শিরোনাম
◈ আইপিএল আয়োজনের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে আরব আমিরাত ◈ ভারত আসবে না বাংলাদেশ সফরে, হবে না এশিয়া কাপও ◈ এপ্রিলে  ১০১ কোটি ৩৮ লাখ টাকার চোরাচালান পণ্যসামগ্রী জব্দ করেছে বিজিবি ◈ ঐক্যবদ্ধ শাহবাগ বিএনপির অপেক্ষায়: সারজিস আলম ◈ জনআকাঙ্খা ও রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে আওয়ামী লীগের বিষয়ে সুচিন্তিত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জনতা পার্টি বাংলাদেশের ◈ ভারত-পাকিস্তান তৃতীয় দিনের মতো সংঘর্ষে জড়ালো, যুদ্ধাবস্থা সীমান্তজুড়ে ◈ 'আপ বাংলাদেশ' নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ◈ দেশে অনলাইন জুয়া সর্বগ্রাসী হয়ে উঠেছে: অনলাইনে জুয়া বন্ধে কঠোর হচ্ছে সরকার ◈ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ (ভিডিও) ◈ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগ মোড় অবরোধের ডাক হাসনাতের (ভিডিও)

প্রকাশিত : ০৬ জুন, ২০২৩, ০২:১৯ রাত
আপডেট : ০৬ জুন, ২০২৩, ০২:১৯ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আমেরিকায় বিদেশি মেডিকেল গ্রাজুয়েট লাইসেন্সড চিকিৎসকদের প্র্যাকটিস

রুমি আহমেদ খান 

রুমি আহমেদ খান: সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ গ্রাজুয়েট চিকিৎসকদের তিনদিনব্যাপী রিইউনিয়ন হয়ে গেলো। এই রিইউনিয়ন উপলক্ষে একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে কি-নোট স্পিকার হিসেবে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইসিএফএমজি (ECFMG/Inthealth) এর ভাইস প্রেসিডেন্ট লরা ইনগ্রাহাম। উনি ওনার বক্তব্যে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ডাটা উপস্থাপন করেন বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বিদেশি ও বিশেষত বাংলাদেশি চিকিৎসকদের ব্যাপারে।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় দুই লাখ চল্লিশ হাজারের মতো বিদেশি মেডিকেল গ্রাজুয়েট লাইসেন্সড চিকিৎসক হিসেবে প্র্যাকটিস করছেন। তার মধ্যে প্রায় ১৬৯৫  জন (০.৭%) লাইসেন্সড চিকিৎসক বাংলাদেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করে এদেশে এসেছেন এবং এই ১৬৯৫  জনের মধ্যে ২৩০ জন (১৪ %) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের গ্রাজুয়েট। এই নাম্বারগুলো নিয়ে কিছুটা ডিটেইল এনালাইসিস্ হওয়া দরকার।

[১] যদিও লাইসেন্সড চিকিৎসক ১৬৯৫ ও ২৩০ জন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজসহ দেশের সব মেডিকেল কলেজের অনেক গ্রাজুয়েট এদেশে আছেন যারা পাবলিক হেলথ, রিসার্চ, একাডেমিক টিচিং, হেলথকেয়ার এডমিনিস্ট্রেশন ইত্যাদি জবে আছেন। ওদের কোনো সমন্বিত হিসেবে পাওয়ার কোনো উপায় নেই। 

[২] প্রায় দুই লক্ষ চল্লিশ হাজার বিদেশি গ্রাজুয়েটের মধ্যে প্রায় এক চতুর্থাংশ (২৪%) ভারতীয় বংশোদ্ভূত। আর তাদের ৬% পাকিস্তানের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের গ্রাজুয়েট। [৩] ব্যাপারটা এই দাঁড়ালো যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত বিদেশি মেডিকেল গ্রেজুয়েট চিকিৎসকদের মধ্যে ভারত। পাকিস্তান ও বাংলাদেশের কন্ট্রিবিউশন যথাক্রমে ২৪%, ৬ % এবং ০.৭%। [৪] অথচ বিশ্ব জনসখ্যার হিসেবে পৃথিবীর জনসখ্যার ১৭% ভারতের, ২.৮% পাকিস্তানের আর ২.২ % বাংলদেশের। আমরা যদি তিন নম্বর আইটেমের পরিসংখ্যানের সঙ্গে তুলনা করি, তাহলে দেখতে পাবো জনসখ্যার অনুপাতে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত পাকিস্তানি ও ভারতীয় চিকিৎসকরা আনুপাতিক হারে অনেক বেশি আর বাংলাদেশি চিকিৎসক আনুপাতিক হারে অনেক কম। 

[৫] ব্যাপারটা আমাদের বাংলাদেশিদের জন্য একটা বেশ লজ্জাজনক ব্যাপার। [৬] তবে পরিস্থিতির হয়তো পরিবর্তন হচ্ছে। যেখানে ২০২০ সালে মাত্র ৫৭ জন বাংলাদেশি গ্রাজুয়েট ইসিএফএমজি সার্টিফায়েড হয়েছেন, ২০২২ সালে এসে সেই নাম্বারটা এক লাফে দ্বিগুণের ও বেশি ১২৮ এ উঠে এসেছে, এটা একটা আশার কথা। [৭] আমাদের মেডিকেল গ্রাজুয়েটদের এটা জানতে হবে যে, বাংলাদশে বসে এখন ইউএসেমেলি (USMLE) সবগুলো পার্টের পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব। আর বাংলাদেশে বসে এপ্লাই করে বাংলাদেশি ছেলেমেয়েরা রেসিডেন্সির ইন্টারভিউ পাচ্ছেন। আমার জানামতে রেসিডেন্সির ইন্টারভিউর ইনভাইটেশন থাকলে, আমেরিকান এম্বেসী বিনা বাক্যব্যয়ে ভিসা দিয়ে দিচ্ছে। আর রেসিডেন্সি পেলে তো কথাই নেই, ভিসা প্রায় অবধারিত।

[৮] যে ছেলে বা মেয়েটা আমেরিকাতে তিন বছরের বেসিক রেসিডেন্সিটা করবে তার জন্য হঠাৎ করে পৃথিবীর স্বর্ণদুয়ারটা খুলে যাবে। সে যদি যুক্তরাষ্ট্রে থেকে যেতে চায়, তার চাকরি খুঁজতে হবে না, চাকরিই তাকে খুঁজে নেবে। এভারেজ প্রাথমিক ইনকাম যুক্তরাষ্ট্রে স্ট্যান্ডার্ড এই টপ ১০ পার্সেন্টাইলে, মানে এদেশে ৯০ শতাংশ মানুষের ম্যাক্সিমাম আয় তার চেয়ে কম হবে। [৯] শুধু যুক্তরাষ্ট্রই না, এই আমেরিকান রেসিডেন্সি ও বোর্ড সার্টিফিকেশনধারির জন্য সারা পৃথিবীর দরোজাই খুলে যাবে। মধ্যপ্রাচ্য বলুন ফার ইস্ট বলুন আর আফ্রিকা বলুন সবখানেই এই ট্রেইনিং ও সার্টিফিকেট সমীহের সঙ্গে গ্রহণ করা হবে। স্পেসিয়ালিস্ট না, একেবারে কনসালটেন্ট লেভেলে। [১০] আমি আমাদের তরুণ মেডিকেল স্টুডেন্ট ভাই বোনদের কাছে আবেদন করছি, আমেরিকার রেসিডেন্সি স্লটগুলো গণহারে পাকিস্তানি বা ভারতীয় চিকিৎসকদের হাতে না দিয়েই আপনারাও আপনাদের ন্যায্য হিস্যা বুঝে নিন। বাংলাদেশে বসে ইউএসএমএলইর পার্টগুলো পাস করে ফেলুন। পার্ট-১ এবং পার্ট-২তে ২৫৫ থেকে ২৬০ এর মতো স্কোর করতে পারলে আপনাদের কেউ আটকাতে পারবে না। 

এবং আমি যেহেতু আপনাদের মেধা, অধ্যাবসায় ও কঠোর পরিশ্রমের ক্ষমতার কথা জানি, আমি জানি আপনাদের মধ্যে অনেকেই হেসে খেলে ২৬০ স্কোর করতে পারবেন। আরেকটা কথা বলি ভাই। এই দেশে আমার শিক্ষার্থী জীবনের একেবারে প্রথম দিন থেকেই আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর একেবারে সেরা মেডিকেল কলেজের গ্রাজুয়েটদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে, কোলাবোরেট করে, ঝাপ্টাঝাপ্টি করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছি। ওঁরা বা ওদের সেরা এইমস/মাওলানা আজাদ/বা দাউ বা আগাখান মেডিকেল কলেজ গ্রাজুয়েটদের দেখেছি, মেপেছি এবং ওদের সঙ্গে কম্পিট করেছি। ওরা আহামরি কিছু না। আমাদের মতোই। ওরা পারলে আমরা পারবো না কেন? 

এমবিবিএস ফাইনাল প্রুফ শেষ করেই ইউএসএমএলইর প্রিপারেশনে বসে যান। সব ঠিকঠাক মতো গেলে, পরীক্ষাগুলো ভালো স্কোর নিয়ে একেবারে পাস করে গেলে ৪ বছরের মাথায় এটেন্ডিং লেভেলে বা এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর লেভেলের জব। বাংলাদেশে থাকলে এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর লেভেলে পৌঁছতে আপনার ১৫ বছর লেগে যাবে। আর স্টার্টিং এনুয়াল ইনকাম মিনিমাম দুই লাখ ইউ এস ডলার, এই পর্যায়ে পৌঁছতে আপনার কতদিন লাগবে বাংলাদেশে? 

লেখক: মেডিসিন পালমোনারি ক্রিটিকাল কেয়ার বিভাগের অধ্যাপক। ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস অস্টিন এবং বিভিন্ন একাডেমিক মেডিকেল সেন্টারে পালমোনারি ক্রিটিকাল কেয়ার স্পেশিয়ালাজেশন ট্রেইনিং পরিচালক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়