শিরোনাম
◈ সাতক্ষীরায় এমপি দোলনের গাড়িতে হামলা ◈ চুয়াডাঙ্গার পরিস্থিতি এখন মরুভূমির মতো, তাপমাত্রা ৪১ দশমিক  ৫ ডিগ্রি ◈ ফরিদপুরে পঞ্চপল্লীতে গণপিটুনিতে ২ ভাই নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১ ◈ মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ ভারতে লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফায় ভোট পড়েছে ৫৯.৭ শতাংশ  ◈ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী: ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রী ◈ দাম বেড়েছে আলু, ডিম, আদা ও রসুনের, কমেছে মুরগির  ◈ প্রার্থী নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে, হস্তক্ষেপ করবো না: পলক ◈ ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী

প্রকাশিত : ০৮ জুন, ২০২৩, ১২:৫৬ রাত
আপডেট : ০৮ জুন, ২০২৩, ১২:৫৬ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বিদ্যুৎ ব্যবস্থার গতিপ্রকৃতি এবং লোডশেডিং

কাজী এম মুর্শেদ

কাজী এম মুর্শেদ: জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীকে টিভির এক চ্যানেলে দেখলাম, তিনি কয়লা ও লোডশেডিং নিয়ে কথা বলছিলেন। কয়দিন আগেও হয়তো দেখেছিলেন, এক বিশিষ্ট উপদেষ্টা বলছিলেন, দশ দিনের মধ্যে সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। তিনি ব্যবসায়ী মানুষ, জনগণকে অসত্য প্রমিজ করতে দক্ষ, খুবই জোর দিয়ে বলেছিলেন। জ্বালানি উপদেষ্টা বলেছিলে, দিনে লোড শেডিং করে রাত চালানো সম্ভব। সাথে এটাও বলেছিলেন, তিন থেকে চার মাসের মধ্যে পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে। তবে উপদেষ্টারা মন্ত্রী পদমর্যাদার হলেও তারা কোনো নির্বাহী অথরিটি নন। যেজন্য প্রতিমন্ত্রীর জন্য অপেক্ষা করলাম। 

তিনি সাবলীলভাবেই বলে গেলেন লোড শেডিংয়ের কথা, কয়লা আসছে আগামী সপ্তাহ তিনের মধ্যে। এই মাসের মধ্যেই পুনরায় বিদ্যুৎ নিয়মিত থাকবে জানালেন। কিন্তু লক্ষ্য করে দেখলাম, নিজ দায়িত্বের মন্ত্রণালয় নিয়ে বলার হলেও উনার কোনো খারাপ লাগার ভাব ছিলো না, বরং খুশি একটা ভাব। ভাবলাম মনে হয় কেউ আদানি নিয়ে প্রশ্ন করেনি বা উনার নিজের লোডশেডিং হয় না ডলার সংকটে এলসি কোনো ব্যাংক খুলছে না, সে প্রশ্নও হতে পারে অথবা অমন কোনো কারণ। কিছুক্ষণ পর মেইনস্ট্রিম মিডিয়া দেখতে গিয়ে বুঝলাম, খুশির পেছনের রহস্য। 

আপনারা জানেন ৮৯ টাকার অকটেন ১৩৫ টাকা করতে ওনার হাত কাঁপে না, কারণ উনার পয়সা দিয়ে তেল কিনতে হয় না। এরপর আবার ১৩৫ থেকে বিশ্ববাজারে দাম কমেছে বলে ১৩০ টাকা করেছেন। তারপরও অনেক চড়াই-উৎরাই হলেও দাম আর কমেনি। মূল খবর যা দেখলাম, ওপেক দেশগুলো দৈনিক ১০ লাখ ব্যারেল তেল উত্তোলন বন্ধ রাখবে, একই সাথে রাশিয়ার নেতৃত্বে থাকা ওপেক প্লাস দেশগুলোও ১৪ লাখ ব্যারেল উৎপাদন কম করবে। এই ওপেক প্লাস দেশগুলো ৪০ শতাংশ তেলের যোগান দেয়। 

বাজারে কোনো পণ্যের দাম বাড়লে যেমন চাহিদা কমে, তেমনি দাম কমলে চাহিদা বাড়ে। কিন্তু তেল এমন একধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, দাম বাড়লে বা কমলেও চাহিদা প্রায় একই থাকে। আবার দাম বাড়লে চাহিদা কমে না বা দাম কমলে চাহিদা বাড়ে না, বরং যোগান কমলে দাম বেড়ে যায়, যোগান বাড়লে দাম কমে। সাধারণ পণ্য না বলেই এই ক্রুড অয়েল, এলএনজি বা জ্বালানির মতো পণ্যতে নন ইলাস্টিক বা অস্থিতিস্থাপক পন্য বলে। এই যে যোগান কমাতে যাচ্ছে যেজন্য দাম বাড়বে, প্রতিমন্ত্রীর চাপা খুশির কারণ সেটাই। সামনেই তেলের দাম বাড়তে যাচ্ছে। 

খুব কম দেশই আছে যার সরকার জনগণের সাথে ব্যবসার সম্পর্ক তৈরি করে। বাংলাদেশে করে, তীব্রমাত্রায় করে। বাংলাদেশের কয়েকটা মন্ত্রণালয় করে, সেটা মূলত জ্বালানি মন্ত্রণালয়, টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বিশ্ব বাজারে দামের অজুহাতে এবং পণ্য আসতে সময় লাগছে বলে পণ্যের দাম বাড়ানো, পণ্যের দাম কমলেও সেটা আগের কেনা বলে বলে দাম না কমানো, বিশ্ব বাজারে দাম পড়ে গেলেও তখন না শোনার বা না জানার ভান করে পন্যের দাম ধরে রাখা কেউ আমাদের জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের কাছে শিখতে পারে। টেলিযোগাযোগ শিখাতে পারে কীভাবে ব্যান্ডউইডথ অকশনে বেচে বিশাল আয় করা যায়, অথচ নিয়মবহির্ভূত ভিওআইপি ব্যবহারে কখন চোখ বন্ধ রাখে, কখন মোবাইল ফাইনান্সে কোনো ইনভেস্ট না করে মালিক হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় শেখাতে পারে কীভাবে সিন্ডিকেট তৈরি করতে হয়, সেগুলো মেইনটেইন করে ভান করতে হয় তাদের চেনে না, কখন দাম বাড়িয়ে নিজেও পণ্য কিছু এনে আরেক দফা মুনাফা করে, দিন শেষে নিজেকে ট্রাজেডি কিং হিসাবে প্রমাণ করে সব সঙ্গী-সাথীদের ভিলেন বানিয়ে একসাথে চিয়ার্স করতে হয়। 

শেখা পরে হবে, যে কারণে বললাম প্রতিমন্ত্রীর মুখে কৃতদাসের বা কৃতদারের হাসি, উনি ব্যবসা করার সুযোগ পেয়েছেন। যেজন্য এতোদিন বসে ছিলেন কেন আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ে না, ওপেক এবং ওপেক প্লাস দেশ ক্রুড অয়েলের যোগান কমিয়ে দাম বাড়াবার রাস্তা করে দিয়েছে। যখন এই সাক্ষাৎকার দেখছিলাম তখন প্রায় বারোটা বাজে, জুন মাসের ৫ তারিখ শেষ। ঠিক তখনই দিনের হিসাবে এলো দিন আবার একটা রেকর্ড গড়লো। লোড শেডিংয়ের রেকর্ড, ৩ তারিখ ছিলো ৩ হাজার ৮১ মেগাওয়াট লোডশেডিং, ৫ তারিখ ডিঙ্গিয়ে ৩ হাজার ১ শত ২৫ মেগাওয়াট। তবে রেকর্ড ভাঙা শুরু, রেকর্ড গড়ে রেকর্ড ভাঙতে। সামনে আরও ভাঙবে। লেখক: অর্থনৈতিক পর্যবেক্ষক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়