুক থেকে 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়