শিরোনাম
◈ আইপিএল আয়োজনের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে আরব আমিরাত ◈ ভারত আসবে না বাংলাদেশ সফরে, হবে না এশিয়া কাপও ◈ এপ্রিলে  ১০১ কোটি ৩৮ লাখ টাকার চোরাচালান পণ্যসামগ্রী জব্দ করেছে বিজিবি ◈ ঐক্যবদ্ধ শাহবাগ বিএনপির অপেক্ষায়: সারজিস আলম ◈ জনআকাঙ্খা ও রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে আওয়ামী লীগের বিষয়ে সুচিন্তিত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জনতা পার্টি বাংলাদেশের ◈ ভারত-পাকিস্তান তৃতীয় দিনের মতো সংঘর্ষে জড়ালো, যুদ্ধাবস্থা সীমান্তজুড়ে ◈ 'আপ বাংলাদেশ' নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ◈ দেশে অনলাইন জুয়া সর্বগ্রাসী হয়ে উঠেছে: কঠোর হচ্ছে সরকার ◈ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ (ভিডিও) ◈ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগ মোড় অবরোধের ডাক হাসনাতের (ভিডিও)

প্রকাশিত : ০৯ জুন, ২০২৩, ০৪:০৬ দুপুর
আপডেট : ০৯ জুন, ২০২৩, ০৪:০৬ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতিতে কার লাভ, কার ক্ষতি?

দীপক চৌধুরী: ভিসানীতি নিয়ে কী যেন শুরু হয়ে গেছে দেশে। কারো কারো বিস্ময়, এবার সরকার যাবে কোথায়? কী রকম হাস্যকর কথা! কোনো যুক্তি নেই, তথ্য নেই, তত্ত্ব নেই। কিন্তু উল্টোপাল্টা গুজব আছে। চিল নিয়েছে কানের মতো। পরীক্ষা না করেই বা  না দেখেই চিলের পেছনে দৌড়ানো। পিটার হাস এখন বিভিন্ন দলের বিভিন্ন নেতার সঙ্গে কথা বলছেন, মিটিং করছেন, চা-কফি দাওয়াত খাচ্ছেন। অনেকে মহাখুশি।

যুক্তরাষ্ট্রকে যারা চেনে তারা জানেন, ভারতের নরেন্দ্র দামোদর দাসকে এক সময় যুক্তরাষ্ট্র নিষিদ্ধ করেছিল। কিন্তু তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বকে আটকাতে পারেনি, থামাতে পারেনি! শ্রী নরেন্দ্র মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী ঠিকই হয়েছেন।  বাংলাদেশের প্রসঙ্গে আসছি।   

‘৫০ বছরে বাংলাদেশের রূপান্তর বিস্ময়কর’ শিরোনামে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস  (০৪-০৪-২০২২) একটি লেখা লিখেছিলেন এদেশের একটি জাতীয় দৈনিক ‘প্রথম আলো’ পত্রিকায়। লেখাটি ভীষণভাবে আকৃষ্ট করেছে আমাকে। নাতিদীর্ঘ হলেও সংক্ষিপ্ত রচনায় দেশের অগ্রগতি ও উন্নয়নে তিনি অভিভূত। পিটার হাস এক জায়গায় লিখেছেন, ‘এখন বাংলাদেশ সফলতার গল্প হিসেবে বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে প্রশংসিত। বাংলাদেশের জনগণের উদ্যোগ, সক্ষমতা ও উদ্ভাবনী শক্তির কারণে দেশটি স্বাস্থ্য ও সাক্ষরতার ক্ষেত্রে দ্রুত উন্নতি করেছে, শতভাগ বিদ্যুতায়ন করতে পেরেছে এবং বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে। সত্যি বলতে, বাংলাদেশ শিগগির মধ্যবর্তী  দেশের মর্যাদায় উন্নীত হবে, এটি নিঃসন্দেহে একটি অসাধারণ ও চমকপ্রদ অর্জন।’ হাঁ, এই সত্য উপলব্ধির জন্য তাঁকে ধন্যবাদ।

এখন নয় শুধু, আগেও, দীর্ঘদিন ধরেই অর্থাৎ চৌদ্দ বছর ধরেই নিরপেক্ষ সরকারের দাবি বিএনপির। কী আশ্চর্য কথা! নিরপেক্ষ সরকারের শর্তে বিএনপির সঙ্গে কোনো আলোচনা হবে?  

যা বোঝা যাচ্ছে, এখন পর্যন্ত না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের পরিষ্কার বলেছেন, এবং দলের সবাই বলেছেন, এমনকি দলপ্রধান শেখ হাসিনাও জানিয়েছেন, অনির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না তাঁর দল।  নিরপেক্ষ সরকারের শর্ত নিয়ে বিএনপির সঙ্গে  কোনো আলোচনা হবে না জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় এ বক্তব্য তাঁর। 

তৃণমূল নেতা থেকে দলের সাধারণ সম্পাদক হওয়া ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘গতবারের নির্বাচনের আগের কথা আমাদের মনে আছে; এক বার নয়, দুই বার তাদের সঙ্গে সংলাপে বসেছি।  রেজাল্ট কী? কোনো লাভ হয়নি। নিরপেক্ষ সরকারের শর্ত নিয়ে দলটির সঙ্গে  কোনো সংলাপ হবে না।’

তিনি বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার জন্য নালিশ করতে করতে বিএনপি এখন নিজেরাই ফাঁদে পড়েছে। তারা নিজেরাই ‘ফাঁদে পড়ে কান্দে’।’ সাবেক এই জনপ্রিয় ছাত্রনেতা আরো বলেছেন, ‘এখন তারা নালিশ করে নিষেধাজ্ঞার পরিবর্তে  পেয়েছে ভিসানীতি। এই ভিসানীতি নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু  নেই। কাকে ভিসা  দেবে, কাকে  দেবে না, সেটা সেই  দেশের ব্যাপার। আমরাও আমাদের দেশে কাকে ভিসা  দেব, কাকে  দেব না, সেটাও আমাদের ব্যাপার।’

যুক্তরাষ্ট্রের  ভিসানীতি নিয়ে সরকার খুব ঘাবড়াচ্ছে বলে  মনে হয় না। সরকারকেও ভিসানীতির বিষয়ে অবহিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মূলত হয়তো যুক্তরাষ্ট্র চাইছে, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা দিলে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা দেবে না। সরকারি দল তাদেও অবস্থানে থেকে বক্তব্য দিচ্ছে কিন্তু বিএনপি বলছে উল্টোটা। এটা এতোই লজ্জার যে, এটা দেশের জন্য ভীষণ লজ্জার। তবে আর যাই হোক বিএনপি মনে করছে, সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে এ সুযোগ কাজে লাগানো যাবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ‘ওয়েট এণ্ড সি’ পলিসি।

আসল ঘটনা অন্যখানে। ঝুঁকি এড়াতে পারবে না বিএনপি। পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তুলবে বিএনপি, আর বিএনপি না চাইলেও তার জোটের সঙ্গীরা এটা করবে। এ ধারণা আওয়ামী লীগের। সুতরাং অহিংস কর্মসূচি দিয়ে সহিংসতা রুখে দেওয়া কঠিন। সরকারকে বাধ্য করার মতো সাংগঠনিক শক্তি বিএনপির আছে কি নেই এটা প্রমাণ করাও মুশকিল। ভিসানীতির বিষয়টি মাথায় রাখতেই হবে। সুতরাং আলোচনার টেবিল ছাড়া এ সমস্যা প্রকট হবে। আওয়ামী লীগ অনুমান করতে পেরে রাজনীতিতে নমনীয় হবে। সহিংসতার পথে পা বাড়াবে না দলটি। কারণ, লাভের পাল্লা নিজের দিকেই রাখতে চায়।

এবার অন্য বিষয়ে বলি। যুক্তরাষ্ট্র সবসময়ই তাদের পক্ষের শক্তিগুলোর সঙ্গে থাকতে চায় এটা এদের সরকারের নীতি। তবে এটা বাংলাদেশের মানুষ ভালো করেই জানে, বর্তমান বাংলাদেশ সত্যের পক্ষে, ন্যায়ের পক্ষে। এ কারণেই বিশ্বকূটনীতিতে এদেশ সফল। স্মৃতিতে পরিষ্কার ভেসে উঠছে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি আটকাতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি এদেশে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হয়ে ফিরে গেছেন। এদেশের অনেকেই তখন প্রমাদ গুণছিলেন বোধ হয় শেখ হাসিনা আর পারবেন না। আর প্রতিক্রিয়াশীলেরা খুশিতে গদগদ হয়েছিলেন এই ভেবে যে, এবার একটা কিছু হবেই।  কিন্তু সবকিছু মিথ্যা প্রমাণিত করে বঙ্গবন্ধুকন্যা সত্যের পথে এগিয়ে চলেছেন।  
  
দেশে এখন বিরাট উত্তাপ তত্ত্বাবধায়ক  নিয়ে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে পরবর্তীকালে জাতীয় সরকার গঠনের স্বপ্নে। বাংলাদেশের মানুষের কাছে খুবই হাস্যকর এ বিষয়টি। এসব বিষয়ে এদেশের রাজনীতিবিদ, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, আমলাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে।  ‘হেফাজতে ইসলাম’ সৃষ্টির অভিজ্ঞতা যাদের আছে তাদের জানা উচিৎ রাজনীতি আর ধর্মতন্ত্র এক জিনিস নয়। ২০১৩-সালের দিকে  কী দেখেছি, পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ, সড়ক অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াও আর প্রতিরোধের মাধ্যমে দেশে সৃষ্ট আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়েছিল। নির্বাচন প্রতিহতের ডাক শুনেছি। এদেশের জনগণ আর সেই  ‘বেলতলা’ দিয়ে যেতে চায় না।

২০১৪ সালের নির্বাচন যাতে না হয় তার জন্য নানা ষড়যন্ত্র হয়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে দুপুর ১২টায় বিএনপি জামায়াত ও ঐক্যফ্রন্ট সরে গিয়েছিলো। জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন করে তারা জনগণের সাড়া পায়নি। বরং উল্টোটা হয়েছে, জনগণ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।  

জনগণকে ‘বোকা’ বানানোর চেষ্টা হচ্ছে। কীভাবে অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি করা যায় এ পথটি আবিষ্কার করতে যারা মরিয়া তাদের বিশ্ব পরিস্থিতি জানা উচিৎ। রাজনীতি করবেন, দেশ-বিদেশের খবর রাখবেন না, পার্লামেন্টে গিয়ে মিথ্যাচার করবেন, সস্তা জনপ্রিয়তা চাইবেন-  তা হবে না। আমার তো মনে হয়, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার কাছ থেকে রাজনীতি শেখা দরকার ওদের।

এখন যারা সুশাসন, গণতন্ত্র, সুবিচার নিয়ে হাহাকার করছেন, পত্রিকায় কলাম লিখছেন, টেলিভিশনের আলোচনা বা টকশোতে ঝড় তুলছেন, গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছেন, জাতিকে জ্ঞান দিচ্ছেন তারা বাংলাদেশের অতীতের বর্বরতা  সম্পর্কে একটি কথাও স্মরণ করতে চান না। তারা মুখে বলছেন বাক স্বাধীনতা নেই অথচ দিনরাত ঘৃণ্যতম ভাষায় হুঁশিয়ারি দিয়ে চলেছেন। বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ও তার চিন্তার সমমানের রাজনৈতিক নেতারা ‘গণতন্ত্র’ নিয়ে  হাঁ-হুতাশ করছেন, দিনরাত অগণতান্ত্রিক ভাষায় হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। 

 ২০০১ এর অক্টোবরের নির্বাচনের পর সারাদেশে তাণ্ডব চালানো হয়।  সেই ম্যানিপুলেটেড নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশ আসনে জয়ী হয় বিএনপি-জামায়াত। পর পরই বিএনপি-জামায়াত  জোট সরকার সারাদেশে তাণ্ডব চালায়। হিন্দুদের বাড়িঘর দখল ও লুটপাট এবং ধর্ষণ আর খুন চলে একের পর এক। কারণ, হিন্দুরা নৌকায় ভোট দেয়। নৌকায় মুক্তি খোঁজে।

লেখক: উপসম্পাদক, আমাদের অর্থনীতি, সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও কথাসাহিত্যিক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়